বহুকাল আগে যখন সেনা (সাউথ আফ্রিকা,ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া) দেশগুলিতে খেলা থাকতো ভারতের তখন বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পেস বোলিং এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তৈরী হওয়ার পাশাপাশি অদৃশ্য একটা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াতো ভারতীয় দল ও সমর্থককুলের মধ্যে। প্রশ্নটি হলো আমাদের দেশে কবে সেইরকম মাপের একজন পেসার আসবে যে বিদেশী শত্রুর দুর্গে গিয়ে ভয় ধরাবে তাদের মনে।
এরপরে আসেন ‘পেস বোলার্স ক্যাপ্টেন’ বিরাট কোহলি। তার আমলে ২০ উইকেট নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া বাড়াতে পেস ব্যাটারীকে করা হয় সমৃদ্ধশালী এবং ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি এবং জসপ্রিত বুমরাহকে নিয়ে গঠিত হয় একটি কঠিন বোলিং লাইন আপ। পরে মহম্মদ সিরাজ আসায় আরো শক্তিশালী হয় সেই অ্যাটাক।
চলতি আইপিএলে ঋদ্ধিমান সাহাকে ১৫৩ কিলোমিটার স্পিডে আসা ডেলিভারিতে বোল্ড করাই হোক বা হার্দিক পাণ্ড্যর হাতে চোট পাওয়ানোই হোক, সবদিক থেকেই যেন রোহিত শর্মা-রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছেন কাশ্মীরি যুবক। স্পিডোমিটারে প্রতিদিন নিয়ম করে ১৪০ এর ওপরে তাঁর বোলিং স্পিড যাওয়া যেন ভারতীয় বোলারদের কাছ থেকে একেবারেই অপ্রত্যাশিত একটা জিনিস এবং সেটাই করে দেখাচ্ছেন উমরান।
কেরিয়ারের শুরুটা খুব ভালো হয়নি তাঁর। কাশ্মীরে তাঁর জুনিয়র পর্যায়ে ভালো পারফরমেন্স হওয়ার পর বাংলার বিরুদ্ধে ভিডিওকন মাঠে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ম্যাচে অনুষ্টুপ মজুমদার-শাহবাজ আহমেদের কাছে প্রবল মার খেয়ে তাঁর বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ১০-০-৯৬-০। কিন্তু এরপরে গত এক বছরে সম্পূর্ণ পরিস্থিতির রদবদল। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ নেট বোলার হিসেবে নিয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ দলে অন্তর্ভুক্তি করিয়ে আইপিএল অভিষেক করায় তাঁর। সেই আইপিএলে পারফরমেন্স করে সরাসরি রিটেনশন লিস্টে নিয়ে আসে তাঁকে। এরপর চলতি আইপিএলে তাঁর বীরবিক্রমের কথা তো অজানা নয় কারোর। এখনও অবধি ১৫ উইকেট নিয়ে পার্পল ক্যাপের লিস্টে রয়েছেন উমরান।
সামনের টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। নিশ্চিতভাবে সেখানকার শক্ত মাটিতে তাঁর গতির উপকারিতা তাঁকে নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করবে নির্বাচকদের। পাওয়ার-প্লে ওভারের বাইরে বেরিয়ে মিডল ওভারগুলিতে কিন্তু বেশ উপযোগী হতে পারেন মালিক। প্রাক্তন কিউই অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেত্তোরি বলেছেন “বলের ওই জোর ব্যাটারদের মনে দুশ্চিন্তা বাড়ায়, শুধু টেল-এন্ডার নয় বরং সবার জন্যই। আমরা খুব বেশী বোলারদের ১৫৩-১৫৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পিডে বল করতে দেখিনা। এটা দুর্দান্ত পেস এবং খুব বিরল দেখা যায়। একধারে এতো জোরে বল শোয়েব আখতার, ব্রেট লি এবং শন টেট করতো। এটাই একটা এক্স ফ্যাক্টর যোগ করে ওর (উমরানের) খেলায়।”
টিটোয়েন্টির সমাধানসূত্র তো একটা হলোই। এবার ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলে চুটিয়ে পারফর্ম করে টেস্ট ক্রিকেটের দরজায় কড়া নাড়ার পালা। সেটাও আশা করি বেশিদূর নয়। যতই টেস্ট ক্রিকেটের দরজা সন্নিকটে আসে ততই তো ভালো।
উমরানের জন্যও, ভারতের জন্যও।