মনে পড়ে? ২০২০–র ২৭ সেপ্টেম্বর। এই পাঞ্জাবের বিরুদ্ধেই এক ওভারে তাঁর পাঁচটা ছয় মারা? ১৮তম ওভারে বোলার ছিলেন শেলডন কটরেল। পরপর চারটে ছয় মেরেছিলেন। পঞ্চম বলে রান হয়নি। ষষ্ঠ বলে আবার ছয়! বাইশ গজে অতিমানব হয়ে উঠেছিলেন রাহুল তেওয়াটিয়া। সেদিন তাঁর গায়ে ছিল রাজস্থান রয়্যালসের জার্সি। ২০২২–এর ৮ এপ্রিল আবার সেই ‘ঝড়ে’র কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। এবার অবশ্য জার্সি বদলেছে। খেলছেন নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট টাইটান্সের হয়ে। পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য ১৯০ তাড়া করতে গিয়ে শেষ দু’বলে গুজরাট টাইটান্সের দরকার ছিল ১২ রান। পরপর দুটো ছয় মেরে গুজরাটকে জয় এনে দিয়েছেন তেওয়াটিয়া। তাঁর এমন বিধ্বংসী ভূমিকায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রাক্তন ক্রিকেটাররা।
এবার আইপিএলের মেগা নিলামে যখন হরিয়ানার অল-রাউন্ডারকে ৯ কোটিতে নিয়েছিল গুজরাট, ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকেই। কেন তাঁর পেছনে এত টাকা ঢালা হচ্ছে? কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে যে কোনও ভুল ছিল না, সেটা বুঝিয়ে তাঁর প্রতি আস্থার দাম দিচ্ছেন তেওয়াটিয়া। তিন ম্যাচের তিনটিতেই জয়ী গুজরাট, দুটিতে ব্যাট হাতে ফিনিশারের ভূমিকায় বাজিমাত তাঁর। রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টকে ২০১৬–তে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধেই শেষ দু’বলে দুটি ছয় মেরে জিতিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শুক্রবার একই কৃতিত্ব অর্জন করলেন তেওয়াটিয়া, ওডেন স্মিথকে শেষ দু’বলে গ্যালারিতে পাঠিয়ে। যেটা উল্লেখযোগ্য, ২০২০ হোক বা ২০২২, দু’বারই তাঁর ‘নৃশংস আক্রমণে’র শিকার হল পাঞ্জাব। আরও উল্লেখযোগ্য, ঘটনাচক্রে দু’বারই তেওয়াটিয়ার ‘লক্ষ্য’ দুই ক্যারিবিয়ান বোলার। আকাশ চোপড়া সুন্দর টুইট করেছেন, ‘রাহুল তেওয়াটিয়া বনাম পাঞ্জাব। উল্টোদিকে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জোরে বোলার। অবিশ্বাস্য। কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।’
তুমুল চাপের মধ্যেও ঠান্ডা মাথায় ‘কাজ’ সেরেছেন তেওয়াটিয়া। ম্যাচের পর বলেছেন, ‘এত ভাবার কিছু ছিল না, দুটো ছয় দরকার ছিল, মেরেছি।’ অর্থাৎ ঠান্ডা মাথায় ‘খুন’ করার মানসিকতা। এই কারণে তাঁকে ‘আইসম্যান’ আখ্যা দিয়েছেন সুনীল গাভাসকার। সানির কথায়, ‘ওর শিরায় কী প্রবাহিত হয়? রক্ত নয়, বরফ। ওর ডাকনাম হওয়া উচিত আইসম্যান।’ বেশ মজার কথা বলেছেন মহম্মদ কাইফ। তাঁর টুইট, ‘টাইটান্স ভুলে যান, তেওয়াটিয়া যদি টাইটানিকে থাকত, তাহলে ওই জাহাজ ডুবত না।’ এই ম্যাচে ৯৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন শুভমান গিল। তাঁর সম্পর্কে রবি শাস্ত্রী বলেছেন, ‘গিল যেন ক্রিকেটের এই ফরম্যাটের জন্যই তৈরি হয়েছে।’ তবু, তবু দিনের শেষে আলোচনা একজনকে নিয়েই। রাহুল তেওয়াটিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসার স্রোত আছড়ে পড়েছে তাঁকে নিয়েই। বাঁহাতি মারকুটে ব্যাটার মনে করিয়ে দিয়েছেন শাহরুখ খানের সেই বিখ্যাত ডায়লগ, ‘রাহুল, নাম তো সুনা হোগা’!