বিরাট কি ঘুঘু দেখেননি? তাই কি ফাঁদে?

রক্তপাতহীন যুদ্ধ। কতদিন চলবে তা বোঝা যাচ্ছে না। অস্ত্রশস্ত্রের কোন প্রয়োগ নেই, তাই কোন ঝনঝনানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না, বাইরে থেকে। কোহলি বনাম ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের লড়াই কিন্তু চলছে নিঃশব্দে। এখন হয়তো একপেশে হয়ে দাঁড়িয়েছে, গোলাগুলি ছোঁড়া হচ্ছে বিরাটের দিকে। বোর্ড কিন্তু হাসতে হাসতে, এই যুদ্ধ জারি রেখেছে। অন্ততঃ চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সৌরভ-জয় শাহরা বিরাটকে পাল্টা আক্রমণ করার কোন সুযোগ দেবেন বলে মনে হয় না। যা খবর তাতে অক্টোবরে সৌরভ-জয় এরএই দায়িত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।

অন্তত মাস চারেক আগে থেকে বিরাট কোহলি বলে আসছিলেন যে শততম টেস্ট তিনি ব্যাঙ্গালোরে খেলতে চান। এই অনুরোধ করার সময়ে দুই পক্ষের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ক্রমশ যত দিন এগিয়েছে সম্পর্কে ফাটল বেড়েছে। চরমে পৌঁছয় যখন দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার আগের দিন বিকেলে বিরাট, বোর্ডের মঞ্চে বসে বোর্ড সভাপতিকে মিথ্যেবাদী হিসেবে চিহ্নিত করলেন। দল ঝামেলায় পড়ে যাবে যদি বিরাট টি২০ বিশ্বকাপের আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, তাই প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে (বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবেও) সৌরভ অনুরোধ করেছিলেন বিরাট যাতে টি২০র অধিনায়কত্বের মুকুট মাথা থেকে নামিয়ে না রাখেন। কোহলি তা শোনেননি এবং দুম করে তিনি বোর্ডের নিষেধ সত্ত্বেও জানিয়ে দেন যে তিনি আর টি২০ তে অধিনায়কত্ব করতে আগ্রহী নন।

তখন থেকেই শুরু হয়েছিল যুদ্ধ। জনতা জানতে চেয়েছিল সত্যি কথা কে বলছেন? বিরাট নাকি সৌরভ? বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায় যখন নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, আট জন বোর্ড কর্তার সামনে বোর্ড সভাপতি এই অনুরোধ করেছিলেন বিরাটকে। মিথ্যাচারের প্রশ্নে বোর্ড কিন্তু সরাসরিভাবে বিরাটকে ভর্ৎসনা করেনি, এমন কী শোকজও করেনি। এরপরে বোর্ড নিঃশব্দে একটু একটু করে বিরাটের পালক ছাঁটতে শুরু করে। ব্যাটে রান নেই বহুদিন, বোর্ডের সঙ্গে এই ঝামেলায় গোটা ব্যাপারটা তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল। অখ্যাত বোলারদের বলে আউট হচ্ছেন বারবার। আসলে বিরাট বোধহয় ঘুঘু পাখির নাম শোনেননি। বা শুনে থাকলেও এভাবে যে ফাঁদে পড়ে যাবেন তা কল্পনাও করতে পারেননি। প্রাক্তন রাজা ক্রমশ জমাট অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছেন।

আগেই বলেছি, নিঃশব্দে বোর্ড বিরাটকে কোণঠাসা করে ফেলছে তাই ব্যাঙ্গালোরে শততম টেস্ট ম্যাচ খেলার ইচ্ছে ‘হয়তো’ অপূর্ণ থেকে যাবে। হয়তো শব্দটা ব্যবহার করলাম কারণ ৯৯ টেস্ট খেলা বিরাট কোহলি ঘোষিত সূচি অনুযায়ী শততম টেস্ট খেলবেন মোহালিতে, ব্যাঙ্গালোরে নয়। বিরাট কোহলি চেয়েছিলেন আরসিবি-র ক্রিকেটার সদস্য কর্তা ও সমর্থকদের টেস্ট জীবনের বড়সড় এক মাইল ফলকে পৌঁছনোর সাক্ষী রাখতে। ভেবেছিলেন ঝলমলে পার্টি-ফার্টি দিয়ে নিজেকে আরও উজ্জ্বলতর করে তুলে ধরবেন। অন্য সময় হলে বোর্ড এই সুযোগ অবশ্যই দিত বিরাটকে। কিন্তু এই লড়াই এর সময়ে বোর্ড এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। তাই ব্যাঙ্গালোর এর বদলে মোহালিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল তাঁর শততম টেস্ট। বিরাটের ইচ্ছেকে কেমনভাবে নিঃশব্দে অকেজো করে দিল বোর্ডের চূড়ান্ত উপেক্ষা। এখন বিরাট যদি ব্যাঙ্গালোরে শততম টেস্ট খেলার বিষয়ে গোঁ ধরে বসে থাকেন, তাতে লাভ হবে না। কোহলি বলতেই পারেন, মোহালিতে তিনি খেলবেন না। তখন শততম টেস্ট খেলার সুযোগ খুলে যাবে ব্যাঙ্গালোরের মাঠে। বোর্ডের একপক্ষ মনে করছে এই অঙ্ক করতে গিয়ে পিঠের ব্যথার কথা ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে একটি টেস্ট কোহলি খেলেননি। সেই নাটক যদি আবারও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মোহালিতে মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নেন, বোর্ড কিন্তু আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে। তখন আর নিঃশব্দ লড়াই থাকবে না। লড়াইটা প্রকাশ্যে এসে যাবে। এটুকু বলতে পারি, কোহলি যদি এই লড়াই থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শুধুই রান তোলার দিকে নজর দেন, আবার জনতাকে সঙ্গে পেয়ে যেতে পারেন। সৌরভের সঙ্গে এই লড়াই সহজে থামবে না কারণ বাংলার মহারাজের স্পর্শে আঠারো ঘা এসেছে, যা শুধু বিরাটই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।