আইপিএলের ‘এল-ক্লাসিকো’। জনপ্রিয়তার ভারে স্প্যানিশ ফুটবল থেকে ধার করা এক অতিপরিচিত শব্দবন্ধ। তবে বিষয়টা শুধু শব্দবন্ধ ধার করাতেই থেমে থাকেনি, বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের মতো এতেও ছিল মুখরোচক বিতর্কের সম্যক উপস্থিতি। ওই যে কথায় আছে না, “কান টানলে মাথাও আসে”।
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস বনাম চেন্নাই সুপার কিংস। আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম দুটি টিম। দুজনের সমষ্টিগতভাবে জেতা কাপের হিসেব করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ‘নয়’। ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এ শুধু নিছক দুটি দলের লড়াই নয় বরং এ লড়াই রোহিত শর্মা বনাম মহেন্দ্র সিং ধোনির। ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বনাম প্রাক্তন অধিনায়কের।
এমন এক হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ, যেখানে পান থেকে চুন খসলেই বিপদ সেখানে কিনা প্রযুক্তিগত ত্রুটির ঘটনা?
টাটা আইপিএল ২০২২ এর ৫৯তম ম্যাচে ওয়াংখেড়েতে খেলা শুরুর মিনিট তিরিশেক আগে নিয়মমাফিক টসের জন্য মাঠে পৌঁছে গিয়েছিলেন দুই অধিনায়ক। কিন্তু পরিস্থিতি বিঘ্নিত হয় বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে। মাঠের মধ্যে একটি ফ্লাডলাইট বন্ধ অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। এই পরিস্থিতির সামাল দিতে খরচ হয়ে যায় বেশ কয়েকটি মূল্যবান মিনিট। তারপর পরিস্থিতি সাম্যাবস্থায় এলে নিয়মানুযায়ী টস করা হয়।
কিন্তু পিকচার তখনও বাকি ছিল।
ম্যাচের দ্বিতীয় বলে ড্যানিয়েল স্যামস্-এর আক্রমণ কনওয়ের প্যাডে আঘাত করলে সহজ আবেদনেই আম্পায়ার আউটের নির্দেশ দেন। অথচ খালি চোখে এটিকে স্পষ্ট ‘লেগ স্টাম্প মিসিং’ চিহ্নিত করা গেলেও কনওয়ে ডিআরএস-এর সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন না। কারণটা অদ্ভুত। আম্পায়ার জানান বিদ্যুৎ সরবাহের আউটলেটে ‘শট-সার্কিট’ হওয়ার জন্য ডিআরএস সিস্টেম তখনও ঠিকঠাকভাবে ব্যবস্থা করা যায়নি। কনওয়েকে যেন ‘জেন্টলম্যানস্ গেম’ এর দোহাই দিয়ে প্রতিবাদহীন হয়ে বেরিয়ে যেতে হয়। এই ডিআরএস পরিষেবা দশ বল পর আবার চালু হতে দেখা যায় রবিন উত্থাপ্পার রিভিউ নেওয়ার পর থেকে।
ব্যাটিং-বিপর্যয়ের দরুন সিএসকে ১৬ ওভারেই তাদের রাজ্যপাট গুটিয়ে ফেলে এবং মুম্বাইকে মাত্র ৯৮ রানের টার্গেট দেয়। অতিপ্রত্যাশিতভাবে মুম্বাই ৫ উইকেটের বিনিময়ে ১৫ ওভারের আগেই ম্যাচ জিতে নেয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ‘টেকনিক্যাল এরর’ কী ইচ্ছাকৃত? এর দায় কে নেবে? পেশাদার টেকনিশিয়ানদের গাফিলতির (দায় যদি সত্যিই তাঁদের হয়ে থাকে) খেসারত দিতে হবে একজন প্লেয়ারকে! সমস্যার সমাধান করে ম্যাচটা কী আর দশ-পনেরো মিনিট পরে শুরু করা যেত না? ধরা যাক টসের পর বৃষ্টি নামল,তাহলেও কি ওই বৃষ্টির মধ্যে ‘খেলা হবে’ বলে খেলা শুরু হতো? নাকি ব্রডকাস্টারদের তরফে তাড়াতাড়ি ম্যাচ শুরু করার বিষয়ে চাপ ছিল!
একজন গুরুত্বপূর্ণ ওপেনারকে দু’নম্বর বলে হারানো একটা টিমের পক্ষে অপূরণীয় ক্ষতি। এ ক্ষতি শুধুমাত্র স্কোরবোর্ডে টিমের পরিসংখ্যানের নয় বরং আত্মবিশ্বাসেরও। মাথায় রাখতে হবে আজকের ম্যাচটা ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের প্লে-অফে যাওয়ার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার ম্যাচ। কথায় বলে ব্যাটারের এক-বল, বোলারের ছ’বল।
কে বলতে পারে আজ কনওয়ে আউট না হলে ফলাফল অন্যরকম হতো না? ওই যে ‘হবে বলছি না হতেও তো পারে’। অন্ততঃ প্রোব্যাবিলিটি তাই বলে। আর কম্পিটিটিভ স্পোর্টসে এই সূক্ষ্ম প্রোব্যাবিলিটির সুযোগ একটা পেশাদার টিম-ম্যানেজমেন্ট ছাড়বে কেন?
আর তার চেয়েও বড় কথা আউট হওয়া ব্যাটার যদি কোহলি বা ধোনি হতেন, তাহলে তো বিতর্ক এতক্ষণে আকাশ স্পর্শ করতো। শুরুর দিন থেকে আজ অবদি আইপিএল কোনোসময়ই বিতর্কের অভাব রাখেনি। তবে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্লে-অফ বা ফাইনালে হলে এত সহজে বিতর্ক এড়াতে পারবেন তো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা?