অভিষেক ছটায় উজ্জ্বল বাংলা

প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৮৮ রানে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরে দুরন্তভাবে ফিরে এসে বরোদার বিরুদ্ধে ৩৫০ তাড়া করে চার উইকেট হাতে থাকতে জিতেছিলো বাংলা দল। দলগত সুন্দর পারফরমেন্স এর পর দল যে চমৎকার চনমনে থাকবে এটাই স্বাভাবিক এবং প্রেস কনফারেন্স করে অরুণ লালও জানিয়েছিলেন সেই কথা, সঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন যে তারা দিনের পর দিন, ঘন্টার পর ঘন্টা এইরকম আত্মবিশ্বাসপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে চান।

আজ হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার অভিমন্যু ঈশ্বরন ও সুদীপ কুমার ঘরামী যথাক্রমে ০ এবং ১৪ রানে ফিরে যাওয়ায় যেন মনে হচ্ছিলো অরুণ লালের কথার জোর কিছুটা ফিকে হয়েছে। কিন্তু এরপর তিনে নামা ঋত্বিক রায়চৌধুরী এবং চারে ব্যাট করা সায়ন শেখর মন্ডল ব্যাট করছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দভাবে। সায়ন শেখর মন্ডলকে নিয়ে এখানে ছিলো কিছু প্রশ্ন – প্রায় পাঁচ বছর পরে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরে সিনিয়র ব্যাটার মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদারের আগে তার ব্যাট করতে যাওয়া কতোটা যথাযথ হলো তাই নিয়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে সায়নের যা কার্যকরিতা অর্থাৎ পেসারদের বিরুদ্ধে ভালোরকম দৃঢ়তা দেখিয়ে বিপদের সময় কাটিয়ে দেওয়া সেটাই করে গেলেন সায়ন। এক সময় ১০ ওভারে ২৪-২ স্কোরে ধুঁকতে থাকা বাংলা যখন মধ্যাহ্নভোজে যাচ্ছে তখন তাদের স্কোর ৭২-৩। যার পরে অনুষ্টুপ ও মনোজের কাছ থেকে একটা ‘বিগ শট’ আশা করতেই পারতো বাংলা।

ছবি : সিএবি

কিন্তু বাস্তবে ঘটলো অন্যরকম। মধ্যাহ্নভোজ আর চা-বিরতির ঠিক মাঝামাঝি যখন খেলা চলছে তখন মাত্র তিরিশ বলের ব্যবধানে ফিরে গেলেন সায়নশেখর মন্ডল (৩৪), অনুষ্টুপ মজুমদার (২৯) এবং মনোজ তিওয়ারি (২)। এর মধ্যে সায়ন শেখর ৯৮ বল খেলে তার কাঙ্খিত কাজ করে গেলেও বাকি দুই সিনিয়র ব্যাটার একেবারেই ব্যর্থ। বাংলা হঠাৎই ১০৭-৩ থেকে ১১৬-৬।

এই ধস নামার পরে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ হয়ে যেন উদয় হলেন আগের ম্যাচের দুই ত্রাতা – শাহবাজ আহমেদ এবং অভিষেক পোড়েল। শাহবাজ এবং অভিষেক বেশ দ্রুততার সঙ্গে রান তুলতে থাকেন এবং তাদের মধ্যে ৯৫ বলে ৭৪ রানের যে পার্টনারশিপ হলো তাতে বাংলার বিপর্যয়ের ভ্রূকুটি কাটলো অনেকটা। শাহবাজ নিজের নির্ভরতার পরিচয় দিচ্ছিলেন বেশ ভালো ভাবেই কিন্তু ইনিংসে প্রতিপক্ষের সর্বাধিক সফল বোলার তনয় ত্যাগরাজনের বলে প্রতীক রেড্ডির হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪০ রানে ফিরে যান তিনি। এরপরে অবশিষ্ট ছিলেন বাংলার পেস ত্রয়ী আকাশদীপ, ঈশান পোড়েল এবং মুকেশ কুমার। এখান থেকেই যেন ‘রনং দেহি’ মূর্তি ধারণ করেন অভিষেক। ঝোড়ো ব্যাটিং করে মাথায় চড়ে বসেন রবি তেজা, তনয় ত্যাগরাজন, ভুবনগিরি পুন্নিয়ার। শাহবাজ আউট হওয়ার পরে বাংলার ইনিংসে যোগ হওয়া ৫২ রানের ৩৯ই করেন অভিষেক। উল্লেখ্য মাত্র ২৩ বল নিয়েছিলেন এই রান করতে। ৬২ বলে ১১৭ স্ট্রাইক রেটে উইকেটের চার দিকে শট খেলে করা ৭৩ রানের ইনিংসে আফসোস একটাই – সাপোর্ট পেলে হয়তো প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম একশো পেয়ে যেতেন আজই।

তনয় ত্যাগরাজন, রবি তেজা, ভুবনগিরি পুন্নিয়ার দাপটে বাংলা ২৪২ রানে অলআউট হলেও বাংলার হয়ে পড়ন্ত বিকেলে পাল্টা দিলেন মুকেশ কুমার। হায়দ্রাবাদের দুই ব্যাটসম্যানের অক্ষত রেড্ডিকে তিনি কিপারের দস্তানাবন্দী করলেন এবং তিলক ভার্মার স্ট্যাম্পই উড়িয়ে দিলেন মুকেশ। আপাতত হায়দ্রাবাদী স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ৯ ওভার শেষে তারা ১৫-২। ক্রিজে অধিনায়ক তন্ময় আগারওয়াল এবং হিমালয় আগারওয়াল।

আপাতত দ্বিতীয় দিনের অপেক্ষা। বাংলার ঈশান কোণের হাওয়া কি উড়িয়ে দেবে হায়দ্রাবাদ ব্যাটিংকে? না তন্ময় হয়ে ক্রিজে থেকে হিমালয়সম স্কোর খাড়া করবেন হায়দ্রাবাদীরা। জানতে হলে ভরসা সর্বোচ্চ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের ওয়েবসাইট।