ভিভের বকুনি খেতে হয়েছিল দর্শককে

ইডেন নিয়ে একটা বই লেখার অনুরোধ পাওয়ার পর ঠিক করতে পারছিলাম না ভূমিকাটা কাকে দিয়ে লেখাব। সুনীল গাভাসকার?‌ জিওফ বয়কট, নাকি মাইকেল হোল্ডিং?‌ সৌরভ গাঙ্গুলি বা কপিলদেবের নামটাও আলোচনায় ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত মনে হল ভিভিয়ান রিচার্ডসকে দিয়েই লেখাব। অবশেষে লিখলেন, ‘‌ইডেন গার্ডেন্সকে ভোলা কঠিন। ৭৪ সালে প্রথম যখন ইডেনে টেস্ট খেলতে নেমেছিলাম, আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ৪৮ বছর আগে ওই সকালকে ভোলাও কঠিন। শুধু কিচিরমিচির। চিলচিৎকার। কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। তখন অবশ্য ডেসিবেল ফেসিবেল শব্দের সঙ্গে পরিচয় ছিল না। এবং ভারতের কেউ বাউন্ডারি মারার সঙ্গে সঙ্গে যে গগনভেদী চিৎকার শুনেছি, তা শোনার অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। একটা সত্যি কথা বলব?‌ আমার অ্যান্টিগুয়ার সব লোককে নিয়ে এলেও ইডেন ভরাতে পারতাম না। এত লোক, এত চিৎকার ওই প্রথম শুনেছিলাম।’‌ এটা ছিল ভূমিকার একটি অংশ। সোমবার তাঁর ৭০তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে ভিভের ওই কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে।

ছবি : গুগল

অনন্য ভিভের একটা গল্প বহুল প্রচারিত। ইনিংসের শুরুতে ব্যাটে–বলে হচ্ছিল না। সমারসেট কর্তারা উদ্বিগ্ন, মেজাজে ব্যাট করতে পারবেন তো?‌ ওদিকে গ্ল্যামারগনের বোলার গ্রেগ টমাস বার কয়েক তাঁকে পরাস্ত করার পর এগিয়ে এসে ভিভের কাছে জানতে চান, তিনি কি বলটা দেখতে পাচ্ছেন না!‌ লাল বল। পাঁচ আউন্স ওজন। না দেখার তো কোনও কারণ নেই। এই টিপ্পনী হজম করেছিলেন স্যর ভিভ কয়েক মুহূর্তের জন্য। ততক্ষণে জড়তা কেটে গিয়েছে। এবং বেরিয়ে এসেছিল যে ব্যাটের ছোবল, তা মাঠ পেরিয়ে উড়ে গিয়েছিল পাশের নদীতে। এবার ভিভ এগিয়ে গিয়ে ওই অখ্যাত বোলারকে বলেছিলেন, ‘‌তুমি তো জানো বলের রং, ওজন। তাই এবার নিজে গিয়ে বলটা সহজেই খুঁজে আনো।’‌ কাউন্টি ক্রিকেটে আরেকটা গল্প হচ্ছে, তিনি ব্যাট করছেন হ্যামশায়ারের বিরুদ্ধে। বোলার ম্যালকম মার্শাল। ব্যাটসম্যানের নাম ভিভিয়ান রিচার্ডস। আহা। অথচ, ভিভ হঠাৎই দেখতে পান, সাইটস্ক্রিনের ওপরে বসা এক দর্শক খবরের কাগজ পড়ছেন। বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন স্যর ভিভ। হঠাৎ আম্পায়ার তা বুঝে জানতে চেয়েছিলেন, দর্শকদের নড়াচড়ায় তাঁর কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না। মাথা নেড়ে ভিভ জানিয়ে দেন যে, ওটা কারণ নয়। এবং তিনি ব্যাট উঁচিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন সামনে বসা এক ভদ্রলোকের দিকে। তখনও পরিষ্কার হয়নি পরিস্থিতি। অবশেষে ভিভ নিজে উল্টোদিকে হেঁটে গিয়ে চিৎকার করে বলেন, ম্যালকম মার্শাল বোলিং করছে। ব্যাট করছে ভিভিয়ান রিচার্ডস। আর তুমি কি না খবরের কাগজ পড়ছ?‌ খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে আমাদের অপমান করার কোনও অধিকার তোমার নেই। বেরিয়ে যাও। ক্রিকেট মাঠে এ দৃশ্য যে দেখতে চায় না, তার মাঠে থাকার কোনও অধিকারই নেই।’‌ এমন অসংখ্য ঘটনায় তিনি উজ্জ্বল হয়ে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। সাধে কি আর তাঁকে উইজডেন শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন করে রেখেছে এবং ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর অসাধারণ ১৮৯ রানের ইনিংসটাকে শতাব্দীর সেরা ইনিংস হিসেবে চিহ্নিত করেছে।