মহিলা বিশ্বকাপ ২০২২-এর প্রথম সেমি-ফাইনালে উইকেট-রক্ষক অ্যালিসা হিলি — ১২৯ (১০৭) ও বাঁ-হাতি ব্যাটার রেচেল হেইনস ৮৫ (১০০)-এর রেকর্ড ওপেনিং জুটির দ্বারা ক্যারিবিয়ানদের ১৫৭ রানে দুরমুশ করে সপ্তমবারের মতো মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেল অস্ট্রেলিয়া। বেসিন রিজার্ভে বৃষ্টিবিঘ্নিত এই খেলায় ৪৫ ওভার করে উভয় দলের ইনিংস নির্ধারিত হয়। এদিন টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ব্যাট করতে পাঠায় উইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে হিলি-হেইনস ওপেনিং জুটির ২১৬ রান ও শেষের দিকে বেথ মুনির ৩১ বলে ৪৩* রানের ক্যামিও ইনিংসের সুবাদে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রানের পাহাড়প্রমাণ টোটাল খাড়া করে ক্যাঙ্গারু বাহিনী।
ওয়েলিংটনের মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় শুরুর দিকে উইকেটে অভ্যস্ত হতে হেলি কিছুটা সময় নিলেও, হেইন্স যেভাবে শর্ট-পিচ বলগুলিকে বাউন্ডারির দিকে পাঠাচ্ছিলেন তাতে প্রথম দিকে তাঁকে অনেক বেশি সহজ দেখাচ্ছিল উইকেটে এবং ফলস্বরূপ অস্ট্রেলিয়া তাদের শুরুর নয় ওভারে পাওয়ারপ্লে থেকে মাত্র ৩৭ রান বোর্ডে তোলে। কিন্তু ছন্দ ফিরে পেতে খুব বেশি সময় নেননি হিলি কারণ ম্যাচ যত গড়াতে থাকে তিনি হেইন্সকে ছাপিয়ে যেতে থাকেন এবং তারপরে মাত্র ২৮ বলে অর্ধশতক থেকে নিজের কেরিয়ারের চতুর্থ একদিবসীয় তথা বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর প্রথম শতরান সম্পূর্ণ করেন তিনি। একটা সময় হিলির নামের পাশে একটাও বাউন্ডারি ছিল না। এমতাবস্থা থেকে সর্বমোট ১৭ টি বাউন্ডারি ও মিড-অনের ওপর দিয়ে একটি ওভার বাউন্ডারি হাঁকান তিনি তাঁর চোখধাঁধানো ইনিংসে।
তবে আজ উইন্ডিজকে ভুগিয়েছে তাদের জঘন্য ফিল্ডিং। বেশ কিছু ক্যাচ নষ্ট করে তারা যা শেষমেশ কাল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। হিলি ও হেইনস এদের দুজনকেই একদম শুরুর দিকেই আউট করার সুযোগ থাকলেও ক্যাচ মিস করেন উইন্ডিজ ফিল্ডাররা। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ১৪১, হেইনস ব্যাট করছেন ৬১ রানে — এসময় মিড-অনে কারিশমা রামহারাকের বলে হেইনসের সহজ ক্যাচ মিস করে তাঁকে দ্বিতীয় বার জীবনদান করেন হেইলি ম্যাথিউজ। আর কথাতেই আছে ক্যাচ মিস্ তো ম্যাচ মিস্!
অবশেষে ৩৩তম ওভারে শামিলিয়া কননেলের বলে পরিবর্ত ফিল্ডার শাকিরা সেলমনের হাতে ক্যাচ তুলে হিলি ফিরে গেলে কিছুটা উজ্জীবিত হয় উইন্ডিজ শিবির। এরপর ক্যারিবিয় পেস বোলার চিনেল্লে হেনরি একই ওভারে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া হেইনস কে তিন অঙ্কের স্কোরে পৌঁছতে না দিয়ে তাঁর ও ব্যাটিং অর্ডারে আজ কিছুটা উন্নতি ঘটিয়ে তিন নম্বরে নামা মারকুটে আজি ব্যাটার অ্যাশ গার্ডনার – ১২ (৮)-এর উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রানের গতিতে কিছুটা বাঁধ টানেন (২৩৬/৩, ৩৬ ওভার)। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হবার হয়ে গিয়েছিল। এরপর উইন্ডিজ কিছুটা ম্যাচে ফিরছে বলে মনে হলেও বেথ মুনি ও মেগ লেনিং (২৬ নট আউট) জুটি ৬৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুললে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৩০০ পেরিয়ে যায়। ৪৩তম ওভারে উইন্ডিজ অধিনায়িকা স্তেফানি টেলর-কে পরপর তিনটি বাউন্ডারি মারেন বেথ। উইন্ডিজ বোলারদের মধ্যে চিনেল্লে হেনরি একমাত্র দুটি উইকেট নেন (৯-০-৫১-২)।
সুবিশাল এই রানের বোঝা মাথায় নিয়ে জবাবে ব্যাট করতে নামার আগেই দৃশ্যত ক্লান্ত দেখাচ্ছিল উইন্ডিজ-কে। তাও শুরুতেই বেথ মুনি অসাধারণ একটি ক্যাচ নিয়ে ওপেনার রাশাদা উইলিয়ামস-কে শূণ্য রানে সাজঘরে ফেরালেও অভিজ্ঞ ডান-হাতি ওপেনার দিয়েন্দ্রা ডটিন ও হেইলি ম্যাথিউজ উভয়েই ৩৪ রান করে একটা আশাপ্রদ শুরু করেন। নিজের ৩৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংসে ৫টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশা জাগালেও পাওয়ার-প্লের ঠিক পরেই তাহিলা ম্যাকগ্রাথের বলে অ্যানাবেলে সাদারল্যান্ডের কাছে লং-অনে ধরা পড়ে যান ডটিন। ক্যাপ্টেন স্তেফানি টেলর ৪৮ (৭৫) হেইলি ম্যাথিউজ-কে সাথে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৪৭ রান যোগ করে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও ম্যাচ জেতার জন্য বাড়তে থাকা প্রয়োজনীয় রান-রেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে থাকে ক্যারিবিয়ান মিডল-অর্ডার। ২৮তম ওভার থেকে ৩০তম ওভারের মধ্যে মাত্র ৯ রানের বিনিময়ে তিন তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে উইন্ডিজের স্বপ্নভঙ্গ করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর আর বিশেষ কিছুই করার ছিল না টেলর বাহিনীর। চোটপ্রাপ্ত আনিসা মহম্মদ ও চিনেল্লে হেনরি ব্যাট করতে না পারার কারণে কিছুটা আগেই ৩৭ ওভারে ১৪৮ রানে শেষ হয় উইন্ডিজের ইনিংস।
আগামীকাল (৩১ শে মার্চ, বৃহস্পতিবার) ক্রাইস্টচার্চে মহিলা বিশ্বকাপ ২০২২-এর দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। যে দল জিতবে আগামী ৩রা এপ্রিল রবিবার এই ক্রাইস্টচার্চেই ফাইনাল খেলবে অস্ট্রেলিয়ার সাথে, যারা নিজেদের রেকর্ড সপ্তমবারের জন্য খেতাব জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া – ৩০৫/৩ (৪৫)
অ্যালিসা হিলি ১২৯ (১০৭), রেচেল হেইনস ৮৫ (১০০), বেথ মুনি ৪৩* (৩১) | চিনেল্লে হেনরি ৯-০-৫১-২।
উইন্ডিজ – ১৪৮/১০ (৩৭)
স্তেফানি টেলর ৪৮ (৭৫), দিয়েন্দ্রা ডটিন ৩৫ (৩৪), হেইলি ম্যাথিউজ ৩৪ (৪৯) | জেস জোনাসেন ৫-০-১৪-২।
ছবি : ইন্টারনেট