ভিনু মানকড়কে নতুন করে চিনলাম

রাজ সিং দুঙ্গারপুরের কাছ থেকেই শুনেছিলাম, এত আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে ছিলেন যে রাস্তার বেঞ্চিতে শুয়ে থাকতে হতো আর ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কখনো জিমখানার মাঠে বা কখনো ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামের টয়লেটে স্নান করে ক্রিকেট পোষাক পরে নেটে ঢুকে যেতেন। ভিনু মানকড় সম্পর্কে এইরকম প্রচুর গল্প মুম্বই ক্রিকেট মহলে শুনতে পাওয়া যায়। তারপর যখন দেশের হয়ে খেলতে শুরু করলেন তখন তো তিনি স্টার। কিন্তু কখনই বিলাস বা বৈভবের মধ্যে নিজেকে সঁপে দেননি। অতীত ভুলতে পারেননি বলেই হয়তো মাটিতে পা রেখে চলতেন। কিছুদিন আগেই তাঁর ১০৫তম জন্মদিন গেল এবং মুম্বই ক্রিকেট মহলে ঢুঁ মেরে দারুন এক মুহূর্তের ছবি পেলাম। আশা করি “উইলোর উইল”-এর সম্পাদক পার্থ প্রতিম রায় এটা ছাপানোর বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করবেন না।

লর্ডসের ড্রেসিংরুমে দু’বার ঢোকার সৌভাগ্য হয়েছিল। প্রথমবার, ১৯৮৭ তে এমসিসি বাইসেন্টিনারি টেস্টের সময়ে সুনীল গাভাসকারের আমন্ত্রণে। এবং দ্বিতীয়বার ২০০২ সালে সৌরভ গাঙ্গুলি নিয়ে গিয়েছিলেন। ‘৮৩ তে বিশ্বকাপ জয়ের পরে কোথায় কোথায় ভাঙরা নাচ হয়েছিল, শ্যাম্পেন স্নানের জায়গা, লর্ডসের ব্যালকনি, ন্যাটওয়েস্ট জেতার পর সৌরভের জার্সি ওড়ানো – সব মনে আছে। কিন্তু কি করে যে এইরকম একটি বিশেষ অনার বোর্ডেটা দেখলাম না, জানতে পেরে হতাশ লাগছে।

স্যর গারফিল্ড সোবার্স, কিথ মিলার এবং ভিনু মানকড়ের মধ্যে মিল কোথায়?‌ তিন দেশের তিন কৃতী সন্তানই অল-রাউন্ডার। এ ছাড়া মিল খুব বেশি নজরে পড়ে না। ১২ এপ্রিল, ভিনুর ১০৫তম জন্মদিনে পাওয়া গেল সম্পূর্ণ অজানা একটি তথ্য। লর্ডসে খেলা বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে এই ৩ জনের নাম ক্রিকেটের মক্কার ড্রেসিংরুমে ঝলমল করছে আলাদা একটি বোর্ডে। এই ৩ জন ক্রিকেটারই লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছেন। আবার ৫ উইকেটও পেয়েছেন। এমনিতেই লর্ডসে সেঞ্চুরি পাওয়া ব্যাটারদের জন্য রয়েছে আলাদা অনার বোর্ড। তেমনই রয়েছে ৫ উইকেট পাওয়া বোলারদের জন্য আর একটি বোর্ড। এই ৩ ক্রিকেটারের নাম রয়েছে ২টি বোর্ডেই। সেই সঙ্গে আলাদাভাবে রয়েছে অন্য একটি বোর্ডে।  যাঁরা লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছেন ও ৫ উইকেট পেয়েছেন তাঁদের জন্যই ওই বিশেষ বোর্ড।

১৯৫২ সালে বিলেত সফরে লর্ডসে ভিনু মানকড়ের রান ছিল ৭২ ও ১৮৪ এবং নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। ভিনু মানকড়ের কথা উঠলেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঙ্কজ রায়ের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ৪১৩ রানের কথা ভেসে ওঠে।

অতি সম্প্রতি ভিনুর ছোট পুত্র রাহুল মারা গেলেন। এখন ভিনুর তিন ছেলেই আর নেই। এমনকি, চলে গেছেন স্ত্রী মনোরমাও। মঙ্গলবার সকালে ওঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়া গেল একটি অসাধারণ ছবি। মাটিতে বসে ভিনু খাচ্ছেন। কোলে ক্রন্দনরত রাহুল। বাঁদিকে অশোক এবং উল্টোদিকে অতুল। খাবার পরিবেশন করছেন স্ত্রী মনোরমা। টেবিল–‌চেয়ারে খাওয়ার যুগ তখনও ছিল বিত্তশালী পরিবারে। জীবনসংগ্রাম করতে করতে বিশ্বতারকা হয়ে উঠলেও, জীবনযাত্রা ছিল সাধারণ। শেকড়টা ভোলেননি কখনও, এই ছবি যেন তারই প্রামাণ্য দলিল।