‘স্বাগত রজত। আন্তরিক শুভেচ্ছা, গো স্ম্যাশ ইট।’
বার্তা পেয়ে চমকে উঠেছিলেন বছর আঠাশের রজত পাতিদার। কে পাঠাল, কেন পাঠাল, জানা নেই। নম্বরটা অচেনা। খোঁজ নিতে কেটে গেল খানিকক্ষণ। জেনে অবাক হওয়ার মাত্রা বাড়ল। খোদ বিরাট কোহলির বার্তা! আইপিএল নীলামে ‘আনক্যাপড’ হিসাবে কুড়ি লক্ষ টাকা দিয়ে তাঁকে কিনেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। অজানা-অচেনা এক তরুণকে দেশের সদ্য-প্রাক্তন অধিনায়ক ‘সুযোগ এসেছে, যাও ফাটিয়ে খ্যালো’ লিখে পাঠাচ্ছেন, হজম করতে একটু নয়, অনেকটাই অসুবিধা হওয়ার কথা!
মধ্যপ্রদেশের এই তরুণ সেই বার্তার মর্যাদা দিলেন ইডেন গার্ডেনস-এ, প্রথম এলিমিনেটর-এ। কোহলির আইপিএল জয়ের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রেখে। এখনও ফাইনাল এক ধাপ দূরে। কিন্তু সরাসরি সেমি-ফাইনাল খেলার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে। সুযোগটা এনে দিলেন ইন্দোরের সেই তরুণ।
৪ রানে অধিনায়ক ফ্যাফ দুপ্লেসির উইকেট পড়েছিল, প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে। তখন নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ১১২ রানে। মাত্র ৫৪ বলের ইনিংস সাজানো ১২ বাউন্ডারি ও সাত ওভার বাউন্ডারিতে। যে-ম্যাচে হারলেই প্রতিযোগিতা থেকে বিদায়, ঝলসে উঠেছিল ডান-হাতির ব্যাট। এল ইডেনে আইপিএল-এ ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস, দুটি ক্যাচ দিয়ে যদিও। কিন্তু দীপক হুডা (৭২ রানে) এবং মনন ভোরা (৯৩ রানে) যদি ক্যাচ ফেলে থাকেন, রজতের কী!
মানসিকতাও দেখুন। ৯৩ রানে ক্যাচ পড়ল যখন, দুটো রান নিয়ে ৯৫। এবং পরের বলটাই ছয়! মহসিন খান, লখনউ-এর একমাত্র বোলার যিনি সমীহ জাগিয়েছিলেন, তাঁর বাউন্সার ওড়ালেন মিড উইকেট বাউন্ডারিতে, আইপিএল-এ প্রথম শতরান পেতে, ৪৯ বলে। ভবিষ্যৎ তারকাদের চিনে নেওয়ার লক্ষণই যে এমন মোক্ষম মুহূর্তগুলো!
১৬, ৫২, ২১, ৪৮, ২৬ নিয়ে এসেছিলেন ইডেনে, ১১২ অপরাজিত করে নাম লিখিয়ে ফেললেন আইপিএল-এ ইডেনে পঞ্চম ব্যাটার হিসাবে শতরান পেয়ে। এই ইডেনে টেস্টে শেষ শতরান বিরাটের, আইপিএল-এও শেষবার এই মাঠেই শতরান পেয়েছিলেন সেই ২০১৯ সালে। তিন বছর পর ফিরছেন, বিরাট-প্রেমে মাতোয়ারা কলকাতার যুবসমাজ তারকাকে দেখার সুযোগ হারাতে রাজি ছিল না। কিন্তু দিনের নায়ক তিনি থাকতে পারলেন না। যাঁর উদ্দেশে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন সেই রজতই নায়ক এবার।
ইডেনে আইপিএল-এ প্রথম শতরান মাহেলা জয়বর্ধনের। ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল, কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে মুম্বই ইন্ডিয়ানস-এর হয়ে, অপরাজিত ১১০, মাত্র ৫৯ বলে। এত দিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল মাহেলার সেই ১১০, যা পেরলেন রজত বুধবার। মাহেলার পর আরও তিনটি শতরান আইপিএল-এ দেখেছিল ইডেন। ২০১১ সালে ক্রিস গেইল (অপরাজিত ১০২, আরসিবি), ২০১২-য় রোহিত শর্মা (অপরাজিত ১০৯, মুম্বই) এবং ২০১৯ সালে বিরাট কোহলি (১০০, আরসিবি)। সবগুলিই স্থানীয় কেকেআর-এর বিরুদ্ধে। রজতের শতরান ঘরের মাঠে কেকেআর-এর প্রবল সমর্থনের বিরুদ্ধে নয়। উল্টে বিরাটের কারণে ইডেনের দর্শকের সরব সমর্থনই জুটল। বিরাট আউট হওয়ার পর তো রজতেই বিরাট-ছায়া।
আইপিএল-এর কথ্য ভাষ্য, কেকেআর যাঁকে ছেড়ে দেয় তাঁকে দুহাত ভরে দেয় ভাগ্য। ব্যতিক্রম নয় ২৫ মে-র ইডেনও। পাতিদারকে মুম্বইতে ট্রায়ালে ডেকেছিল কেকেআর। তখন পাতিদার সবে দেওধর ট্রফিতে অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিং করে চোখে পড়েছিলেন। বেঙ্কটেশ আয়ারকে সই করায় কেকেআর সেই শিবির থেকে, পাতিদারকে বাদ দিয়ে। বেঙ্গালুরু তক্কে তক্কে ছিল তখন থেকেই। সুযোগ পেয়েই তুলে নেওয়া এবং পাতিদারের বাজিমাত। প্রসঙ্গত, ‘আনক্যাপড’ হিসাবে সুযোগ পেয়ে আইপিএল-এ শতরানের তালিকাতেও পাতিদার পঞ্চম। প্রথম চার, যথাক্রমে, শন মার্শ, মণীশ পাণ্ডে, পল ভালথাটি এবং দেবদত্ত পাড়িক্কল।
কেকেআর ছেড়ে দিলে কীভাবে ফর্ম ফিরে আসে তার আরও বড় প্রমাণ দিয়ে গেলেন প্রাক্তন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকও। মাঠে নামার সময় ষাট হাজারের গ্যালারি চিৎকার করে গেল ‘ডিকে-ডিকে’। শুরুর দুটো বলের অস্বস্তি কাটিয়ে কার্তিকের ব্যাটেও ২৩ বলে অপরাজিত ৩৭। পাতিদারের সঙ্গে জুটিতে ৯২ রান, ৪৮ বলে, যার মধ্যে পাতিদারের অবদান ৪৯।
আইপিএল এবার ইডেন শেষে পাড়ি জমাচ্ছে আমদাবাদ। একটি সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল খেলতে। তিন বছর পর ইডেনে দুদিনের আইপিএল-এ নজর কেড়ে নিয়ে মোতেরার পথে এবার ডেভিড মিলার, রজত পাতিদাররা।