একটা মাঝারি মাপের বিশ্রাম নিয়ে ফিরে এসে অনেকদিন বাদে পরপর দুটো ম্যাচে রান পেলেন। পুরনো ছন্দে ফিরবেন কিনা সেটা সময়ই বলবে, কিন্তু অনেকদিন বাদে সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটছে, আপনি নিজেও হয়তো বাড়তি আত্মবিশ্বাসী। এই সময়ে তো আপনার আরও বেশি করে নিজের ব্যাটিংয়ে মন দেওয়া উচিত। মিডিয়ার সামনে অপ্রয়োজনীয় এবং আলপটকা মন্তব্য না করে।
একটা আপাত নির্বিষ প্রেস কনফারেন্স। কী সুন্দরভাবে দলের সিনিয়র সদস্য হিসেবে অর্শদীপের পাশে দাঁড়ালেন, দলের খোলামেলা পরিবেশ নিয়ে কথা বললেন। কিন্তু কী প্রয়োজন ছিল সেখানে এই অপ্রয়োজনীয় ঝড় তোলার? ঝড় তোলার জন্য, সমলাচনার জবাব দেওয়ার জন্য তো হাতে একটুকরো উইলো আছে! আপনি অনেক ভাগ্যবান যে আপনার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অধিনায়কত্ব ছেড়ে যাওয়ার দিন অন্তত একজন প্রাক্তন সতীর্থও আপনাকে মেসেজ করেছেন। সঠিক প্রশ্নই তুলেছেন মিস্টার গাভাসকার। এর বেশি আপনি কী আশা করেছিলেন? ভুলে যাবেন না আপনার একজন সতীর্থের নাম শচীন তেন্ডুলকার, একজন আপনার বর্তমান কোচ। আপনি যা বললেন তাঁর কোন একটা তীর কিন্তু তাঁদের দিকেও যায়। আর প্রকাশ্যে সমালোচনা করা? একটু ভেবে দেখবেন, যে সমস্ত প্রাক্তন খেলোয়াড়রা প্রকাশ্যে আপনার অফ-ফর্ম নিয়ে সমালোচনা করছিলেন, তাঁরা কিন্তু কিছুটা হলেও ক্রিকেট খেলেছেন। তাঁরা না হয় আপনার কাছে সরাসরি পৌঁছে তাঁদের বক্তব্য রাখেননি, আপনার কাছেও তো অনেক প্রাক্তন খেলোয়াড়ের ফোন নম্বর রয়েছে, আপনি কি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন? রবি শাস্ত্রী, আপনার অতি প্রিয় মানুষ, যিনি কিনা সবসময় আপনার পক্ষে থেকেছেন, তিনিও কিন্তু বারবার প্রকাশ্যে প্রায় সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার বিশ্রামের হয়ে সওয়াল করেছেন। আজ যখন সেই বিশ্রাম নিয়ে কিছুটা হলেও উপকৃত, একবারও একটা ইন্টারভিউতেও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন? এশিয়া কাপ শুরুর পর থেকে আপনার এখনও নিদেনপক্ষে তিনটে ইন্টারভিউ প্রকাশ্যে এসেছে, কোথাও তাঁর উল্লেখ নেই!
আর একটা বিষয় ঠিক বুঝলাম না। ধোনি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বললেন, ‘না মুঝে উনসে কুছ চাহিয়ে, না উনকো মুঝসে’। তাই তিনি আপনাকে মেসেজ করেছিলেন, আর সেই কারণেই এই সম্পর্কটা জেনুইন। অর্থাৎ বাকিদের (যাঁদের মধ্যে আপনার প্রাক্তন সতীর্থরা রয়েছেন) ‘আপসে কুছ চাহিয়ে’। এটা কি ঠিক বললেন? একটু পরিষ্কার করে বলবেন যে গাভাসকার, কপিলদের আপনার থেকে ঠিক কী ‘চাহিয়ে’! আর কি প্রয়োজন এই জাতীয় অযাচিত বিতর্ক তৈরি করার?
আপনার কথা অনুযায়ী আপনার এক প্রাক্তন সতীর্থের কথা বলি, যিনি দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও প্রচুর সমালোচনা হয়েছে, অফ ফর্মে থাকাকালীন হোটেলের হাউস-কিপিং স্টাফ এসেও তাঁকে ব্যাটিং নিয়ে উপদেশ দিয়ে গেছেন কিন্তু তিনি তাঁর কোনদিন কোন সমালচনার উত্তর মুখে দেননি, সবসময় ব্যাটের মাধ্যমে সব ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপনারও যদি কারও কোন বাহ্যিক সমালোচনা খারাপ লেগে থাকে, ব্যাটে জবাব দিন, মুখে নয়।
আর আজ থেকে একশ বছর পরেও ক্রিকেট ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে আপনার ব্যাটিংয়ের জন্য, কোন প্রেস কনফারেন্স-এর জন্য নয়। তাই অনুরোধ, অনেকদিন বাদে যে ভাল সময়টার আভাস দেখা গেছে, অবান্তর এবং অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে সেটাকে নষ্ট করবেন না, এবার অন্তত একটু ‘শচীন’ হয়ে উঠুন।