তারিখটা পয়লা এপ্রিল হলে তাও কিছুটা ভাবার অবকাশ ছিল। ‘এপ্রিল ফুল’ না তো? কিন্তু দিনটা তো পয়লা জুন। তাহলে? তাঁর একটা টুইট বুধবার বিকেলে আসমুদ্রহিমাচলকে পুরো দুলিয়ে দিল। জল্পনার ডালপালা বিস্তার করল অত্যন্ত দ্রুত। বাংলার তো বটেই, সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও তুমুল আলোড়নের ঢেউ উঠল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির সেই টুইট ঘিরে। কী লিখেছিলেন মহারাজ? ‘১৯৯২ সালে আমার ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৩০ বছর পূর্ণ হল। এই সময়ে ক্রিকেট অনেক কিছু দিয়েছে আমাকে। আপনাদের সকলের সমর্থন পেয়েছি। এই সফরের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। এবার আমি পরিকল্পনা করছি নতুন কিছু শুরু করার। আমার আশা, অনেক মানুষকে সাহায্য করতে পারব। এটাও আশা করব, জীবনের নতুন অধ্যায়ে এভাবেই আপনারা আমাকে সমর্থন করবেন।’
এই টুইটে দুটো দিক খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক, ৩০ বছরের ক্রিকেট জীবন অনেক কিছু দিয়েছে সৌরভকে। এবার প্রশ্ন, তাহলে কি ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি? দুই, সৌরভের পরিকল্পনা, নতুন কিছু শুরু করার। এখানেও প্রশ্ন এবং সবথেকে বেশি কৌতুহলের যেটা, তা হল কী শুরু করতে চলেছেন তিনি? এই দুই প্রশ্নই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ের চেহারা নিল। কেউ কেউ ইঙ্গিত পেলেন সৌরভ বিসিসিআই সভাপতির পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। যদিও তাঁর টুইটে এমন কোনও আভাস কোথাও নেই। পরে সংবাদ সংস্থাকে বোর্ড সচিব জয় শাহ জানিয়ে দেন সভাপতি পদে ইস্তফা দিচ্ছেন না সৌরভ। সত্যিই তো, ক্রিকেট সৌরভের প্যাশন। প্রিয় খেলা থেকে তিনি সরে থাকবেন দূরে, এটা ভাবা একেবারেই মূর্খামি। কিন্তু সবথেকে বেশি যে গুঞ্জনটা উঠল, দাদা কি তাহলে সত্যিই রাজনীতিতে যোগ দিতে চলেছেন? এই গুঞ্জনটা নতুন নয়। সৌরভ যখন ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদে বসেন, বোর্ডের ‘দ্বিতীয়’ ব্যক্তি হয়ে এসেছিলেন জয় শাহ। তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে। তখন থেকেই সৌরভের বিজেপি ঘনিষ্ঠতার চর্চা শুরু। তাঁকেই আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে বিশেষ পছন্দ করেন, তাও কারোর অজানা নয়। সম্প্রতি কলকাতায় এসে বিজেপি–র রাজ্য নেতাদের নিয়ে সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজ সেরেছিলেন অমিত শাহ। আবার পরের দিনই এক অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পাশে বসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন সৌরভ। অতীতে বাম জমানাতেও দেখা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল। সিপিএমের প্রভাবশালী মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক অনেকটা পারিবারিক। স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতির আঙিনায় সৌরভের বিচরণ খুবই স্বাচ্ছন্দ্য। তাঁর স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলি জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিতে যোগ দিলেও মহারাজ সাফল্যের ছাপ রাখবেন।
এই আবহেই বুধবারের টুইট সৌরভের রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা বাড়িয়ে দেয়। অতি উৎসাহীরা বলতে শুরু করে দেন, সামনেই দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। তাহলে কি দাদা ...?! আইপিএল ফাইনাল উপলক্ষে আমেদাবাদে ছিলেন সৌরভ। তখন জয় শাহের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনার খবর আমাদের কানে এসেছে। কেউ কেউ এসব শুনলে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে ভালবাসেন। সৌরভের লক্ষ্য যে আইসিসি–র সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়া, সেটা তো এখন ওপেন সিক্রেট। তাহলে এই টুইটের মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চাইলেন মহারাজ? দিনের শেষে উত্তরটা কিন্তু খুব মজার। আসলে সৌরভের গোটা টুইটটাই একটি বিজ্ঞাপনী প্রচারের অংশ! বুধ–বিকেল থেকে যারা জল্পনা তৈরি করলেন, জল্পনা রটালেন, জল্পনায় বাতাস দিলেন, জল্পনার গোড়ায় জল ও সার দিলেন, দিনের শেষে তাদের হাতে রইল পেন্সিল। শুধুই পেন্সিল।