‌নিরীহ ঋদ্ধির অসামান্য চারিত্রিক দৃঢ়তা

ভদ্র। লাজুক। চুপচাপ থাকতেই ভালবাসেন। প্রশ্ন করলে জবাব দেন মেপে। উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া, উল্লাসে ফেটে পড়া তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। বাড়তি কথা তাঁর নাপসন্দ। ঋদ্ধিমান সাহাকে এভাবেই বছরের পর বছর দেখে এসেছি আমরা। কী আশ্চর্য, সেই ঋদ্ধিরই ‘‌বিস্ফোরণে’‌ কেঁপেছে ভারতীয় ক্রিকেট!‌ নরম মাটিতে খামচাতে ভালই লাগে। তাই না?‌ এক সাংবাদিকের যাবতীয় সীমা লঙ্ঘনে ব্যাপক চটেছেন বঙ্গ–কিপার। আমার স্থির বিশ্বাস, তথাকথিত কোনও ওজনদার ক্রিকেটারের সঙ্গে এমন আচরণ করার সাহস বা স্পর্ধা, কোনওটাই দেখাতে পারতেন না ওই জনৈক সাংবাদিক। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন ঋদ্ধি। আর ওই সাংবাদিক ঋদ্ধির সাক্ষাৎকার চেয়েছেন এই বলে,যে উইকেটকিপারকে নেওয়া হয়েছে, তিনিই সেরা!‌ ওই সাংবাদিক এটাও বললেন, ঋদ্ধি যে এগারোজন সাংবাদিককে বেছে নিতে চেষ্টা করছেন, তাঁরা সেরা নন। বুঝিয়ে দিলেন সেরা তিনি!‌ মাত্রাছাড়া স্পর্ধা। পরপর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার উত্তর পাননি। আসলে উত্তর দেননি বিরক্ত ঋদ্ধি। এবার এল ফোন। ধরেননি। তাতে নাকি ‘‌অপমানিত’‌ বোধ করেছেন ওই সাংবাদিক। এবার এল হুমকি। এই অপমান তিনি মনে রাখবেন, আর কোনওদিন সাক্ষাৎকার নেবেন না ঋদ্ধির। অপমানিত কে হলেন?‌ সেই সাংবাদিক?‌ নাকি এখনও এই ভারতের সেরা উইকেটকিপার, দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট খেলা ঋদ্ধিমান?‌

ছবি : গুগল

নজিরবিহীন। গোটা ঘটনা সর্বসমক্ষে নিয়ে এলেন ক্ষুব্ধ পাপালি। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় ক্রিকেট মহলে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তীব্র। দাবি উঠেছে ওই সাংবাদিকের নাম প্রকাশ্যে আনুন ঋদ্ধি। কিন্তু লেখার শুরুতেই ব্যবহার করেছি ‘‌ভদ্র’‌ শব্দটা। ঋদ্ধির সঙ্গে যা সমার্থক। বলেছেন, কারও কেরিয়ার নষ্ট করতে চান না। কিন্তু স্টেপ আউটে ছয় মারার ভঙ্গিতে জানিয়ে দিয়েছেন, আবার এই বেয়াদপি দেখলে চুপ করে বসে থাকবেন না। ঘটনা পরম্পরা প্রায় সবারই জানা। কিন্তু যে অজানা দিকটা প্রকাশ্যে এল, তা হল ঋদ্ধির চারিত্রিক দৃঢ়তা। আপাত নিরীহ হলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফোঁস করে ওঠার সুতীব্র মানসিকতা।

সাংবাদিক–বিতর্কের আগে তাঁর কথায় এসেছে রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি প্রসঙ্গ। কেউ কেউ বলছেন, এসব প্রকাশ্যে নাও আনতে পারতেন। কিন্তু প্রকাশ্যে এনেছেন দলের বাইরে যাওয়ার পর। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য টিম ম্যানেজমেন্টের নজরে নেই ঋদ্ধি, এমন তথ্য দল ঘোষণার আগেই প্রকাশ্যে এল কীভাবে, কীভাবে পৌঁছল সংবাদমাধ্যমের কাছে, তার তদন্ত করবে না বিসিসিআই?‌ এমন ঘটনায় বোর্ডের ভাবমূর্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এখন ঋদ্ধির করণীয় কী?‌ নিশ্চয়ই আমরা ঠিক করে দেব না। তিনি নিজেই খোলসা করেছেন। মনে করছেন তাঁর মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি আছে। সেটাই আমরা দেখতে চাই। ধরেই নিলাম ভারতীয় দলের দরজা তাঁর জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে কী!‌ ক্রিকেটের দরজা তো বন্ধ হয়নি। সব ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন আইপিএলে ঋদ্ধিই হয়ত হবেন নতুন আমেদাবাদ ফ্র‌্যাঞ্চাইজির প্রথম পছন্দের কিপার। ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার অনেক সুযোগ পাবেন। আমাদের চোখ থাকবে সেদিকেই। ওঁকে আমরা যতটুকু চিনি, জানি, তাতে দুম করে ফোকাস নষ্ট করার বান্দা নন ঋদ্ধি। তাঁর ক্রিকেট আবেগ অনন্য। বিদেশ সফর শেষ করে শহরে ফিরে পরের দিনই ছোটেন ময়দানের ক্লাবে। অনামী, অখ্যাতদের মধ্যে মিশে যান অনায়াসে। সৌজন্যে সেই ক্রিকেট–প্রেম। সেই ভালবাসা থেকেই আগামী দিনে আমরা পাব নতুন ঋদ্ধিকে, এমন প্রত্যাশায় অসুবিধে কোথায়?

‌  ‌