তাঁকে নিয়ে একটা কথা প্রচলিতই হয়ে গেছে। মাঠে ঋষভ পন্থ আপনাকে ‘সুযোগ’ দেবেন। আপনি যদি তা নিতে পারেন, তাহলে বেঁচে গেলেন। আর না পারলে? আপনাকে চোখের জলে, নাকের জলে করেই ছাড়বেন ঋষভ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ঠিক সেটাই তো হল! স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ও উইকেটকিপার জস বাটলার। এমন ভুলের জন্য কাউকে ক্ষমা করেন না ঋষভ। বিপক্ষকে খুন করে বেরিয়ে গেলেন হাসতে হাসতে। তৃতীয় একদিনের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর ঋষভের মুখে হাসিটা ছিল তাঁর চোখ ধাঁধানো শতরানের মতোই। সেই অনাবিল হাসিতে ছিল পরম তৃপ্তি। যুদ্ধ জয়ের স্বাদ।
শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও কত যুদ্ধ লড়তে হচ্ছে তাঁকে। সমালোচকদের পাশাপাশি নিজের সঙ্গেও চলছে অনবরত লড়াই। সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করার পাশাপাশি নিজের জাত চেনানোর লড়াই। এই তো মাস তিনেক আগের কথা। এক সাক্ষাৎকারে ঋষভ বলেছিলেন, ‘আমার সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টে যাক, লক্ষ্য রেখেছি সেদিকেই।’ তাঁর ক্রিকেট প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি কোনও দিনই। প্রশ্ন উঠেছে ব্যাটিংয়ের সময় তাঁর মানসিকতা নিয়ে। অভিজ্ঞতার অভাবে বারবার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন। সমালোচিত হয়েছেন তখনই। তবু ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বোর্ডের পদাধিকারী, সবারই আস্থা ছিল ঋষভের ব্যাটে। উইকেটকিপার হিসেবে তাঁর থেকে অনেকটাই এগিয়ে ঋদ্ধিমান সাহা। কিন্তু টেস্টে কিপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতে হবে, এই যুক্তিতে বঙ্গকিপারকে পেছনে ফেলেছেন ঋষভ। এখানেই উঠে আসে একটা কথা। তাঁর যে স্বাভাবিক ব্যাটিং শৈলি, তাতেই আস্থা রেখেছেন প্রাক্তন ও বর্তমান কোচ যথাক্রমে রবি শাস্ত্রী এবং রাহুল দ্রাবিড়। ২০১৮–য় ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে ঋষভের ১১৪ এসেছিল ১৪৬ বলে। স্ট্রাইক রেট ৭৮.০৮। পরের বছর সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৫৯ এসেছিল ১৮৯ বলে। স্ট্রাইক রেট ৮৪.১২। চলতি বছরে কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে অপরাজিত ১০০, ১৩৯ বলে। স্ট্রাইক রেট ৭১.৯৪। আর বার্মিংহাম টেস্টে? ঋষভ আরও বেপরোয়া, ভয়ঙ্কর। ১১১ বলে ১৪৬! স্ট্রাইক রেট ১৩১.৫৩। তৃতীয় একদিনের ম্যাচে ১১৩ বলে অপরাজিত ১২৫। স্ট্রাইক রেট ১১০.৬১। লাল বলের ক্রিকেটই হোক বা সাদা, দল যখন চাপের মুখে, ঋষভের মনোভাব স্পষ্ট। পাল্টা চাপ ফিরিয়ে দাও বিপক্ষ শিবিরে। সেই কাজ করতে গিয়ে তাড়াতাড়ি আউট হলেও কুছ পরোয়া নেহি। দল পাশে আছে। মোদ্দা কথা, চাই ভয়ডরহীন ক্রিকেট। এবার ইংল্যান্ডে একমাত্র টেস্টে হারতে হলেও দুরন্ত শতরানে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ঋষভই। তৃতীয় ও নির্ণায়ক একদিনের ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমে ভারত যখন চার উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে, হার্দিকের সঙ্গে অসামান্য জুটিতে জয়ের মঞ্চ গড়েছেন ঋষভই। তবে যেটা আলাদা করে উল্লেখ করার, দিল্লির এই বাঁহাতি ব্যাটারের ইনিংসে ছিল দারুণ পরিণতবোধের ছাপ। প্রতিটা শটে ছিল গভীর আত্মবিশ্বাস।
কোনও সন্দেহ নেই, তিন অঙ্কের এই ইনিংস ঋষভকে অনেকটা এগিয়ে দিল। তিনি নিজেও বলেছেন এই ইনিংস সারা জীবন মনে রাখবেন। ঋষভ যেমনটা চাইছেন, রাজকীয় এই ইনিংসে তাঁর সম্পর্কে মানুষের ধারণা অনেকটাই পালটাবে। সৌরভ থেকে শচীন, বেঙ্গসরকার থেকে শাস্ত্রী, শেহবাগ থেকে যুবরাজ, সবাই মুগ্ধ ঋষভে। সৌরভ তো বলেই দিয়েছেন, ‘পন্থ যথার্থই ম্যাচ উইনার’। বদলে যাওয়া ঋষভে বুঁদ এদেশের ক্রিকেট অনুরাগীরাও।