কার্তিকের জন্য গর্ব তো হবেই

মনের কথাটা তিনি আগেও বলেছিলেন। আবারও বললেন। শুক্রবার রাতে রাজকোটে তাঁর ব্যাট আবারও চওড়া হয়েছে। চার–ছয়ের বন্যায় আবারও গ্যালারি মাতিয়েছেন। বয়স নিছকই সংখ্যা, কিন্তু জাতটাই আসল। আবারও বুঝিয়েছেন। ম্যাচের সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে দীনেশ কার্তিক জানিয়েছেন তাঁর স্বপ্ন দেশের জন্য বিশেষ কিছু করা। আর স্বপ্ন পূরণ করতে কার্তিক বেছে নিতে চাইছেন অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপের মঞ্চকেই। অর্থাৎ টি২০ বিশ্বকাপের দলে ঢুকতে তিনি কতটা মরিয়া, বুঝিয়ে দিয়েছেন তামিলনাড়ুর এই ব্যাটার। 

শেষ আইপিএলে কার্তিক ছিলেন অপ্রতিরোধ্য ছন্দে। র‌য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বাঙ্গালোরের হয়ে করেছিলেন ৩৩০ রান, গড় ৫৫। স্ট্রাইক রেট ছিল অবিশ্বাস্য, ১৮৩.‌৩৩। শুধু ব্যাটে ঝড় তোলাই নয়, ফিনিশারের ভূমিকাতেও কার্তিক ছিলেন উজ্জ্বল। আইপিএলের সেই ফর্মই তাঁর সামনে খুলে দিয়েছে জাতীয় দলের দরজা। সুনীল গাভাসকারের মতো অনেক প্রাক্তনই মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলেও ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে কার্তিককে। শুক্র–রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর ২৭ বলে ৫৫ রানের মারকাটারি ইনিংসের পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

কার্তিক বলেছেন, ‘”লক্ষ্যটা খুব পরিষ্কার। চাই বিশ্বকাপে খেলতে। আমার জীবনে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যেই এগোতে চাইছি। দল থেকে বাদ পড়ার অনুভূতি আমি জানি। আবার এটাও জানি, টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলার মূল্য কতটা দামি। দেশের জন্য বিশেষ কিছু করতে চাই। আরসিবি আমাকে একটা প্ল্যাটফর্ম দিয়েছিল। সেই ভূমিকায় আমি খুশি। তার জন্য অনেক প্র্যাকটিসও করেছি। তাই আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি। চাই কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতকে জেতাতে। আর এই দলের অংশ হওয়া যে কতটা কঠিন, তাও জানি।’”

প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজও মেনে নিয়েছেন কার্তিককে বল করা বেশ কঠিন। কখনও স্পিনারদের সুইপ করেছেন, কখনও পেসারদের অবিশ্বাস্য রিভার্স-হিটে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেই কার্তিককে নিয়ে মহারাজ বলেছেন, ‘”নিজের ভূমিকায় ও অনবদ্য। ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ফিনিশার। এমন সব জায়গায় শট মেরে রান নিচ্ছে, অকল্পনীয়। ওকে বল করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”

সাঁইত্রিশের ‘‌বুড়ো’‌ নয়, ‘‌ভরসা’‌। যত দিন যাচ্ছে, নতুনভাবে নিজেকে চেনাচ্ছেন কার্তিক। নতুন ডিকে–কে দেখে মুগ্ধ গাভাসকার জানিয়েছেন আগামী টি২০ বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে কার্তিক না থাকলে তিনি অবাকই হবেন। গাভাসকারের কথায়, “কার্তিকের কত বয়স সেটা দেখার দরকার নেই। বরং দেখুন ও কী কী করছে। মেলবোর্নগামী বিমানে কার্তিক যদি না ওঠে তা হলে সত্যিই অবাক হব।” ‌‌শুধু কি প্রাক্তনরা, জাতীয় দলের সতীর্থরাও মজেছেন কার্তিকে। হার্দিক পান্ডিয়ার কাছে তিনি অনুপ্রেরণা। বিসিসিআই টিভিতে নিজেদের মধ্যে কথোপকথনে কার্তিককে হার্দিক বলছেন, “মন থেকে বলছি, অনেক ক্রিকেটারের জীবনে তুমি অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছ। তুমি যখন জাতীয় দলের বাইরে ছিলে, তখনও তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা হত। অনেকেই তখন তোমাকে জাতীয় দলের হিসেবের মধ্যে রাখেনি। তোমার সেই পুরনো কথা আজ খুব মনে পড়ছে। তুমি বলেছিলে, তোমার মূল লক্ষ্য আবার দেশের হয়ে খেলা, বিশ্বকাপে খেলা। নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি ছিলে। তোমাকে সবকিছু পেতে দেখে ভাল লাগছে। আমার কাছে সত্যিই এটা অনুপ্রেরণার। অনেকেই তোমার কাছ থেকে শিখবে। তোমার জন্য গর্বিত।’”

১লা ডিসেম্বর, ২০০৬। দক্ষিণ আফ্রিকায় টি২০ অভিষেকের পর সেদিনের দলের বাকিরা এখন সবাই ‘‌প্রাক্তন’‌, কিন্তু ১৬ বছর পরও দীনেশ কার্তিকের গায়ে জাতীয় দলের জার্সি!‌ সেদিনের দলে ছিলেন বীরেন্দ্র শেহবাগ (‌অধিনায়ক)‌, শচীন তেন্ডুলকার, দীনেশ মোঙ্গিয়া, মহেন্দ্র সিং ধোনি (‌উইকেটকিপার)‌, দীনেশ কার্তিক, সুরেশ রায়না, ইরফান পাঠান, হরভজন সিং, অজিত আগরকার, শ্রীসন্থ, জাহির খান‌। ১৬ বছর আগে জোহানেসবার্গে অভিষেক ম্যাচে ২৮ বলে অপরাজিত ৩১ করে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন কার্তিক। আর শুক্রবারও রাজকোটে সেই একই প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ২৭ বলে ৫৫ করে ম্যাচের সেরা। এমন ক্রিকেটারের জন্য গর্ব তো হবেই।