ব্র্যাডম্যানের পড়শিরা- দ্বিতীয় পর্ব

ব্র্যাডম্যানের যুগে জন্মালে হয়তো মান্য তালিকায় প্রবেশের ছাড়পত্রই পেতেন না ভোজেস। যেমন পাননি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বার্নস। না, কোনও ক্রিকেটীয় দক্ষতার ভিত্তিতে হচ্ছে না কথাটা। আসলে বিশ্বযুদ্ধের জন্য নষ্ট হওয়া বছরগুলি বাদ দিয়েও বিগত শতাব্দীর তিন বা চারের দশকে সতেরো মাসে কুড়ি টেস্ট খেলার সুযোগই ছিল না। বার্নসই যেমন দশ বছরে (১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮; এক্ষেত্রে যদিও অনেকগুলো বছরই নষ্ট করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) খেলেছিলেন মোটে ১৩ টেস্ট। এবং মাত্র একটি ইনিংসের খামতিতে তাঁর জায়গা হয় না মান্য তালিকায়। নয়তো দ্বিতীয় স্থানটি বরাদ্দ থাকত তাঁর (গড় ৬৩.০৫) জন্যই। সেটাই বরং মানানসই হত বেশি। যেহেতু প্রথম শ্রেণির গড়েও বার্নস (৫৪.১১) এগিয়েই আছেন ভোজেসের তুলনায়। তাও আঢাকা পিচ ও জুরাসিক যুগীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার যুগের প্রতিনিধি হয়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ বোলারদের মোকাবিলা করেও।

    দেখা যাচ্ছে মান্য তালিকায় ডনের নিকটতম পড়শির গড় বাষট্টির কাছাকাছি। এই তালিকায় থেকে এবং না থেকে আজ অবধি টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় ন্যূনতম ষাট গড় ছুঁতে পেরেছেন ক’জন পুরুষ? ব্র্যাডম্যানকে ধরে সংখ্যাটা পঁচিশ। নামগুলির উপর আতশকাচ ধরলে চমকে উঠতে হয় রীতিমতো। কল্পকাহিনির চাইতেও বেশি বিস্ময় যে জমে থাকতে পারে খোদ বেরঙা জীবনেই, মালুম হয় ব্র্যাডম্যানের পড়শি এই চব্বিশটি নামের কোনও কোনওটির দিকে তাকালে। প্রথম শ্রেণির খেলাতেও শতরান না থাকা বা বিশেষজ্ঞ পেসার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের আসরে পা রাখা মানুষজনের নামও দিব্যি জ্বলজ্বল করছে এই ভিড়ে। একটা কথা যদিও এখানে বলে নেওয়া দরকার প্রসঙ্গত। একটি বিশেষ মাইলফলককে কিছু মানুষের ছুঁতে পারা বা না পারার প্রশ্ন থেকে সূত্রপাত বর্তমান নিবন্ধটির। ব্যক্তিবিশেষের প্রতিভা, মেধা বা উৎকর্ষ বিষয়ে কোনও রায় এখান থেকে পাওয়া যাবে না। শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে প্রত্যক্ষদর্শীদের সিংহভাগই যাঁকে বসিয়েছেন খোদ ব্র্যাডম্যানেরও আগে সেই ভিক্টর ট্রাম্পারের টেস্ট গড় (৩৯.০৪) ষাটের ধারেকাছেও পৌঁছয়নি কোনওকালে।

    গ্যানটমের মতোই ত্রিনিদাদের মানুষ ভিক্টর স্টলমেয়ার। ডানহাতি ব্যাটার। দরকারে করতে পারতেন লেগস্পিনও। একটিই টেস্ট খেলেছিলেন জীবনে। বিশেষ একটি টেস্ট। ১৯-২২ অগাস্ট, ১৯৩৯ তারিখের মধ্যে ওভালে অনুষ্ঠিত খেলাটি (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৭৪) শেষ হওয়ার এক পক্ষকালের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ক্যারিবিয়ানদের সেবারের ইংল্যান্ড সফরের তৃতীয় তথা শেষ টেস্টই স্রেফ নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব পৃথিবীতে আয়োজিত অন্তিম টেস্টম্যাচও ছিল খেলাটি। বিশ্বযুদ্ধ শেষে আবার যতদিনে ক্যারিবিয়ানরা ফিরেছিল টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় ততদিনে বাইশ গজকে বিদায় জানিয়েছেন ভিক্টর। অনুজ জেফ্রি স্টলমেয়ার যদিও পাঁচের দশকে অর্জন করেছিলেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়কত্ব। যাক, অভিষেক টেস্টে অল্পের জন্য শতরান ফসকালেও সেই এক ইনিংসের সূত্রেই ৯৬.০০ গড় নিয়ে দীর্ঘ তেষট্টি বছর ভিক্টর থেকে গিয়েছিলেন ব্র্যাডম্যানের নিকটতম পড়শি হয়ে।

    ২০০২ মরশুম। খালেদ মাসুদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব ময়দানে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৬১১) সনৎ জয়সুরিয়ার শ্রীলঙ্কা টপ-অর্ডারে খেলিয়ে দিল ঘরোয়া ক্রিকেটে ভদ্রস্থ রান করে চলা নভিদ নওয়াজকে। প্রথম ইনিংসে ২১-এ থামলেও দ্বিতীয় ইনিংসে দান ছাড়ার মুহূর্তে যিনি অপরাজিত ছিলেন ৭৮-এ। তারিখটা ছিল জুলাই ৩০, ২০০২। এক টেস্ট খেলা ন্যাটা নভিদ সেই থেকে ৯৯.০০ গড় নিয়ে হয়ে আছেন ব্র্যাডম্যানের নিকটতম পড়শি।

    অতি সম্প্রতি ডারবানে সাঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের ২০২১-২২ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রথম টেস্টটি (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২,৪৬০)। আজ অবধি নথিভুক্ত হওয়া এই ২,৪৬০-টি স্কোরকার্ডের নিরিখে ষাটোর্ধ্ব গড়ে মান্য তালিকায় অবস্থান করছেন মোট পাঁচজন পুরুষ। ব্র্যাডম্যান ও ভোজেসকে ব্যতিরেকে পঞ্চপাণ্ডবের অবশিষ্ট প্রতিনিধিরা হলেন যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রেম পোলক (৬০.৯৭), ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলি (৬০.৮৩) ও ইংল্যান্ডের হারবার্ট সাটক্লিফ (৬০.৭৩)। প্রসঙ্গত, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এঁদের ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ৫৪.৬৭, ৬৯.৮৬ ও ৫২.০২।

(ক্রমশ)