বছরখানেক আগে এই ভদ্রলোকের ছবি অশোক মানকড়ের নামের পাশে ছেপেছিল একটি অগ্রণী বাংলা দৈনিক, ভুল করে।
এই ভদ্রলোকও একটা ভুল করে ফেলেছিলেন তাঁর টেস্ট কেরিয়ারে, যে ঘটনাটি উইকিপিডিয়াতে লিপিবদ্ধ আছে এভাবে:-
Mankad caused a major controversy in 1947/48 on India’s tour of Australia when he ran out Bill Brown in the second Test. Mankad, bowling, paused during the delivery stride of his run-up and broke the wicket at the non-striker’s end, whilst Brown was out of his crease backing up the striker in the accepted manner. He had done the same thing to Brown in the game against an Australian XI earlier on the tour, but his running out of Brown infuriated the Australian media, and running someone out in this way is now referred to around the world as “Mankading”. Although such an act is not an infringement of the laws of cricket, to some it is considered unsporting and against the spirit of the game.
দিনকয়েক আগেই সংশোধিত নিয়মে “Mankading” আইনত সিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।
ও হ্যাঁ, বাংলার গৌরব পঙ্কজ রায়ের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ১৯৫৬ সালের ৭ জানুয়ারি তারিখে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৫৫-৫৬র ৫ম টেস্টে মাদ্রাজে (পরবর্তীকালের চেন্নাইতে) ৪১৩ রানের একটি বিশ্ব-রেকর্ডও করেছিলেন তখন ৩৯ বছর বয়সী এই ভদ্রলোক। ওই ইনিংসে তিনি করেছিলেন ২৩১ রান আর পঙ্কজ রায়ের অবদান ছিল ১৭৩ রান। রেকর্ডটি অক্ষুণ্ণ ছিলো ৫২ বছর। ২০০৮-এর ১ মার্চ তারিখে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনিং জুড়ি গ্রেম স্মিথ আর নিল ম্যাকেঞ্জি ওই রেকর্ড ভেঙ্গেছিলেন ১ম উইকেটে ৪১৫ রান করে। ভালো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে অল্পবিস্তর স্লো বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিন বলও করতেন তিনি। ওই ঐতিহাসিক চেন্নাই টেস্টেই ২ ইনিংসে তাঁর বোলিং গড় ছিল ১৯-১০-৩২-০ আর ৪০-১৪-৬৫-৪।
৪৪টি টেস্টে ব্যাটিংয়ে ৫টি শতরান (যার মধ্যে দ্বি-শতরান ছিলো ২টি) আর ৬টি অর্ধশতরানসহ ৩১.৪৭ গড়ে ২,১০৯ রান এবং বোলিংয়ে ১৬২টি উইকেট তুলে নেবার পাশাপাশি ৩৩টি ক্যাচও ধরেছিলেন তিনি। উল্লিখিত মাদ্রাজ টেস্টে করা ২৩১ই ছিলো তাঁর সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর।
ভারতের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট তাঁর অবদান কখনো ভুলব না। ২৩৩টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ব্যাটিংয়ে তিনি ২৬টি শতরান আর ৫২টি অর্ধ-শতরানসহ ৩৪.৭০ গড়ে ১১,৫৯১ রান করেছিলেন আর বোলিংয়ে ৭৮২টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও ২৩৩টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ১৯০টি ক্যাচও ধরেছিলেন তিনি। উল্লিখিত মাদ্রাজ টেস্টে করা ২৩১ই ছিলো তাঁর প্রথম শ্রেণীর ম্যাচেও করা সর্বোচ্চ স্কোর।
ভারত টেস্ট খেলা শুরু করার ১৪ বছর পরে ২২ জুন ১৯৪৬ তারিখে ২৯ বছর বয়সে তিনি লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন জীবনের ১ম টেস্ট। আর ১৯৫৯-এর ৬ই ফেব্রুয়ারি দিল্লীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জীবনের ৪৪তম তথা শেষ টেস্ট খেলার সময় তাঁর বয়েস হয়েছিলো ৪২ বছর। আগেই বলেছি যে ১৯৫৬-তে বিশ্ব-রেকর্ড করার সময়ে তিনি ছিলেন ৩৯ ছুঁইছুঁই। এই কমিটমেন্টই ছিলো তাঁর ক্রিকেটপথের পাথেয়।
২১ আগস্ট ১৯৭৮ তারিখে ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে ১৯৭৩ সালে তিনি পদ্মভূষণ উপাধি পেয়েছিলেন। বিসিসিআই তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ভারতের অনূর্দ্ধ-১৯ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা তাঁর নামে নামকরণ করে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের দক্ষিণ দিকের একটি রাস্তাও পরিচিত তাঁরই নামে। তাঁর জন্মশহর জামনগরে তাঁর একটি মূর্তিও বহন করছে তাঁর স্মৃতি। তিনি এবং তাঁর কিছু সহযোদ্ধা সেই শুরুর দিকের “কঠিন সময়ে” ভারতীয় ক্রিকেটকে যেভাবে লালনপালন করেছিলেন, তার অন্যথা হলে আজ ভারতীয় ক্রিকেটকে হয়ত বর্তমান রূপে দেখা যেতনা। তাঁর উত্তরাধিকারেও তিনি প্রবাহিত করেছিলেন ক্রিকেটকে। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে অশোক মানকড় ছিলেন ভারতের টেস্ট খেলোয়াড় আর অতুল ও রাহুল মানকড় ছিলেন ভারতের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড়।
আজ ১০৫ বছর পেরিয়ে তাঁর ১০৬তম জন্মদিন। ১৯১৭-র ১২ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের বম্বে প্রেসিডেন্সির জামনগরে জন্মানো সেই জাদুময় ক্রিকেটারের নাম মুলবন্তরাই হিম্মতলাল মানকড় ওরফে ভিনু মানকড়।
শুভ জন্মদিন, মুলবন্তরাই হিম্মতলাল মানকড়