তৃতীয় পর্বে ব্যাটিংয়ের গ্রিপ / স্ট্যান্স ও বোলিংয়ের সাইড-অন / চেস্ট-ওপেন অ্যাকশনে বায়োমেকানিক্স ব্যাপারটার প্রয়োগ কি সেটা বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম। এই পর্বে ভিডিও-বিশ্লেষণ, চাকিং-বিতর্ক এবং বায়োমেকানিক্স ও অত্যধিক-প্রযুক্তিনির্ভর কোচিং সম্বন্ধে বিখ্যাত এক প্রাক্তন-ক্রিকেটার-তথা-কোচের সমালোচনামূলক কিছু মন্তব্য / প্রশ্ন উল্লেখ করে রচনাটা শেষ করছি।
ভিডিও-বিশ্লেষণ
‘স্লো-মোশন অ্যকশন রিপ্লে’ বা ‘ফ্রীজ ফ্রেম’ এই ধরণের প্রষুক্তির প্রয়োগ ক্রিকেটারদের কৌশলগত উন্নতিতে প্রচুর সাহায্য করে। প্রথমত, “আমি খেলি, অতএব আমি প্রশিক্ষণ দিতে পারি” এই তত্ত্বটা ভুল। অ্যামেরিকার অলিম্পিক সাঁতারুদের একজন কোচ জলে পড়লে ডুবে যেতেন! কিন্তু তিনি সাঁতার কাটবার শারীরিক চাহিদা ও কৌশলগত দিকগুলো খুব ভালই জানতেন।
অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয়ে থাকে যে আপনি একজন তুখোড় খেলোয়াড়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার খেলবার ভঙ্গি নিয়ে কি সমস্যা বলুন তো?” আর তিনি সঠিক বলতে পারলেন না। বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই একটা বড় সমস্যা হয় যে তাঁরা ধরে নেন যে অন্যরাও বিশেষজ্ঞ এবং অতটাই জানেন-বোঝেন!
একজন ভাল কোচ ভিডিও ব্যবহার করে বোঝাতে পারেন যে খেলোয়াড়ের কি প্রয়োজন। নিউজিল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার গ্যারি ট্রৌপ [ইনি সত্তর দশকের শেষার্ধ থেকে প্রায় এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন।] নাকি ডান-হাতি ব্যাটারদের বাঁ-হাতি বোলারের ইন-স্যুইং ডেলিভারি করতে পারতেন না, যদিও তার রান-আপ ঠিক ছিল, সোজা দৌড়ে আসতেন, স্টাম্পের কাছ ঘেঁষে বল ডেলিভারি করতেন, তাঁর বলের গ্রিপ ঠিক ছিল, বলটা ছাড়তেন ঠিকঠাক। ভিডিও দেখে ফ্র্যাঙ্ক টাইসন তাঁকে বলেন যে তাঁর সামনের কনুইয়ের অবস্থান ঠিক নেই। অর্থাৎ বলটা ছাড়বার সময় তাঁর সামনের (ডান) কনুইটা এগিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি চেস্ট-ওপেন অ্যাকশনে চলে যাচ্ছেন। সাধারণভাবে চোখে দেখে এটা ধরা খুবই কঠিন ছিল, বিশেষত স্বাভাবিক পূর্ণগতিতে। বড়সড় গলদ খোলাচোখে বোঝা যায়, কিন্তু ভিডিও ছাড়া এইজাতীয় সূক্ষ্ম ব্যাপার ধরা প্রায় অসম্ভব।
চাকিং-বিতর্ক
আচ্ছা, আমাদের হাতে যখন এত কিছু পদ্ধতি ও প্রযুক্তি রয়েছে, তখন এই বিষয়টা একেবারে মিটিয়ে ফেলা যাচ্ছেনা কেন? এই নিয়ে টাইসনের বক্তব্যটা ২০০২ সালে কি ছিল তা শোনা যাক।
‘চাকিং’ নিয়মটার মধ্যেই অনেক গলদ আছে। অনেক ক্ষেত্রেই subjective judgement ক’রে বলা হয় যে অমুক বোলার বল ছোঁড়েন এবং এর সঙ্গে অন্যান্য অ-ক্রিকেটীয় প্রসঙ্গও জড়িয়ে থাকে। নিয়মটা অনুযায়ী চাকিং মানে বলটা ডেলিভারি করবার অব্যবহিত আগে বাহু সোজা করা। সেভাবে দেখতে গেলে ৯০ শতাংশ বোলারই বল ‘ছোঁড়েন’ (বা ছুঁড়তেন) কারণ তাঁদের ডেলিভারি অ্যাকশনের সময় কোথাও না কোথাও কনুই বা বাহু সোজা করা জিনিসটা আছে। হ্যারল্ড লারউডের বোলিংয়ের ছবি দেখলে দেখা যাবে যে তাঁর বাহু hyper-extended; ব্রায়ান স্ট্যাথামেরও বাহুরও ঐরকম hyper-extension ছিল। যাঁরা স্বাভাবিক প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় (natural reflex action) বাহু সোজা করেন আর যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে (deliberately) বাহু সোজা করেন, তাঁদের মধ্যে ফারাকটা এই নিয়মটা করেনা। নিয়মটা সংশোধন হওয়া দরকার – যাঁরা ইচছাকৃতভাবে এবং একটা পূর্ব-নির্দিষ্ট কোণের বেশি বাহু সোজা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘চাকিং’-এর অভিযোগ করা হোক – subjective judgement ব্যাপারটা বন্ধ হোক।
কয়েকটা অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ ও প্রশ্ন
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার-তথা-অধিনায়ক এবং ১৯৮৭-র বিশ্বকাপজয়ী কোচ, ববি সিম্পসন, ২০০৬ সালে কিছু বক্তব্য রাখেন। এখানে তার সামান্য কিছু অংশ তুলে ধরছি যা বিতর্কমূলক ব’লে মনে হতে পারে। তর্জমা না করে সরাসরি দিচ্ছি তাঁর লেখা বইয়ের একটি পৃষ্ঠা।
এছাড়া তাঁর করা প্রশ্নগুলোর কয়েকটা কিন্তু আজ দেড় দশক বাদেও প্রাসঙ্গিক। তাঁর জবানিতেই তুলে দিই সেগুলো:
- Today, international teams employ a bevy of specialists to look after the bodies, minds, fitness and strengths of their players. Why then are so many cricketers getting injured?
- Why are so many no-balls bowled in this ‘professional era’?
- Why is it that more batsmen get hit on the head now than in any other era?
- Why do wicketkeepers stand so deep these days?
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এড়াতে আমি দু’ধরণের মতামতেরই কিছু কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। আশাকরি সেটা পাঠকরা বুঝেছেন। তাহলে এখানেই শেষ করা যাক।
[পুনশ্চ: ফ্র্যাঙ্ক টাইসনের কিছু রচনা ও সাক্ষাৎকারের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। ২০০৬ সালে প্রকাশিত ববি সিম্পসনের “Simmo: Cricket Then and Now” বইটার ৩০ ও ৩১ নম্বর অধ্যায় থেকেও কিছু অংশ ব্যবহার করা হয়েছে।]