টেস্ট ক্রিকেটের রাজ্যপাটে বসাই হল না কিংয়ের

না, কেউ সেভাবে মনে রাখেনি তাঁকে। তবে একটু প্রবীণ মানুষদের কেউ কেউ হয়তো অতীতে গভীর ডুব দিলে স্মৃতির শ্যাওলার সঙ্গে খুঁজে পেতেও পারেন তাঁর নাম। কারণ, ষাটের দশকের গোড়ার দিকে আমাদের দেশে যখন পেস বোলিংয়ের আকাল চলছিল, তখন জোনাল ম্যাচ খেলার জন্য যে চারজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসারকে এখানে আনা হয়েছিল পেস বোলিং খেলার অভ্যাস গড়ার জন্য, তার মধ্যে রয় গিলক্রিস্ট, চেস্টার ওয়াটসন আর চার্লি স্টেয়ার্সের সঙ্গে তিনিও এসেছিলেন। আমাদের আরও মনে আছে কারণ, সেই পেস বোলারটি পূর্বাঞ্চলে বাংলার হয়েই খেলেছিলেন। এবং ইডেনে হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে ক্ষ্যাপাটে গিলক্রিস্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাদের প্রতি-আক্রমণের প্রধান মুখ ছিলেন। তাঁর নাম লেস্টার কিং।

যিনি অনুশীলন দিতে এসেছিলেন, কেমন ছিল সেই লেস্টার কিংয়ের নিজের টেস্ট জীবন? ১৯৬২ সালে কিং ভারতের বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম টেস্টটি খেলতে নামেন জ্যামাইকায়। সিরিজের শেষ ম্যাচ ছিল সেটা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে গ্যারি সোবার্সের ১০৪ সত্ত্বেও একদিনেই ইনিংস শেষ করে ২৬৩ রানে। সেই দিনই ব্যাট করতে নামে ভারত। একদিকে সুখ্যাত ফাস্টবোলার ওয়েসলি হল থাকলেও অন্য প্রান্তে ক্যাপ্টেন ফ্রাঙ্ক ওরেল নিজে বা সোবার্সকে না করিয়ে নতুন বলটি তুলে দেন টেস্টে প্রথম খেলতে-নামা লেস্টার কিংয়ের হাতে। অধিনায়কের আস্থার অমর্যাদা করেননি কিং। জটায়ুর ‘সাহারায় শিহরণ’ স্টাইলে জীবনের প্রথম টেস্টের প্রথম চার ওভারেই গতির ঝটকায় ছিন্নভিন্ন করে দেন ভারতীয় ব্যাটিয়ের টপ-অর্ডার। এবং তাঁরা কারা? ডাকসাইটে এম এল জয়সীমা (৬), বিজয় মেহরা (৮), সেলিম দুরানি (৬), বিজয় মঞ্জরেকার (০), চান্দু বোরদে (০)! এক নবাগত পেসারের তান্ডবে প্রথম দিনের শেষেই ভারত ৩৩/৫! ভারত শেষ পর্যন্ত ১৭৮ রান করলেও কিং ৫ উইকেট পান মাত্র ৪৬ রানে। ভারত সেই টেস্টে ১২৩ রানে হেরে যায়। কিং দ্বিতীয় ইনিংসেও ২টি উইকেট তোলেন ১৮ রানে। ২৩ বছর বয়সী ভবিষ্যতের স্বপ্ন-দেখা এক তরুণ পেসারের পক্ষে আদর্শ শুরুই বলতে হবে। কিন্তু … যেখান থেকে ‘টেক-অফ’ করার কথা, সেখানেই ধাক্কা খায় তাঁর ভবিষ্যতের উড়ান। ওয়েস হলের সঙ্গে পার্টনার হিসাবে জুড়ে যায় চার্লি গ্রিফিথের মতো বিশ্ব ক্রিকেটকে ত্রস্ত করে-তোলা এক ভয়ঙ্কর পেসারের নাম (গ্যারি সোবার্স তো ছিলেনই)। ফলে অমন দুর্দান্ত চোখ-ধাঁধানো পারফর্ম্যান্সের পরেও লেস্টার কিং জীবনের দ্বিতীয় টেস্ট ক্রিকেট খেলার ডাক পান ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জর্জটাউনে। কিন্তু ততদিনে তাঁর চোখের সামনে দিয়ে কেটে গেছে প্রায় ৬ বছর। আর কানের পাশ দিয়ে বেজে গেছে ২২ টেস্টের মন ভেঙে-দেওয়া বাজনা।সেই টেস্টেও ২ টি উইকেট পেয়েছিলেন কিং। কিন্তু অজানা কারণে আর কখনও টেস্ট ক্রিকেটের সিংহদ্বার তাঁর জন্য খোলেনি! না, নামের পদবী যাই হোক না কেন, ক্রিকেটের রাজ্যপাটে আর বসাই হয়নি কিংয়ের।

হ্যাঁ, এত কথা মনে করানোর একটাই কারণ, লেস্টার কিং আজকের তারিখেই (১৩ এপ্রিল) জীবনের ‘প্রথম’ টেস্টটি শুরু করেছিলেন ‘জ্যামাইকা জমজমাট’ করে দিয়েই।