শেষ হয়েছে এবারের আইপিএল। ফাইনালে রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গুজরাট টাইটান্স। দীর্ঘ দুই মাস ধরে চলা এবারের আইপিএলের সবচেয়ে বড় আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়েই এই প্রতিবেদন।
এবারের আইপিএলে আলোচনার মধ্যে যে নামটা সবচেয়ে আগে আসবে তিনি হলেন বিরাট কোহলি। বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও কোহলি ব্যাটিংয়ে কোন উন্নতি হয়নি। ২০১৯ সালের শেষ দিকের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ব্যাট থেকে আসেনি কোনও সেঞ্চুরি ।
তারপর থেকে রানের খরায় ভুগছেন প্রাক্তন এই ভারত অধিনায়ক। এবারের আইপিএল তাঁর ভুলে যাওয়ার মতোই। ১৬ ম্যাচে ২২.৭৩ গড়ে ৩৪১ রান করেছেন, তবে ওপেনিংয়ে নামা কোহলির স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১১৫.৯৮। দুই ফিফটির একটি পূর্ণ করতে তাঁর লাগে ৪৫ বল। গুজরাটের বিপক্ষে ৫৪ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিলেও প্লে-অফে নিষ্প্রভই হয়ে ছিলেন।
আইপিএলে এবার কোহলির মতো ভুগেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক অসাধারণ খেলোয়াড় তিনি। এবার আইপিএলে তাঁর ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। ১৯.৬৩ গড়, ১০০-এর নিচে (৯৩.৫০) স্ট্রাইক রেট।
কোহলি ও উইলিয়ামসন এর মত ব্যাটাররা এবার ব্যর্থ হলেও এবার আইপিএলে অতিমানবীয় হয়ে উঠেছিলেন বাটলার ও চাহাল। বলা যেতে পারে এবার আইপিএলে তাঁরা নিজেদেরকে ‘ফিরে পেয়েছেন’।
সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহকের তালিকায় দুইয়ে থাকা লোকেশ রাহুলের সঙ্গে জস বাটলারের ব্যবধান ২৪৭। ৫৭.৫৩ গড়, প্রায় ১৫০-এর কাছে স্ট্রাইক রেট—এ মরসুমে বাটলারের পারফরম্যান্স ছিল এমন অতিমানবীয়ই। গত মরসুমে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরই প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন এই ইংলিশ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, এবার ছুঁয়েছেন বিরাট কোহলির এক মরসুমে চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ৮৬৩ রান নিয়ে, আইপিএলের এক মরসুমে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।তাই সর্বোচ্চ রানের অরেঞ্জ ক্যাপ গেছে বাটলারের কাছে।
আর সর্বোচ্চ উইকেটের ‘পার্পল ক্যাপ’ গেছে তাঁরই সতীর্থ যুজবেন্দ্র চাহালের কাছে। নিলামের অন্যতম ‘চমক’ বেঙ্গালুরুর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার সঙ্গে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় চাহাল দৌড়াচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে হাসারাঙ্গাকে টপকে গেছেন চাহাল।
এবার আইপিএলে চমকের আর এক নাম হার্দিক পান্ডিয়া।
যিনি এবারের ফাইনালের সেরা বোলার। হার্দিক পান্ডিয়া ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে প্রতিপক্ষের সেরা তিন ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন। অবাক করবার মত পারফরম্যান্স। মুম্বাইয়ের হয়ে সর্বশেষ দুই মরসুমে কোনো বোলিংই করেননি পান্ডিয়া। আইপিএলের আসার আগে তাঁর ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তা সত্ত্বেও তাঁর এই পারফরম্যান্স অবাক করছে।
সেই পান্ডিয়ার হাত ধরেই এল তাঁর এবং তাঁর দলের সাফল্য।
উল্লেখ্য, এর আগে কখনোই সিনিয়র পর্যায়ে কোনো দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না পান্ডিয়ার। দলের হয়ে ব্যাটিংয়েও নতুন ভূমিকা ছিল তাঁর — চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে। এর আগে মুম্বাইয়ের হয়ে সাতটি মরসুমে ১৫৩.৯১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন পান্ডিয়া, এবার সেটি ছিল ১৩১.২৬। মুম্বাইয়ে প্রতি ৯.৮টি বলে একটি করে ছয় মেরেছেন, এবার একটি ছয়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন ৩০.৯ বল। এসব পরিসংখ্যানই বলে দেয়, চারে ব্যাটিংয়ের জন্য দায়িত্বটা অন্য রকম ছিল তাঁর। ৪৮৭ রান করেছেন ৪৪.২৭ গড়ে—পান্ডিয়া যে এবারের আইপিএলে রীতিমতো সফল এটা বলাই যায়।
এই সঙ্গে এও বলা যায়, ভারত আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একজন অল-রাউন্ডার পেয়ে গেল!
আর এবারের আইপিএলে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হলেন উমরান মালিক। এই মুহূর্তে তিনি ১৫৭.৩ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন। তাঁর এই গতির ঝলক দেখে দেশ ও বিদেশের বিশেষজ্ঞরা উমরানের প্রশংসায় মেতেছেন। ভারতের মতো দেশ থেকে উমরানের মত একজন দুরন্ত গতির বোলার উঠে আসা আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক।
এবার টুর্নামেন্ট জুড়েই গতির ঝলক দেখিয়ে হায়দরাবাদের এই ফাস্ট বোলারের ঝুলিতে গেছে ২২টি উইকেট। আইপিএল শেষ হওয়ার আগেই অবশ্য পুরস্কারও পেয়ে গেছেন উমরান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় সাফল্য পেলেই তাঁর সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের দরজা খুলে যাবে।