খিদেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শুভমানকে

সেদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বাঙ্গালোর বনাম গুজরাট টাইটান্স ম্যাচের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখে পড়ল একটা মন্তব্য। ‘‌কিং কোহলির সেঞ্চুরি ম্লান প্রিন্স গিলের পাল্টা সেঞ্চুরিতে’‌।

আইপিএল প্লে–অফে যাওয়ার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে হলে ওই ম্যাচে জিততেই হত আরসিবি–কে। পরিস্থিতি যা ছিল, তাতে গুজরাটকে হারালে নেট রানরেটে মুম্বইকে পেছনে ফেলে প্লে–অফে চলেই যেত বিরাট কোহলি, ফাফ ডুপ্লেসিদের দল। এমন ম্যাচেই আবার জ্বলে উঠলেন বিরাট। আবার শতরানে গ্যালারি মাতিয়ে দিলেন তিনি। সেদিন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ম্যাচ জিতবে আরসিবি। কিন্তু উল্টো শিবিরে থাকা বছর তেইশের ‘‌পাঞ্জাব দা পুত্তর’ও যে তাল ঠুকছিলেন, কেউই বুঝতে পারেননি। চলতি আইপিএলে শুভমান গিল নিজের দ্বিতীয় শতরানে শুধু আরসিবি–র বিদায় নিশ্চিত করেননি‌, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্লে–অফে যাওয়াও সুনিশ্চিত করেছিলেন। তাই তো গুজরাট ব্যাটারের প্রশংসা করতে গিয়ে অভিনব টুইটে নজর কেড়েছেন মুম্বইয়ের মেন্টর শচীন তেন্ডুলকার। সেদিন মুম্বইয়ের হয়ে ‘‌দুই শতরানকারী’‌ ক্যামেরন গ্রিন এবং শুভমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার!
সত্যিই অনবদ্য ব্যাটিংয়ে বারবার মন কাড়ছেন শুভমান। তাঁর ব্যাটিংয়ের সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক হল, খেলছেন আইপিএলে, অথচ শট নির্বাচন টি২০ সুলভ নয়!‌ এই ব্যাপারে শুভমানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সুনীল গাভাসকার। লাল বলের ক্রিকেটে গিলের দক্ষতা দেখে মাস কয়েক আগে সানি জানিয়েছিলেন, টেস্টে ৮–১০ হাজার রান করে ফেলবেন শুভমান। এবার টি২০–তেও তাঁর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ সানি। বিরাটের শতরানের দিনেও সেই ইনিংসকে ছাপিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব যে অনেক বেশি, তা খোলাখুলি জানিয়েছেন গাভাসকার। দু’‌জনের ইনিংসের ফারাকটা কীভাবে বুঝিয়েছেন তিনি?‌ সানির কথায়, ‘‌প্রথমে কোহলির ইনিংসটা ছিল অবিশ্বাস্য। অ্যাবসোলিউটলি টেরিফিক। পাওয়ার হিটিংয়ে পরিপূর্ণ। সেখানে শুভমানের ইনিংস অনেক বেশি সাবলীল। মার্জিত ব্যাটিং। কোনও ত্রুটিই খুঁজে পাওয়া মুশকিল।’‌ যত দিন যাচ্ছে, নিজের যাত চেনাচ্ছেন শুভমান। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার ম্যাথু হেডেনের ভবিষ্যদ্বাণী, আগামী এক দশক বিশ্ব ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়াবেন শুভমান।
তিনি পরিশ্রমে বিশ্বাসী। আত্মতুষ্টিতে ভোগেন না। এবারের আইপিএলে প্রথম শতরান পাওয়ার পর দারুণ কথা বলেছিলেন শুভমান, ‘‌আমি আগের ইনিংস মনে রাখি না। বরং সামনে যে কাজ আছে, তার ওপরই ফোকাস করি।’‌ বেঙ্গালুরুতে বিরাটদের বিরুদ্ধে অনবদ্য শতরানের পরের দিন কীভাবে শুরু করেছিলেন শুভমান?‌ সেটা শুনিয়েছেন তাঁর মেন্টর, বন্ধু, রনজি টিমের সতীর্থ গুরকিরাট মান, ‘‌ওকে ফোন করে বললাম আজ সকালের পরিকল্পনা কী?‌ বলল, পাজি আমি জিমে যাচ্ছি। অনেক সময় দেখা যায় ম্যাচ অনেক রাতে শেষ হয়েছে, পরের দিন ক্রিকেটাররা একটু বেশি ঘুমিয়ে নেয়। কিন্তু শুভমান ব্যতিক্রম। ও ঘুম থেকে উঠে ৮টার সময়ে জিমে যাবেই। ও জানে ওর কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। আরও পারফর্ম করতে চায়, আরও রান করতে চায়। শুভমানের খিদেই ওকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বড় রানেই হোক বা কম, প্রতিটা আউটের বল ও বিশ্লেষণ করে। সেটা বুঝে নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র‌্যাকটিস করে। একদিন হয়তো ওকে বললাম, শুভি এবার চল, দু’‌ঘণ্টা হয়ে গেছে। ওর উত্তর এল, পাজি ইয়ে উপর ওয়ালি বল নে আজ ট্রাবল কিয়া হ্যায়, থোড়ি দের আউর রুক যাও।’
এই শুভমানকেই দু’‌বছর আগে ছেড়ে দিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তা আবার বুক বাজিয়ে বলেন, তাঁরা কোনও ভুল করেননি!‌ সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই কেকেআর!‌ ‌