ক্রিকেটে একটা পুরনো কথা আছে – ম্যাচ জিততে হলে, এমনকি বিপক্ষের রান তোলা আটকাতে গেলেও, সেরা পন্থা হচ্ছে উইকেট নেওয়া, অর্থাৎ বোলিংশক্তি হওয়া চাই ভাল ও বৈচিত্র্যময়। তাই বিগত তিন আই.পি.এল-এর নিরিখে কয়েক ধরণের কিছু বোলারকে নিয়ে খুব সংক্ষেপে কিছু কথা বলবার জন্যই এই লেখা।
আলোচিত এই বোলারদের মধ্যে কে এবারের প্রতিযোগিতায় কোন দলে গেছেন বা অংশগ্রহণ করছেন না বা কোনও দলই পাননি, তার মধ্যে যাচ্ছিনা। কারণ সেটা সবাই জেনে গেছেন বা জেনে নিতে পারেন।
আরেকটা জরুরি কথা খেয়াল রাখবেন – এই বোলাররা এবারের প্রতিযোগিতায় কেমন করবেন তা নির্ভর করবে (অন্যান্য কারণের সঙ্গে) তাঁদের দল-পরিচালন সমিতি তাঁদের কেমনভাবে ব্যবহার করবেন এবং তাঁদের সহ-বোলাররা কারা ও কেমন করেন।
এবার এগোনো যাক – কেমন?
মধ্যম পর্বে ছিল বাঁ-হাতি সিমার ও অফ-স্পিনারদের কথা।
এবার আসি লেগ-স্পিনারদের কথায়, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন গুণগত মানে বেশ ভাল।
- রশিদ খান সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
- চাহল আছেন খুবই কাছাকাছি। ভারতীয়দের মধ্যে বেশ খানিকটা এগিয়ে।
- বরুণকে হয়ত ঠিক ‘লেগ-স্পিনার’ বলা যায়না, তবে তিনি বেশ আগ্রহের সঞ্চার করেছেন।
- বিষ্ণোই আছেন এর খুবই কাছে, তবে বয়স কম আর এখনও পুরোপুরি পরীক্ষিত হননি।
- রাহুল চাহার ওভারপ্রতি সাড়ে-সাতের কাছাকাছি রান দিয়েছেন আর ২৬ গড় নিয়ে রয়েছেন।
- হাসারাঙ্গা আছেন অনেক আশা জাগিয়ে যদিও গত মরসুমে মার খেয়েছেন বেশ।
- বেশ খানিক নিচে আছেন তেওয়াটিয়া, যাঁর ভাল সময় এবার হতেও পারে গত মরসুমের ৪২ গড়ে নয় উইকেটের তুলনায়।
- শ্রেয়স গোপাল ২০২০ মরসুমে বেশ কিছু উইকেট নিয়েছিলেন কিন্তু গত মরসুমে কমই খেলেছেন ও কমই উইকেট নিয়েছেন।
- মুরুগন অশ্বিন সাধারণত রান কম দিয়ে থাকেন, তবে ব্যাটিংয়ের হাত নেই বলে দলে নিয়মিত জায়গা পাওয়া মুশকিল।
- অমিত মিশ্র অনেক অভিজ্ঞ্, কিন্তু ব্যাটিংয়ে দুর্বল ও বয়স বেশি হওয়ায় হয়ত সহকারী বোলার হিসেবেই থাকতে পারেন।
- ইমরান তাহিরের অবস্থাও অনেকটা একই রকম, ওঁর ক্রিকেট-জীবনই বোধহয় শেষের মুখে।
- জাম্পা মনে হয় একটু পিছিয়েই পড়েছেন। হয়ত সহকারী বোলার হিসেবে থাকলেও থাকতে পারেন।
এরপর চলে আসি বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনারদের কথায়।
- জাদেজা অবশ্য গুরুত্বপূর্ণই রয়েছেন।
- অক্ষর টি২০ ক্রিকেটে বেশ উপযোগী, কিন্তু আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কিছুটা পিছিয়ে।
- ক্রণাল পান্ড্য গত মরসুম থেকে বিশেষ সুবিধের ফর্মে নেই, যদিও PP-তে বল হাতে রান আটকাতে এখনও হয়ত কার্যকরী হতে পারেন।
- হরপ্রীত ব্রার গত মরসুমে মন্দ করেননি, কিন্তু মাত্র গোটা সাতেক ম্যাচে খেলেন।
- শাহবাজ আহমেদ গত মরসুমে বেশ ভাল করেছেন, ওভারপ্রতি সাড়ে-ছয় রান দিয়েছেন, উইকেট নিয়েছেন ১৩টা যদিও তাঁর প্রায় অর্ধেক ম্যাচে তিনি বোলিংই করেননি।
- শাকিব হয়ত বয়সজনিত কারণে বেশির ভাগ ম্যাচই খেলার সুযোগ পাবেননা।
- স্যান্টনারও বেশি বোলিং করেননি, তবে তাঁর ব্যাটিংয়ের উপযোগিতা তাঁকে হয়ত কিছু বেশি সুযোগ করে দিতে পারে।
- অভিষেক শর্মা গড়পরতা ম্যাচে দুয়েক ওভারের বেশি বল করেননা, আর সুবিধেজনক পরিস্থিতি ছাড়া তাঁর বোলিং বিশেষ কার্যকরীও নয়।
- শাহবাজ নাদিমের ভাল দিন চলে গেছে আর এখন বোধহয় তিনি অতিরিক্ত হিসেবেই ঠাঁই পাবেন।
সবশেষে আসি বাঁ-হাতি লেগ-স্পিনারদের কথায়। প্রত্যাশিত ভাবেই এখানে খুবই কম নাম।
- শামসি গত মরসুমে মাত্র চার ওভার বল করেছেন এবং মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। একমাত্র যদি এই ধরণের বোলারই কোন দল চায়, তবেই তাঁর প্রয়োজন পড়তে পারে।
- কুলদীপ তাঁর শেষ ১৪-১৫-টা ম্যাচে পাঁচটা উইকেট নিয়েছেন – কেবল ২০১৮ মরসুমেই নিয়েছিলেন ১৭টা – তাঁর কিছু সমস্যা সম্ভবত টেকনিক্যাল, আবার কিছুটা মনোভাবগত। দেখা যাক তিনি কেমন করেন।
শেষ করা যাক – আসল ব্যাপারগুলো তো প্রতিযোগিতা চলাকালেই দেখা ও বোঝা যাবে।
[পুনশ্চ: তথ্যগুলোর বেশ কিছু অংশ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট-সাংবাদিক জ্যারড কিম্বার-এর থেকে নেওয়া।]