আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যে কয়েকটি নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম মহম্মদ শামি। অনেকেরই প্রশ্ন তিনি দলে নেই কেন? স্ট্যান্ড-বাই হিসেবে থাকা শামিকে নিলে দল অনেক ব্যালান্সড হতো বলে একটা মহলের বিশ্বাস। বিষয়টা ঠিক না বেঠিক সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে একটু অন্যভাবে যদি ভাবা যায় তবে খুব অবাক-করা তথ্য উঠে আসবে।
২০১৪ সালে টি২০ ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া শামি এখনও অবধি সাকুল্যে ১৭টা টি২০ ম্যাচে দেশের হয়ে অংশ নিয়েছেন অন্যদিকে শুধু এই ২০২২ সালেই ভারতীয় দল এখনও অবধি প্রায় ৩০টা টি২০ ম্যাচে অংশ নিয়েছে। অর্থাৎ একটা জিনিস একদম পরিষ্কার যে কেরিয়ারের প্রথম দিক থেকেই এই ফরম্যাটের জন্য শামিকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেননি নির্বাচকরা। এর উপর গত বিশ্বকাপে শামি শেষবার দেশের হয়ে টি২০-তে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তারপর মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত মারফত তাঁকে বাকি দুটো ফরম্যাটে মনঃসংযোগ করার জন্য বলা হয়। এই অবস্থায় বিশ্বকাপ দলের স্ট্যান্ড-বাই হিসেবে নির্বাচিত হলেন শামি অর্থাৎ বিশ্বকাপ শুরুর আগে বা চলাকালীন কোন ফাস্ট বোলার অসুস্থ হলে বা চোট পেলে, সেই জায়গায় শামি মূল দলে আসতে পারেন এবং ম্যাচও খেলতে পারেন। আর ঠিক এখান থেকেই উঠে আসছে কয়েকটি প্রশ্ন।
প্রথমত, বছরের শুরু থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে প্রচুর টি২০ ম্যাচ খেলেছে ভারত। সেখানে ফাস্ট বোলার হিসেবে বুমরা, ভুবি, আবেশ খান, সিরাজ, হর্ষল প্যাটেল, দীপক চাহার, উমরান মালিক, অর্শদীপ সিং, শার্দুল ঠাকুর-কে খেলানোর পর স্ট্যান্ড-বাই হিসেবে এমন একজনকে নিতে হলো, যাকে এই ফরম্যাটে কোনদিন নির্ভরযোগ্য মনে করাই হয়নি এবং প্রায় একবছর আগে এই ফরম্যাটের চিন্তা ভাবনার বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও একটা জিনিস প্রমাণিত হয় গেল, এই যে বিগত ন’মাস ধরে বিভিন্ন পারম্যুটেশন-কম্বিনেশন করে এতজন ফাস্ট বোলারকে খেলানো হলো তাদের মধ্যে থেকে বুমরা, ভুবি সহ যোগ্য ছয়জন বেছে নেওয়া গেল না! তার জন্য পিছনে ফিরে তাকাতে হলো! তাহলে এই যে শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চের কথা বড়াই করে বলা হয় সেটা কি ভার্চুয়াল?
প্রায় ঠিক এভাবেই গতবার প্রায় আস্তাকুঁড়ে-ফেলে-দেওয়া অশ্বিনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল এবং তারপর দল প্রায় ছিটকে যাওয়ার পরে তাঁকে খেলানো হয়। এবারেও তাঁকে দলে রাখা হয়েছে, কিন্তু এইবছর খেলা প্রায় ৩০টা ম্যাচের মধ্যে তাঁকে পাঁচটায় সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বড় টুর্নামেন্ট এলেই যদি বারবার এঁদের কথা মনে পড়ে তাহলে কি নতুনদের বঞ্চিত না করেই এঁদের আর একটু ম্যাচ প্র্যাকটিস দেওয়া যায় না? আসন্ন দুটো সিরিজে এই দুজনকে খেলানো বিশেষ প্রয়োজন।
আর একটা বিষয় বোর্ড তথা নির্বাচকরা এখনও পরিস্কার করলেন না। আবেশ খান-কে সারা বছর ধরে ১৫টা ম্যাচ খেলানো হলো, তারপর হঠাৎ এশিয়া কাপের শেষ দুটো ম্যাচ খেলানো হলো না অসুস্থতার কারণে (অধিনায়ক প্রেস কনফারেন্সে তেমনই দাবি করেন) এবং তারপর বিশ্বকাপের দলেও নেওয়া হলো না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আবেশ খান বাদ কিসের জন্য? তিনি কি চোট পেয়েছেন? পেয়ে থাকলে কী ধরনের? আর তা যদি না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি অযোগ্য বিশ্বকাপ দলের জন্য, যে কারণে তিনি দলে নেই। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে এটা বুঝতে ১৫টা ম্যাচ লাগলো টিম ম্যানেজমেন্ট বা দল নির্বাচন কমিটির? শামি যদি কোনভাবেই নির্বাচকদের ভাবনায় থেকে থাকতেন, তাহলে তাঁকে তো এই ১৫টা ম্যাচের মধ্যে নিদেনপক্ষে পাঁচটা ম্যাচ খেলিয়ে ম্যাচ প্র্যাকটিসের মধ্যে রাখা যেত। কারণ বিশ্বকাপ শেষ হতে এখনও দু’মাসের উপর বাকি, এই সময়ে কোন ফাস্ট বোলার যে চোট পাবেন না বা শামিকে যে মাঠে নামতে হবে না – এই গ্যারান্টি অতি বড় ভারতীয় সমর্থকও দিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে বিষয়টা হবে এরকম, দশ মাসে প্রায় ৩০টা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে আসা এক দলের একজন বোলার প্রায় একবছর পর (নির্দিষ্ট ফরম্যাটে) বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে দেশের হয়ে মাঠে নামবেন! বিশ্বকাপ জেতা কি সত্যিই এতটাই সহজ?