আগামীকাল ভারতের বিরাট কোহলি শততম টেস্ট খেলতে নামছেন দুনিয়ার ৭১তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে। এই ৭১ সংখ্যাটি তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ৭০ নম্বর শতরানে এসে তিনি আটকে আছেন প্রায় আড়াই বছর। এই ফাঁকে একঝলকে আমরা দেখে নিই শততম টেস্টের বিচিত্র সব রেকর্ড।
ভারতের হয়ে প্রথম শততম টেস্ট খেলতে নামেন সুনীল গাভাস্কার। তিনি ১৯৮৪ সালের ১৭ই অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। সেই টেস্টে তিনি ৪৮ ও অপরাজিত ৩৭ করেন।
এরপরে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন দিলীপ ভেঙসরকার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪ নভেম্বর ১৯৮৮ খেলতে নেমে ২৫ ও শূন্য করেন।
ভারতের হয়ে এরপরের নামটি কপিলদেবের। শততম টেস্টে তিনি সবথেকে সফল ক্রিকেটার। বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫১ রানে ৭ উইকেট নেন। ব্যাট হাতে করেন ৫৫। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি শততম টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি করেন। তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ই নভেম্বর ১৯৮৯ সালে শততম টেস্ট খেলতে নামেন। এটি ছিল শচীন তেন্ডুলকারের প্রথম টেস্ট।
কাকতালীয় ভাবে পরের জন শচীন। তিনি ৫ই মে ২০০২ সালে শততম টেস্ট খেলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। করেন ৫৫। তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ২০০ তম টেস্ট খেলেন।
২০০৫ সালের ১৮ই ডিসেম্বর, পাকিস্তানের বিপক্ষে শততম টেস্ট খেলতে নামেন অনিল কুম্বলে। ইনি বল হাতে ১৭৮ রানে ২ উইকেট নেন; ব্যাট করার সুযোগ পাননি।
এরপরের জন রাহুল দ্রাবিড়। ১৮ই মার্চ ২০০৬ , ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে ৫২ ও ৯ করেন তিনি।
২০০৭ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শততম টেস্ট খেলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। এখনও অবধি একমাত্র বাঙালী যিনি এই কৃতিত্বের অধিকারী। ওই ম্যাচে ৪৩ ও ৪০ করেন তিনি।
এরপরেই আসেন ভি.ভি.এস লক্ষ্মণ। ৬ই নভেম্বর ২০০৮ , অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে ৬৪ ও ৪ করেন তিনি।
এরপর বীরেন্দ্র সেহবাগ (২০১২ সালের ২৩ শে জুন) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, হরভজন সিং (২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩) এবং ইশান্ত শর্মা (২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শততম টেস্ট খেলেন। বলার মতো পারফরম্যান্স কেউই করেননি।
গাভাস্কার, ভেঙসরকার ও দ্রাবিড় শততম টেস্ট খেলেন অধিনায়ক থাকাকালীন।
আবার কপিলদেব ও দ্রাবিড় যে দলের বিরুদ্ধে ডেবিউ করেন, সেই দলের বিরুদ্ধেই শততম টেস্ট খেলার নজির গড়েন।
সংক্ষিপ্ততম টেস্ট ম্যাচ ছিল ইশান্ত শর্মার। মাত্র দুই দিনে শেষ হয় তাঁর শততম টেস্ট, যেটি আবার গোলাপী বলে খেলা হয়।
এঁদের মধ্যে একমাত্র শচীন শততম টেস্ট খেলার একদশক পরেও টেস্ট খেলেছেন। দ্রাবিড় আর কপিলদেব ছাড়া কেউই এরপর ৫ বছর টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি।
ভারতের ১১ জন ছাড়া ইংল্যান্ডের ১৫, অস্ট্রেলিয়ার ১৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৯, দক্ষিণ আফ্রিকার ৮, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ৫ জন করে এবং নিউজিল্যান্ডের ৪ জন অর্থাৎ মোট ৭০ জন ১০০টি বেশি টেস্ট খেলেছেন। এই সংখ্যাটি বিরাট কোহলির ৭০ তম শতরানের সমান।
কপিল ও শচীনের মধ্যে আজহারউদ্দিনের এই রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু ৯৯টি টেস্ট খেলে তিনি আটকে যান। যদি ১৯৯৯-২০০০ পর্বে ৭টি টেস্টে বাদ না পড়তেন তাহলে হয়তো তিনিও এই তালিকায় থাকতেন।
শততম টেস্ট কে স্মরণীয় করে রাখতে কলিন কাউড্রে নিজের প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারের শততম শতরান করেছিলেন ওই টেস্টে। ব্যাঙ্গালোরের কাছে ঊটির নিকটবর্তী একটি চা-বাগানের মালিকের ছেলে ছিলেন তিনি। তাঁর বাবার জন্ম কলকাতায়। তিনি আবার ইউরোপীয় দলের হয়ে ভারতে তাঁর কেরিয়ারের একমাত্র প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন। ক্রিকেট প্রেমী এই ব্রিটিশ নিজের ছেলের নাম রাখেন মাইকেল কলিন কাউড্রে অর্থাৎ M C C । M C C-র M C C হিসেবেই পরিচিতি পান কলিন।
কলিনের ঠাকুরদা অধুনালুপ্ত বালিগঞ্জ ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে কলকাতায় ক্রিকেট খেলতেন। বহু বছর পর বব উলমারের বাবাও এই ক্লাবের হয়ে কলকাতায় ক্রিকেট খেলেন। যাই হোক কলিনের ঠাকুর্দা ১৮৯৮-৯৯ সালে রেঞ্জার্স মাঠে রেঞ্জার্স দলের অধিনায়ক হয়ে পাতিয়ালা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামেন।যে দলে রঞ্জি খেলেছিলেন সেই ম্যাচে। এমনকি দ্বিতীয় দিন পাতিয়ালার মহারাজা রাজেন্দ্র সিং (ভূপেন্দ্র সিং এর পিতা, যাদবেন্দ্রর পিতামহ ও পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্রর প্রপিতামহ) দ্বিতীয় দিন মাঠে না নামায় অধিনায়ক হন রঞ্জি নিজেই।
শততম টেস্টের বিচিত্র কাহিনী এই অবধি।