‌আমি নিজে তো ‘‌সানি জি’ ডাকতে বলিনি:‌ গাভাসকার

বেঙ্গালুরু, ১৬ মার্চ

তিরিশ মিনিটের বিরতি। এবং তিনতলা থেকে নীচে নেমে বড় হলঘরে অন্তত কুড়ি মিনিট হাঁটছেন। নিয়ম করে। দিনে ১০,০০০ পা হাঁটছেন বলেই ৭৩ বছর বয়সে অমানুষিক পরিশ্রম করতে পারছেন। প্রায় ১১ ঘণ্টার পরিশ্রম। তবু, ক্লান্তি নেই তাঁর, ‘‌উপভোগ করছি তো। এনজয় করতে পারলে টায়ার্ড ফিলিং মাথায় ঢুকতে পারে না।’‌‌ পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতেই জানতে চাইলাম, হাঁটুর বয়সি ধারাভাষ্যকাররা যখন তাঁকে ‘‌সানি জি’‌ বলে ডাকেন, তখনও তিনি মুখে হাসি ছড়িয়ে কথা বলেন কীভাবে?‌ আবারও হাসলেন, ‘‌আমি নিজে তো আর কাউকে ‘‌সানি জি’‌ বলতে বলিনি। যদি কেউ এ নামে ডেকে আনন্দ পায়, তাতে আমি বাধা দেওয়ার কে?‌ ডাকে কী আসে যায়?‌’‌

হাঁটতে হাঁটতেই জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন। এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়ালে পৌঁছে ঘোরার ভঙ্গি দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল, যৌবনে দ্বিতীয় রান নেওয়ার টার্ন, ‘‌খুচরো রান নেওয়ার আসল রহস্য হল পার্টনারের সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এবং চোখে চোখে কথা হয়ে যাওয়ার মতো বোঝাপড়া।’‌ খেলা শুরুর ২ ঘণ্টা আগে মাঠে পৌঁছে টানা এক ঘণ্টা প্রখর রোদের তাপে দাঁড়িয়ে সমানে কথা বলে যাওয়া। বিরতিতে ওপর থেকে মাঠে নামা। সবশেষে মাঠ খালি হয়ে যাওয়ার পরও কথা বলে যেতে হয়, ‘‌বায়ো বাবল–‌এ থাকতেও হয়। তবে, এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি নিজের মতো করে এই জগৎটা তৈরি করে নিয়েছি। এ কাজটাই তো আনন্দের সঙ্গে করছি। কোনও নেগেটিভ চিন্তা না করাই ভাল। এই চাপ নিতে না পারলে বাড়ি গিয়ে বসে পড়তে হত। সেটা নিশ্চয়ই কাম্য নয়। ক্রিকেট খেলার সঙ্গেই তো নিজের জীবনকে বেঁধে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেই কৈশোরে। সো, নো কমপ্লেইন.‌.‌.‌।’‌

বেঙ্গালুরুতে হাঁটছেন দেবাশিস দত্ত এবং সুনীল গাভাস্কার

মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাই ক্রিকেটার হিসেবে যাঁরা কোনওদিন ১০ নম্বর পাননি, তাঁদের কথাও তাঁকে পাশে বসে (‌বা দাঁড়িয়ে)‌ হজম করতে হয়, ‘‌এ ব্যাপারে আমার কী–‌ই বা বলার থাকতে পারে। নিজের কাজ করার দিকে মন দিতে হয়। ক্রিকেট জীবনে শুধু যেমন বোলারের হাত থেকে ডেলিভারি বের হওয়ার মুহূর্তের দিকে তাকিয়ে থেকে কনসেনট্রেশন করতে হত, কমেন্ট্রি করার সময়েও একই ফর্মুলায় থাকি। অন্য ভাষ্যকারদের কথা শুনতে হয় ঠিকই। তবে, ওখানেও ছাঁকনি ব্যবহার করতে হয় নিঃশব্দে। অয়েল ইওর ওন মেশিন— এখনও মেনে চলছি।’‌

মিস্টার গাভাসকার, সানি ভাই পর্যন্ত শুনেছিলাম। সানি জি যাঁরা বলছেন, তাঁরা রোহনের সঙ্গেও খেলেছেন। এবং মাঝেমধ্যেই ভুল টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা শুনছেন শ্রোতারা। আপনি মৃদুভাবে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করছেন মাঝেমধ্যে, ‘‌উপায় নেই। সাধারণ দর্শকরা যেটা দেখতে পান না, তা হল, আমাদের কানে ছোট একটি যন্ত্রের মাধ্যমে ডিরেক্টর এবং প্রোডিউসার নির্দেশ দিতে থাকেন। তা অনুসরণ করতে গিয়ে অনেক সময়েই প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে চলে যেতে হয়।’‌ এই মুহূর্তে মনে পড়ছে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে অশ্বিনের বলে বিশ্ব ফার্নান্ডেজের স্টাম্প আউট হওয়ার পর আপনি কিছু একটা বলতে চাইছিলেন। শেষ করতে পারেননি। ‘‌মনে করতে পারছি। যেটা বলতে চেয়েছিলাম, তা হল, দু’‌জন বিশ্বমানের স্পিনারের বিরুদ্ধে খেলার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে স্টান্স–‌এ পরিবর্তন করতে হয়। দুটো পা, সাধারণত আমরা সমান্তরাল রেখায় রাখি। এক্ষেত্রে, ডান পা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের দিকে রাখলে স্টাম্পড হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ডান পায়ের কিছু অংশ, সামান্য হলেও, পপিং ক্রিজের ভেতরে রাখা যায়।’‌

বলতে দেওয়া হয়নি সেদিন। এটা তো দর্শকদের ক্ষতি। এত ভাল একটা পরামর্শ উঠতি ক্রিকেটাররা শুনতে পেল না, ‘‌ব্যাড লাক’‌। এছাড়া আর কী–‌ই বা বলতে পারি.‌.‌.‌।’‌ পরের প্রসঙ্গ রোহিত শর্মাকে ৮০ বা ৯০ রানের আগে পুল শট নিতে বারণ করতে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, ‘‌কখনও কখনও নিজেকেও শাস্তি দিতে হয়। এমন পরামর্শের কারণ?‌ সানির ব্যাখ্যা, ‘‌এ মুহূর্তে দুনিয়ার অনেক প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা আউট হয়ে যাচ্ছে মারার বল মারতে গিয়ে ভুল করার কারণে। চয়েজ অফ ডেলিভারি, এ জন্য, ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। আমি জানি, রোহিত পছন্দ করে পুল শট। কিন্তু সময়জ্ঞানে ভুল হয়ে যাওয়ায়, সেট হওয়ার পর আউট হয়ে যাচ্ছিল। তাই ওকে বলেছিলাম, ওই শট না নেওয়ার। সংবরণ করতে হয় লোভ। ভারতীয় ক্রিকেট এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে ব্যাটিং–‌শৃঙ্খলা দেখাতে পারলে টিম ইন্ডিয়া অনেক ম্যাচ জিততে পারবে। রোহিত এখন ক্যাপ্টেন। তাই অধিনায়ককেই পথ দেখাতে হবে।’‌ ধারাভাষ্যের পরের পর্বের জন্য ডাক আসতেই হাঁটা থামিয়ে দিলেন দৌড়।