বিগত বছরের রনজি ট্রফি নিশ্চয়ই বাংলার রনজি ট্রফি অভিযানের নিয়মিত খবর রাখা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আছে। ওড়িশার বিরুদ্ধে দ্রুত পাঁচটি উইকেট চলে যাওয়া বা কর্ণাটকের বিরুদ্ধে প্রথম সেশনেই ৬৭-৬ হয়ে যাওয়ার পরে যে হাহাকার তৈরী হয়েছিল, তাকে একার হাতে থামিয়ে দিয়েছিলেন চন্দননগরের এক বাঙালি। হাত বলা হয়তো অতি সরলীকরণ, বলা ভালো একটি ক্রিকেট ব্যাট, বরফশীতল মস্তিস্ক এবং প্রায় পনেরো বছরের অভিজ্ঞতাই হয়েছিল সেদিনের ইনিংসগুলোর চালিকাশক্তি।
এরপরে একবার হতে হয়েছে বাংলার অধিনায়ক, যদিও খুব ভালো সফলতা পাননি সেইবার তবুও প্রথম অধিনায়ক হওয়া সবসময়ই স্পেশাল। এরপরে কাঞ্চনজঙ্ঘা ওয়ারিয়র্স অধিনায়ক হন, এই মরশুমে দায়িত্ব পান মোহনবাগান দলেরও।
সেই সব নিয়ে আজ ফোনে প্রায় আট মিনিট কথা বললেন অনুষ্টুপ মজুমদার।
প্রশ্ন:- পরশুদিন তোমরা বেঙ্গালুরু যাচ্ছ। নক-আউট নিয়ে কতটা আশাবাদী?
অনুষ্টুপ:- এক্সপেকটেশন বলবো না, আমি বিশ্বাসী যে শেষ বার ফাইনাল খেলেছিলাম এবং এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরব। যেরকমভাবে আমাদের টিম লিগ স্তরে খেলেছে, সেভাবে খুব বাজে জায়গা থেকে আমরা ম্যাচ জিতেছি, তা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। আর এটাই টিমের গুণ। আমরা যে বছর ফাইনাল খেলি, সেই বছর দুটো ম্যাচ আমরা পেছন থেকে এসে জিতেছি। আমাদের মোমেন্টাম খুব ভাল ছিল, আশা করি সেটাই থাকবে।
প্রশ্ন:- আচ্ছা। আগের বছরের ফাইনালের শেষদিন, তোমার উইকেটটাই কি টার্নিং পয়েন্ট হয়েছিল বলে মনে হয়?
অনুষ্টুপ:- হ্যাঁ একদমই। ওইসময় আমি আউট না হলে, ম্যাচটা অন্যরকম হতো বলেই মনে করি। উইকেট যেরকম ছিল, তাতে টেল-এন্ডার ব্যাটারদের পক্ষে একটু কঠিন ছিল। তাই আমার আর অর্ণবের উইকেট গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আমরা করতে পারিনি। আশা রাখি, এই বছর পারব।
প্রশ্ন:- পিছিয়ে থেকে ফিরে আসার কথা বললে সেইখানে ওড়িশার সাথে কোয়ার্টার-ফাইনাল আর কর্ণাটকের সাথে সেমি-ফাইনালে তোমার মাইন্ডসেট কেমন ছিল? কোনো বাড়তি মোটিভেশন না স্বাভাবিক খেলা?
অনুষ্টুপ:- না না। খুব স্বাভাবিক। এরকম বাড়তি মোটিভেশন ছিলোনা, এতদিন খেলছি তার একটা অভিজ্ঞতা আছে এবং এরকম মোটিভেশন এখন আর কাজ করেনা। যখন ইয়ংস্টার ছিলাম, অন্য মানসিকতা কাজ করতো, তবে এখন আর কিছু মনে হয়না। আমি ভাবিই যে ওরকম অবস্থায় আমার ব্যাটিং আসবে এবং ওইরকম অবস্থায় কিভাবে ব্যাট করবো তার জন্য প্রস্তুতিও নিই। সেক্ষেত্রে আলাদা কিছু ভাবিনি, নিজের স্বাভাবিক খেলাই খেলেছি, তাই হয়তো পারফরমেন্স এসেছে।
প্রশ্ন:- দিল্লির বিরুদ্ধে গত মরশুমে ৯৯ এবং চন্ডিগড়ের বিরুদ্ধে এই মরশুমে ৯৫। কেমন ছিল অনুভূতি? নার্ভাস নাইনটিজ কি?
অনুষ্টুপ:- এটা ব্যাটারের জন্য খুবই দুর্বিষহ অনুভূতি। একশো হলে একটা মানসিক চাপমুক্তি হয়। দুটো ম্যাচেই নিজের দোষে আউট হয়েছি, হয়তো নার্ভাস নাইনটিজ কাজ করেছে। যে দুটো ম্যাচে একশো করেছিলাম ওইখানে অতটা কাজ করেনি।
প্রশ্ন:- তোমাকে লিমিটেড ওভার ক্রিকেটের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। এটার কতটা চাপ ছিল তোমার কাছে?
অনুষ্টুপ:- অবশ্যই একটা আলাদা দায়িত্ব থাকে। কোন প্লেয়ারকে কিভাবে, কখন খেলাবো? কোন উইকেটে কোন প্লেয়ার খেলবে? এই জিনিসগুলো একটা বড়ো দায়িত্ব। মাঠের মধ্যে কখন কাকে কিভাবে খেলাবো? ফিল্ড-সেটিং কিরকম হবে? সব নিয়ে ক্যাপ্টেন্সি উপভোগ করেছি, হয়তো খুব ভালো করতে পারিনি। তবুও বলবো, উপভোগ করেছি।
প্রশ্ন:- ফিরে আসি মোহনবাগানের কথায়। তপন মেমোরিয়ালের সঙ্গে খুব বাজেভাবে হারে। এর কারণ কী?
অনুষ্টুপ:- অনেকগুলোই কারণ আছে। প্রাথমিকভাবে, আমাদের প্রধান টিটোয়েন্টি খেলোয়াড়রা যেমন বিবেক সিং, তুহিন (তুহিন ব্যানার্জী) খেলতে পারেনি কারণ ওরা অফিসের খেলা খেলতে যায়। তারপরে রাজকুমার পালের হাত ভেঙ্গে যায়, তাও ও খেলেছে। আমি অজুহাত দিচ্ছিনা, কিন্তু তাও বলবো কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে গিয়েছে। আমরা খারাপ খেলেছি, এটা মানতেই হবে। ওরা ২০০ করছে, আমরা একদমই ভালো খেলিনি, কাছেও যেতে পারিনি। আমাদের কিছু কমতি ছিলো। যা হয়ে গিয়েছে আর তো ফিরে আসবেনা। পরের বছর আরো ভালো করে খেলতে হবে।
প্রশ্ন:- ক্লাব ম্যাচে কোনো ক্রিকেটার পারফরমেন্স করছে না, এইটা তার রনজি ট্রফিতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে?
অনুষ্টুপ:- প্রভাব তো আছেই। কারণ ম্যাচে ভাল পারফর্ম করছে না, সেই প্রভাব পরের ম্যাচে থাকবেই। রান থাকলে একটা আত্মবিশ্বাস থাকে, রান না পেলে সেটা থাকে না। যদিও লাল-বলের খেলা আর সাদা-বলের খেলা আলাদা, তবুও প্রভাব ফেলে। আমরা অবশ্য গিয়ে দুটো প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলব, ফলে যথেষ্ট প্র্যাক্টিসের সুযোগ পাব বলে আশা করছি।