৩৪টি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিকের কিটি-তে আজ ঢুকে পড়লো আরো “৫১ রান”। ১৯৭১-এর আজকের তারিখ, ৬ই মার্চে ত্রিনিদাদের পোর্ট অফ স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জীবনের প্রথম টেস্টম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, সুনীল গাভাসকার। সেটি ছিল ওই সিরিজের ২য় টেস্ট।
১৯৭০-৭১-এ অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় দোদুল্যমান ভারত তখন সবক্ষেত্রেই পর্যুদস্ত বা আজকের ভাষায় বলতে গেলে “হারতে হারতে হারান”। তখন, সেই অবস্থায় প্রায় নবজাগরণের মত ১৯৭১-এ নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট, বিদেশের মাটিতে। যার শুরু হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি থেকে এবং তার এক অন্যতম সেরা কারিগর ছিলেন সুনীল গাভাসকার। তখন কার্যত কোন নায়কহীন দেশ ভারত তাঁকেই নায়ক মেনে নিয়েছিল সেই সময়।
অনুশীলন ম্যাচে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো-র বিরুদ্ধে ১২৫ ও ৬৩ রান করে দলে ঢোকার দরজায় ধাক্কা মেরে রেখেছিলেন, কিন্তু তবুও জামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে ১ম টেস্টে প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি সানি, এর জন্য তাঁর আঙুলের চোটকেও একটা কারণ বলে মনে করা হয়। ফর্মে থাকা জয়ন্তীলাল সেই টেস্টে ইনিংস শুরু করেছিলেন আবিদ আলির সঙ্গে জুটি বেঁধে। এই সিরিজের আগে দু’দলের ২৩ বার সাক্ষাতে ১২ বার হেরেছিল ভারত এবং বাকি ১১টি টেস্ট ড্র হয়েছিল এবং ২৩ বারই ১ম ইনিংসের লিড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তাই অনেককেই চমকে দিয়ে ১ম টেস্টে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলোঅন করিয়েছিল, যদিও শেষ অবধি টেস্টটি ড্র হয়। কিন্তু ওই ড্র হওয়া টেস্টে ভারতের খেলা একমাত্র ইনিংসে জয়ন্তীলালের ব্যর্থতা এবং চোট পাওয়া, সানির সামনে টেস্ট ক্রিকেটের দরজা খুলে দেয় ২য় টেস্টে।
আর পিছন ফিরে তাকাননি সানি।একটি অপরূপ সুন্দর ক্রিকেটীয় রূপকথার পথচলা শুরু হয়েছিল ৬ই মার্চ, ১৯৭১ তারিখে, সানির ব্যাটে ভর করে। ওই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছিলেন Roy Fredericks, Steve Camacho, Rohan Kanhai, Clive Lloyd, Charlie Davis, Sir Garry Sobers (Captain), Arthur Barrett, Mike Findlay (wk), Vanburn Holder, Grayson Shillingford, Jack Noreiga আর ভারতীয় দলে ছিলেন Ashok Mankad, Sunil Gavaskar, Salim Durani, Dilip Sardesai, Ajit Wadekar (Captain), Eknath Solkar, Syed Abid Ali, Srinivas Venkataraghavan, Pochiah Krishnamurthy (wk), Erapalli Prasanna, Bishan Bedi. আম্পায়রদ্বয় ছিলেন Ralph Gosein আর Stuart Ishmael.
১ম দিনই ভারতের স্পিনে নাজেহাল আয়োজক দেশ ১ম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২১৪ রানে।চার্লি ডেভিস ৭১ না করলে আরো খারাপ হত তাদের অবস্থা। তিন স্পিনার ৮টি উইকেট ভাগ করে নেন নিজেদর মধ্যে (প্রসন্ন-৪, বেদী-৩ আর ভেঙ্কট-১)। দিনের শেষে ভারতের ০/২২য়ের মধ্যে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন সানি।২য় দিনের শেষে ভারত ছিল ২৪৭/৪, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সানির ৬৫ (কোন ৪ বা ৬ ছাড়াই) এবং সারদেশাইর ১১২)। রোহন কানহাইয়ের বারবার তাঁকে উৎসাহ দেওয়া, সোবার্সের একবার তাঁর ক্যাচ ছাড়া এবং জীবনের ১ম টেস্ট ইনিংসের শুরুতে ভয়তরাসে ভাবটা কাটিয়ে উঠে পরের দিকে সাবলীল খেলা আজও মনে করতে পারেন সানি। ৬৫ রানে স্পিনার নরিগা-র বলে লয়েডের হাতে ধরা পড়ে ফিরে আসার সময়ে, নিজের টিমের কোন বড়দা যেভাবে বলেন, ঠিক সেইভাবে রোহন কানহাই তাকে বলেছিলেন “এভাবে সেঞ্চুরিটা ফেলে এলে? ঠিক হলোনা এটা।” এটা হয়ত ছাপ ফেলেছিলো সানির উপর এবং ফলস্বরূপ পরের তিনটে টেস্টে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো সানির ব্যাট।
৩য় দিনে ভারত ৩৫২য় শেষ করে ১ম ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩য় দিনের শেষে ছিল ১৫০/১। সেখান থেকে ৪র্থ দিনে ভেঙ্কটের ৫, বেদীর ২ আর দুরাণীর ২ উইকেটের দৌলতে আচমকাই ২৬১ রানে শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২য় ইনিংস। ভারতের ২য় ইনিংসে, ৪র্থ দিনে সানি করেন ৭টি বাউন্ডারিসহ অপরাজিত ৬৭ রান। ভারত জিতে যায় ৭ উইকেটে (৩/১২৫ করে) এবং সানি সেদিন সেঞ্চুরি করার কোন সুযোগই পাননি। জীবনের ১ম টেস্টেই জয়ের মুখ দেখেছিলেন সানি, ওয়াদেকারের নেতৃত্বে।জীবনের ১ম সিরিজও শেষ অবধি ওই ১-০ ফলেই জেতে সানির ভারত।
ওই সিরিজে ১৫৪.৮০ গড়ে ৪ টেস্টে ৭৭৪ রান করেছিলেন সানি আর তাঁর রানগুলি ছিল এইরকম:
২য় টেস্ট – ৬৫ আর অপরাজিত ৬৭।
৩য় টেস্ট – ১১৬ আর অপরাজিত ৬৪।
৪র্থ টেস্ট – ১ আর অপরাজিত ১১৭।
৫ম টেস্ট – ১২৪ আর ২২০।
সিরিজ শেষে সানিকে নিয়ে ক্যালিপসো গান (THE CRICKET CALYPSO@1971) বেঁধেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ফ্যান লর্ড রিলেটর, সানিকে তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়ে। সে গানের ছন্দ আজও অটুট:-
A lovely day for cricket
Blue skies and gentle breeze
The Indians are awaiting now
To play the West Indies
A signal from the umpire
The match is going to start
The cricketers come on the field
They all look very smart.
Erapalli Prasanna
Jeejeebhoy and Wadekar
Krishnamurthy and Vishnoo (sic) Mankad
Them boys could real play cricket
On any kinda wicket
They make the West Indies team look so bad
We was in all kinda trouble
Joey Carew pull a muscle
Clive Lloyd get ’bout three run out
We was in trouble without a doubt.
It was Gavaskar
De real master
Just like a wall
We couldn’t out Gavaskar at all, not at all
You know the West Indies couldn’t out Gavaskar at all.
Ven-kat-a-ra-ghavan
Bedi, in a turban
Vijay Jaisimha, Jayantilal
They help to win the series
Against the West Indies
At Sabina Park and Queen’s Park Oval
A hundred and fifty-eight by Kanhai
Really sent our hopes up high
Noriega nine for ninety-five
The Indian team they still survive.
It was Gavaskar
De real master
Just like a wall
We couldn’t out Gavaskar at all, not at all
You know the West Indies couldn’t out Gavaskar at all.
Govindraj and Durani
Solkar, Abid Ali
Dilip Sardesai and Viswanath
They make West Indies bowlers
Look like second raters
When those fellas came out here to bat
West Indies tried Holder and Keith Boyce
They had no other choice
They even try with Uton Dowe
But ah sure that they sorry they bring him now.
It was Gavaskar
De real master
Just like a wall
We couldn’t out Gavaskar at all, not at all
You know the West Indies couldn’t out Gavaskar at all.
Little Desmond Lewis
Also Charlie Davis
Dey take a little shame from out we face
But Sobers as the captain
He want plenty coachin’
Before we cricket end up in a disgrace
Bedi hear that he became a father
So he catch out Holford in the covers
But when Sobers hear he too had a son
He make duck and went back in the pavilion.
It was Gavaskar
De real master
Just like a wall
We couldn’t out Gavaskar at all, not at all
You know the West Indies couldn’t out Gavaskar at all.
ক্রিকেট বিশ্বের দশ হাজারী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এই ভদ্রলোক ১৯৮৭-তে তাঁর অবসরের মুহূর্তে সবথেকে বেশী ৩৪টি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিকও ছিলেন। ১২৫ টেস্টে ৩৪টি সেঞ্চুরিসহ (যার মধ্যে ৪টি ছিল ডাবল সেঞ্চুরি) ৫১.১২ গড়ে ১০১২২ রানের হিমালয়ে প্রথম চড়েছিলেন তিনিই। ১৬ বছরের সেই পথচলার শুরু ছিল আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগের ত্রিনিদাদের ২য় টেস্ট দিয়ে।
অজস্র খেলোয়াড় এক বছর আগে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এজন্য। সানি সেদিন বলেছিলেন, “আমি আজ যেখানে আছি, তার সবই ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য।”
২০২১-এর ৬ই মার্চ বিসিসিআই-ও এজন্য তাঁকে সম্মানিত করেছিল। ২০২১-এর ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে আমেদাবাদের ৪র্থ টেস্টে ধারাবিবরণী দিতে দিতে সুনীল গাভাসকার সেদিন কেক কেটেছিলেন এই স্মরণীয় দিনটির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে। আর স্বভাবসিদ্ধ কৌতুকের মোড়কে বলেছিলেন, “আমার অবস্থা ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মত। দুদিকে ক্লোজ গালি আর শর্ট লেগের (সহধারাভাষ্যকার মুরলী কার্তিক এবং অন্য একজনকে দেখিয়ে) মাঝখান দিয়ে বল বার করার মত কেকটা কাটার দায়িত্বও আমার উপরেই পড়েছে।” আসলে এই কৌতুকমুখর থেকে যাওয়াটাই তাঁর ইউএসপি, এই প্রায় ৭২ বছর বয়সেও এতটা প্রাণবন্ত থেকে যাবার জন্য।
এ বছরেও মোহালিতে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের ১ম টেস্টে ধারাবিবরণী দেবার দায়িত্বে আছেন সুনীল গাভাসকার।আগামীকাল এই দিনটির একান্ন বছর উদযাপনে সেখানে কি হয়, সেটা দেখার কৌতূহল রইল।
এই কিছু না থাকার দেশে আর কিছু না পাওয়া জীবনেও নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়, একজন সুনীল গাভাসকারকে পাওয়ার জন্য, নীললোহিতের মত যার বয়েস বাড়ে না।
অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও প্রণাম, সানি গাভাসকার।
এইরকমই ভালো থাকুন, আরো অনেকদিন।