একরাশ নিরাশার মধ্যেও আশার আলো শাহবাজ

পুনীত দাতের একটি ফুল-লেংথ বল দক্ষতার সাথে ফ্লিক করেও যখন মিড-উইকেট অঞ্চলে শুভম শর্মার হাতে জমা পড়লেন অভিষেক পোড়েল, তখন বাংলার স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ৫৪-৫। প্রথম ওভারেই কার্তিকেয় বিক্রম যখন প্রথম ইনিংসে লিড পাওয়ার আশা একেবারেই ক্ষীণ করে দিয়েছে, সেখানে স্কোরবোর্ড এতো নিরাশাজনক হওয়া রীতিমতো একটা বড়ো রানে পিছিয়ে পড়ার ভ্রূকুটি দেখাচ্ছে বাংলাকে।


বাঁ-হাতি তিনি যখন ব্যাট হাতে এলেন তখন বাংলা একটি চমকপ্রদ পারফরমেন্স আশা করছে তাঁর কাছ থেকে। তিনি এলেন, ক্রিজের সামান্য বাইরে দাঁড়ালেন, ব্যাটের ব্যাক-লিফট নিয়ে গেলেন অফস্ট্যাম্পের সামান্য ওপরে এবং শুরু করলেন স্বাভাবিক খেলা। শাহবাজকে বাংলার ক্রিকেট এতদিন যা দেখেছে তা হলো দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে কার্যকরী একজন লোয়ার-অর্ডার ব্যাটার হিসেবে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক অফ-স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দিয়ে এবং স্টাম্পের বল যথাসম্ভব দেরিতে খেলে শাহবাজ দেখালেন একজন ইনিংস প্রস্তুতকারক হিসেবেও তিনি দুরন্ত। প্রথম ৪০ বল শেষে তাঁর রান ছিল ৫! সেইখান থেকে রান তোলার গিয়ার সম্পূর্ণ বদলে ফেলে শাহবাজ ৫০ রানে পৌঁছন ১১৬ বলে। অর্থাৎ পরের ৭৬টি বলে তিনি প্রায় ৬০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৪৫ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে কুমার কার্তিকেয়র মারা একটি সামান্য লফ্টেড বল অসামান্য দক্ষতায় ক্যাচ ধরেন শাহবাজ আহমেদ। কমেন্ট্রি বক্স থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটার অঞ্জুম চোপড়া বলছিলেন ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের পরেও তাঁর ফিল্ডিং দক্ষতা তাঁকে আলাদা করে রেখেছে অন্যদের থেকে। তাঁর বাঁ-হাতি স্পিন তাঁকে রনজি ট্রফির প্রথম পূর্ণ মরশুমেই দিয়েছে ৩৫টি উইকেট। বর্তমান মরশুমে তাঁর শিকার ২০টি উইকেট। এই দুটি কীর্তি ছাড়িয়েও যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এই মরশুমে ৭ নম্বরে ব্যাট করেও তিনিই বাংলার সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক এবং অদ্যব্ধি এই মরশুমের সপ্তম সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক।
এই মরশুমে তাঁর ৪৮২ রানের মধ্যে প্রায় সব ইনিংসই হয়েছে বেশ কার্যকর। প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৮৮ রানে অল-আউট হওয়ার পর চতুর্থ ইনিংসে তাঁর ৭০ রানের ইনিংস বাংলাকে ৩৫০ রান তুলে জয় এনে দিতে সাহায্য করে। এই ৩৫০ রান ছিল বাংলার ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। এছাড়া ব্যাটারদের মহাভোজে ৭৮ যদিও বা বাদ দেওয়া হয় তাহলে মধ্যপ্রদেশ ম্যাচে এই সেঞ্চুরির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে পাশাপাশি এটাও ঠিক জাতীয় নির্বাচকদের খাতায় নাম তুলতে হলে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো ৭৮-এ থেমে গেলে হবে না, ওইরকম ইনিংসকে শতরানে পরিনত করতে হবে।

একবার কালীঘাট মাঠে তাঁর ব্যাটিং দেখে অভিভূত তৎকালীন বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি তাঁকে বাংলা দলে সুযোগ দেওয়ার জন্য লড়াই করেন এবং তাঁকে বাংলা দলে সুযোগ করে দেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় শাহবাজকে যখন ‘বহিরাগত’ বলা হয়, তার বিরুদ্ধেও লড়েন মনোজ। মনোজ তিওয়ারি চেয়েছিলেন একজন কার্যকরী স্পিনার যার ব্যাটিং হতে হবে নির্ভরযোগ্য, তবেই রনজি ট্রফি জিততে একধাপ এগিয়ে থাকবে বাংলা। এখন শাহবাজ আহমেদের রনজি ট্রফি স্ট্যাট বলছে যে ব্যাট হাতে তিনি করেছেন ৪১ গড়ে ১,০৪১ রান এবং বল হাতে ১৯ গড়ে নিয়েছেন ৫৭টি উইকেট।
শাহবাজের পারফরমেন্স বাংলাকে অবশ্যই এগিয়ে দিয়েছে একধাপ এবং বাকি ধাপগুলি ঠিক থাকলে হয়তো আসন্ন কয়েক বছরেই লাল-বলে ভারতসেরা হবে বাংলা। ততক্ষন দীর্ঘায়িত হোক ৩২ বছরের অপেক্ষা।