বিদ্রোহের আগুন বদলেছে বাঁধভাঙা উল্লাসে!
চরম অস্থিরতার আবহে একটু হলেও পড়েছে স্বস্তির প্রলেপ!
রাগ, ক্ষোভ, অসন্তোষ ভুলে ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে এখন খুশির জোয়ার। রবিবার রাতে কলম্বোর রাজপথ মুখরিত হয়েছে স্লোগানে, নাচে–গানে। এই কিছুদিন আগেও এই রাজপথ ছিল বিদ্রোহীদের দখলে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা বারবার এসেছে সংবাদ শিরোনামে। দেশজুড়ে খাবারের আকাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। পেট্রোপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম। পাওয়া যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। ওষুধও। ক্ষুব্ধ মানুষের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন সেদেশের রাষ্ট্রপতি।
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি, তুমুল অরাজকতা। তখন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ক্রিকেটার রোশন মহানামা, সনথ জয়সূর্যরা। আবার সেই ক্রিকেটই দেশের গুমোট আবহাওয়ায় এনে দিল বেঁচে থাকার টাটকা বাতাস। মঙ্গলবার সকালেও কলম্বোর রাজপথে জনজোয়ার বরণ করে নিয়েছে সদ্য এশিয়া কাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা দলকে। হুডখোলা বাসে চেপে সাধারণ মানুষের সেই উচ্ছ্বাসের, আন্তরিকতার ওম নিয়েছেন দাসুন শনকা, ভানুকা রাজাপক্ষে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গারা। শ্রীলঙ্কার আমজনতা বুঝিয়ে দিচ্ছেন ১৯৯৬–এর বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ থেকে এবারের এশিয়া কাপ জয়ের আনন্দ কোনও অংশে কম নয়।
দেশের অস্থির পরিস্থিতির জন্যই এবার এশিয়া কাপ সরে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা থেকে। মরুদেশে গিয়ে তাক লাগানো ক্রিকেট খেলেছেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। প্রথমে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি শ্রীলঙ্কাকে। সবাই ব্যস্ত ভারত, পাকিস্তান নিয়ে। তার ওপর নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হার। প্রচারের সার্চলাইট থেকে দূরে থেকেও শেষপর্যন্ত অদম্য মনোবলে এশিয়া সেরার তকমা ছিনিয়ে নিয়েছেন শনকারা। শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের কথায়, ‘নিজেদের ওপর বিশ্বাস ছিল। প্রথম ম্যাচে হারের পর টিম মিটিংয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সবাইকে বলেছিলাম আমাদের প্রতিভা আছে, কিন্তু মাঠে নেমে প্রয়োগ করতে পারিনি। বাকি ম্যাচে সেটাই করতে হবে। এই মন্ত্রেই সাফল্য এসেছে। এটা শুধু ট্রফি নয়, তার থেকে অনেক বেশি। এই জয় দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না।’ ফাইনালের নায়ক ভানুকা বলছেন, ‘সবাই তো ভারত, পাকিস্তান নিয়েই মেতে ছিল। তাতে আমাদের সুবিধেই হয়েছে। নিজেদের উদ্দীপ্ত করতে পেরেছি।’
শ্রীলঙ্কা অবশ্যই উদ্দীপ্ত এশিয়া কাপ জিতে। আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সুযোগ নেই সরাসরি মূলপর্বে খেলার। উঠে আসতে হবে যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকে। কিন্তু এশিয়া সেরা হওয়ার সাফল্য শনকাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে অনেকটাই। শ্রীলঙ্কার মনোবল বাড়িয়েছে ভারতকে হারানো, পাকিস্তানকে দু’বার হারানোর ঘটনাও। আরও কয়েকটা দিক আছে। দলে কোনও ‘তারকা’ নেই, ফলে প্রত্যাশার চাপও ছিল না। তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে কিছু করে দেখানোর জেদ ছিল প্রবল। ‘আন্ডারডগ’ থাকায় প্রথম ম্যাচ হেরেও ঘুরে দাঁড়াতে, ফোকাস ঠিক রাখতে সুবিধে হয়েছে। ফলে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠলে এই শ্রীলঙ্কা বেগ দিতে পারে বাকিদের।
আপাতত ভাল লাগছে আমাদের প্রতিবেশী দেশের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের মুখে শিশুর হাসি দেখে। সৌজন্যে ক্রিকেট। শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার অরবিন্দ ডি’সিলভার কথায়, ‘ভেতরের জমে থাকা যন্ত্রণা থেকে সাফল্যের খিদেকে টেনে বের করে আনতে পারে ক্রিকেটই।’