নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৬৯-৭০ বোম্বে (ব্র্যাবোর্ন) টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬৫৯) মোটের উপর ভাল বল করেও (২-২৯ ও ০-২) আর কখনও টেস্ট খেলা হয়নি দীর্ঘদেহী মুম্বইকর অজিত পাইয়ের (জন্ম এপ্রিল ২৮, ১৯৪৫-এ বোম্বেতে)। চতুর্থ ইনিংসে খেলা হওয়া ৬৯.৫ ওভারের মধ্যে পাই, আবিদ আলি ও সুর্তিরা তিন পেসারে মিলে হাত ঘুরিয়েছিলেন মোট ৬ ওভারে। যদিও ৬০ রানে সেই টেস্ট যে জিতেছিল ভারত— তাও বলে রাখা দরকার।
আর-একজনের কথাও বলা যায় এখানে। যদিও ১৯৫৮-৫৯ থেকে ১৯৬৭-৬৮ পর্বে ২৮ টেস্ট খেলা সেই মুম্বইকরকে ঠিক বঞ্চিত বলা যায় না। তবে এঁর বেলায় খেয়াল করার টেস্ট কেরিয়ার শেষের মুহূর্তটা। রঞ্জনে ও সুরেন্দ্রনাথের সমসাময়িক রমাকান্ত দেশাইয়ের শেষ টেস্ট খেলা ডুনেডিনে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬৩০)। অধিনায়ক ছিলেন মনসুর আলি খান আর বিদেশ থেকে সেই প্রথম রাবার জিতে ফেরা ভারতের। স্পিনের ঘূর্ণিতে বাজিমাতের নবাবি কৌশল খেটে যায় সাগরপারেও। হয়তো আর দেশাইকে দরকার ছিল না নবাবের। খাটো চেহারার এই গতিময় মুম্বইকরের জন্ম জুন ২০, ১৯৩৯-এ বোম্বেতে।
জুন ২০, ১৯৭২-এ বোম্বের মাটিতে জন্ম নয়ের দশকের আরও এক পেসারের। বলছি ১৯৯৬-এর ইংল্যান্ড সফরে ২ টেস্ট খেলা মুম্বইকর পরশ মামব্রের কথা। এঁর বলে যদিও ছিল না দেশাইয়ের গতি।
কপিল-পরবর্তী অধ্যায়ের ভারতীয় পেসাররা? পরশ মামব্রের কথা তো বলা হল এখনই। ডোড্ডা গণেশ, আবে কুরুভিল্লা, দেবাশিস মোহান্তি, অজিত আগরকর, জাহির খান, ইরফান পাঠান, রুদ্রপ্রতাপ সিং, মুনাফ পটেল ও বিক্রম সিং-এর নামও বিভিন্ন সূত্রে এসেছে ইতিমধ্যে আলোচনায়। দেখে নেব শতাধিক টেস্ট খেলা কপিল-পরবর্তী পেসার ইশান্ত শর্মা অবধি আর কার কার আগমন রঙ্গমঞ্চে।
১৯৯৬—২০০১ পর্বে ৩৩ টেস্ট খেলা বেঙ্কটেশ প্রসাদ। আজকের গতি ছিল না সেদিন। প্রতিভাবান পেসারদের সক্কলেই ছিলেন সিম ও স্যুইংনির্ভর। বাড়তির মধ্যে প্রসাদের তূণে ছিল এক মারণ স্লোয়ার। অগাস্ট ৫, ১৯৬৯-এ ব্যাঙ্গালোরের মাটিতে জন্ম এই দীর্ঘদেহী কর্ণাটকি পেসারের।
১৯৯৬-৯৭ মরশুমে ২ টেস্ট খেলা ডেভিড জনসন। সেবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ষোলোজনের দলে ঠাঁই পাওয়া সাত সদস্যই ছিলেন কর্ণাটকি। তাঁদেরই অন্যতম এই পেসারের জন্ম অক্টোবর ১৬, ১৯৭১-এ আরশিকেরেতে। প্রসঙ্গত, এই তারিখে জন্ম তিনশো তিনের ভিড়ে ঠাঁই পাওয়া আরও দুই পুরুষের। এঁদের মধ্যে ১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০০১ পর্বে ১৯ টেস্ট খেলা তামিল ওপেনার সদাগোপ্পান রমেশকে (জন্ম অক্টোবর ১৬, ১৯৭৫-এ মাদ্রাজে) বলা যায় জনসনের সমসাময়িক। পক্ষান্তরে ২০১৮-১৯ থেকে শুরু করে এখনও অবধি ৭ টেস্ট খেলা মুম্বইকর পেসার শার্দূল ঠাকুরের জন্ম ১৯৯১-এ পালঘরে।
১৯৯৭-৯৮ থেকে ২০০১ পর্বে ৩ টেস্ট খেলা হরবিন্দর সিং। যথেষ্ট সম্ভাবনা নিয়েই শুরু করা এই পাঞ্জাবি পেসারের জন্ম ডিসেম্বর ২৩, ১৯৭৭-এ অমৃতসরে।
নিবন্ধের শুরুতে উল্লিখিত ছোট রবিন এই পর্বেরই প্রতিনিধি। প্রসঙ্গত বলে নেওয়া যাক বড় রবিনের কথাও। ১৯৯৮-৯৯ হারারে টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৪২৫) খেলা এই অলরাউন্ডারকে যদিও ফেলা যায় না বিশেষজ্ঞ পেসারদের ভিড়ে। ভারতবর্ষের ঘরোয়া ক্রিকেটে তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব করা রবিন সিং-এর জন্ম সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৬৩-তে ত্রিনিদাদের প্রিন্সেস টাউনে। তারিখটি অতীতের এক ন্যাটা পেসারেরও জন্মদিন। ১৯৩৯-৪০ থেকে ১৯৬৩-৬৪ অবধি বিস্তৃত অধ্যায়ে গুজরাট, সৌরাষ্ট্র ও অধুনালুপ্ত কাথিয়াওয়াড়ের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা সেই ম্যাটিং উইকেটের সুলতানের ভাগ্যেও বরাদ্দ ছিল একটাই টেস্ট। বলছি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৫২-৫৩ লখনউ টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩৫৬) খেলা শাহ ন্যালচাঁদের (জন্ম সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯১৯-এ ধ্রাঙ্গধ্রায়) কথা।
১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০০৩-০৪ পর্বে ১৭ টেস্ট খেলা বাঁ-হাতি আশিস নেহরা। চেহারা পেসারসুলভ না হলেও এঁর লাইন ও লেন্থের বদল এবং ইনস্যুইঙ্গার ছিল অনবদ্য। এপ্রিল ২৯, ১৯৭৯-তে দিল্লিতে জন্ম এই বাঁ-হাতি পেসারের।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০০১-০২ মোহালি টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৫৭৪) খেলা ইকবাল সিদ্দিকি। সন্তোষজনক গতির অধিকারী এই বলিষ্ঠ মারাঠি পেসারের জন্ম ডিসেম্বর ২৬, ১৯৭৪-এ আওরঙ্গাবাদে। ঘটনাচক্রে ১৯৭৩-এর এই তারিখে এলাহাবাদে জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৯৯৯-০০ ব্যাঙ্গালোর টেস্টটি (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৪৮৬) খেলা উত্তরপ্রদেশীয় অফস্পিনার নিখিল চোপড়ারও।
ইকবাল সিদ্দিকির সঙ্গেই টেস্ট ক্যাপ অর্জন করে ২০০২-০৩ অবধি অধ্যায়ে ৩ টেস্ট খেলা টিনু ইয়োহানন। অ্যাথলেটিক্সে কেরিয়ার শুরু করা টিনুকে ক্রিকেটে নিয়ে আসে ১৯৯৭ নাগাদ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনের এক বিজ্ঞাপন। ডেনিস লিলি ও থিরুমালাই শেখরের প্রশিক্ষণে মাত্র চার বছরেই টেস্ট ক্যাপ অর্জন করা এই মালয়ালম পেসারের জন্ম ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৯৭৯-তে তৎকালীন কুইলনে (অধুনা কোল্লাম)।
২০০৩-০৪ থেকে ২০০৪-০৫ পর্বে ৮ টেস্ট খেলা লক্ষ্মীপতি বালাজি। পাক ভূখণ্ড থেকে প্রথম রাবার জিতে আনা ২০০৩-০৪ সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ এই সদাহাস্যময় তামিল পেসারের জন্ম সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৮১-তে মাদ্রাজে।
২০০৫-০৬ থেকে ২০১১ পর্বে ২৭ টেস্ট খেলা শান্তাকুমারন শ্রীশান্থ। প্রথমে চোট আঘাত, ক্রমে অফ ফর্ম ও শেষে ২০১৩ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে গ্রেফতারি কেরিয়ার শেষ করে দেয় এই আক্রমণাত্মক মালয়ালম পেসারের। ফেব্রুয়ারি ৬, ১৯৮৩-তে এঁর জন্ম কথামঙ্গলমে।