ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারের নাম কেউ কেউ হয়তো বলার চেষ্টা করবেন, বঙ্গ সমর্থকেরা মিউ মিউ করে হয়তো বলবেন ডন ব্র্যাডমানকে স্ট্যাম্প করা প্রবীর সেনকে ভুলে গেলেন? কিন্তু সামগ্রিকভাবে সৈয়দ কিরমানিকেই ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষকের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সহমত না হয়ে কোনো উপায় নেই। চারিত্রিক দোষের কারণে খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি সদানন্দ বিশ্বনাথ, যদিও প্রতিভার বিচারে তিনি টেক্কা দিতেন অনেককেই। এহেন কিরমানি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন জাতীয় দল থেকে বাংলার ঋদ্ধিমান সাহার বাদ যাওয়ার খবর শুনে। কী কী বললেন কিরমানি?
কিরমানি:- আমি জানিনা কী জন্য বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে ৩৭ বছর বয়স যদি কোনো কারণ হয়ে থাকে তাহলে বলবো এটা একটা অজুহাত। আমি একেবারেই সহমত নই।
প্রশ্ন:- কেন এমন কথা বলছেন?
কিরমানি:- প্রথম কথা চোট নিয়েও এই তো কদিন আগেও নিউজিল্যান্ড এর বিরুদ্ধে ৬১ রান করে দলকে বাঁচালো। এই এক মাসের মধ্যে বয়স বেড়ে গেলো? এই অজুহাত অসার, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রশ্ন:- উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
কিরমানি:- অফকোর্স। ঋদ্ধি ইস আ নাইস ম্যান। কোনো সাতেপাঁচে থাকে না। এখনও ঋদ্ধি দেশের সেরা উইকেটরক্ষক। নির্বাচকদের কাজ তো এই জায়গাটাতেই সহজ, কারণ বাদ দেওয়ার জন্য তাদের কোনো যুক্তির ধার ধারতে হয় না। শ্রীকর ভরতকে খেলাবে? সাহাকে দলে রেখে মেন্টর হিসেবে ব্যবহার করে শ্রীকরকে তৈরি করে নেওয়া উচিৎ ছিলো। ঋদ্ধি হলো খুঁতহীন উইকেটরক্ষক। ইন্ডিয়া টিমে তিনজন থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট, গা-হাত-পা টেপার জন্য তিনজন, আপনারা যাকে ম্যাসিওর বলেন। তো একটা ঋদ্ধিকে রাখলে বোর্ডের কি খুব আর্থিক ক্ষতি হয়ে যেত? বড়ো ম্যাচ আসতে দিন, শামি-বুমরা-অশ্বিন-জাদেজাদের বলে ক্যাচ ফেলতে দিন, ভারতকে যদি এইসব কারণে হারতে হয় তখনই খেল্ জমবে। মজাটা শুরু হবে তখন।
প্রশ্ন:- কিন্তু এই অবস্থা থেকে ঋদ্ধিমান কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে?
কিরমানি:- প্রথমেই বলি ঋদ্ধি মন খারাপ কোরো না। ১৩৫ কোটি মানুষের দেশে দরকার হয় একজন প্রধানমন্ত্রী, একজন গোলরক্ষক এবং একজন উইকেটরক্ষক। যদি এটা ও মেনে নেয়, তবে দেখবেন সমস্যা অনেক সহজ হয়ে গেছে। তার মানে কিন্তু এটা নয় যে নির্বাচকদের অন্যায়ের পরিমাণ কমে গেলো। দেশের সেরা উইকেটেরক্ষককে তুমি বাদ দেবে কেন? দম থাকলে প্রকাশ্যে এসে এর কারণ বলতে পারবে নির্বাচকরা? ওরা বলুক কী কী কারণে ঋদ্ধির মতো ভালো উইকেটরক্ষককে দলের বাইরে রাখতে হলো? আমরা জানতে চাই। কিন্তু আমি জানি ওরা বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা দেবে না।
প্রশ্ন:- কেন বলছেন এ কথা?
কিরমানি:- কারণ এর পেছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস। আমি নিজের কথাটা বলি? ১৯৭৯ বিশ্বকাপের আগে আমি ছিলাম দেশের এক নম্বর উইকেটরক্ষক, বাই ফার দ্য বেস্ট। তা সত্ত্বেও আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল সেবার। কিন্তু কেন হয়েছিল নির্বাচকরা তার উত্তর দেননি আজও। তাই ঋদ্ধিকে বলছি তুমি একা নও। আমি জানি তুমি যখন যতটুকু সুযোগ পেয়েছ তাতে তুমি নিজের সেরাটা দিয়েছ। মেরুদন্ড সোজা রেখে ক্রিকেট খেলেছ। কোনো বিশেষ ‘দল’ এর সঙ্গ নিতে হয়নি। তাই ওরা এই ধরনের প্রতিদান দিল।
প্রশ্ন:- ১৯৭৯ বিশ্বকাপে দল থেকে বাদ পড়ার পরে মুম্বই এর রাস্তায় খবর পেয়ে আপনি তো প্রায় বোবা হয়ে গেছিলেন।
কিরমানি :- ৪৩ বছর আগের সেই সন্ধ্যে আমি ভুলতে পারিনা। হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সিতে চেপে মুম্বইয়ের রাস্তায় রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে মধ্যরাতের পরেও ঘুরছিলাম। ট্যাক্সিচালক জানতে চেয়েছিলো কোথায় যাবো? জবাবে বলেছিলাম- “ঘুমাতে রহো,ঘুমাতে রহো। থামিও না।” নিজের কাছে জানতে চেয়েছিলাম আর কী কী করতে হবে আমায়? তাই ঋদ্ধিকে বলছি ভেঙে পড়ো না – প্রত্যাবর্তনের কথা ভাবো। শরীরে, মনে এনার্জি আনো। আমার রক্ত ঠান্ডা হয়েছিলো চার বছর বাদে, ৮৩ বিশ্বকাপে সেরা উইকেটরক্ষকের স্বীকৃতি পাওয়ার পরে। কাম অন ঋদ্ধি, স্টার্ট ফাইটিং।