প্রিয় ঋদ্ধি,
বিশ্বাস করুন, আনুষ্ঠানিকভাবে সিএবির কাছ থেকে এনওসি নেওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত পট পরিবর্তনের একটা ক্ষীণ আশা মনের মধ্যে ছিল। কিন্তু সেটা যখন হলো না, তারপর থেকেই মাথার মধ্যে কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেখান থেকেই এই পত্রের অবতারণা।
আচ্ছা ঋদ্ধি, এতদিন ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের জল হওয়া গায়ে লাগানোর পরে আমি নিশ্চিত যে ভারতীয় বোর্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাজ সিং দুঙ্গারপুর সম্পর্কে আপনার একটা সম্যক ধারণা আছে। চির-বিতর্কিত এই ব্যক্তিটি নির্বাচন কমিটির প্রধান হিসেবে ষোল বছরের শচীন তেন্ডুলকারকে যেমন ১৯৮৯-এর পাকিস্তানগামী প্লেনে তুলে দিয়েছিলেন তেমনি ওই সফরেরই কোন একটা সময় ভরা ড্রেসিংরুমের মধ্যে অধিনায়ক শ্রীকান্তকে শুনিয়ে মহম্মদ আজহারউদ্দিনের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন সেই বিখ্যাত প্রশ্ন, ‘মিঁঞা, কাপ্তান বনোগে?’ আরও কয়েকটা বছর এগিয়ে চলুন। ২০০২ এর শ্রীলঙ্কা সফর। ক্যান্ডি টেস্টের আগে একইরকম পরিস্থিতিতে অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির সামনেই রাহুল দ্রাবিড়কে অধিনায়ক হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন ভারতীয় বোর্ডের এক কর্তা, এবারেও ঘটনাস্থল ভারতীয় ড্রেসিংরুম। এরপর ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে সৌরভ-রাহুলের যুগলবন্দি ব্যাটিং শচীনবিহীন ভারতকে বিদেশের মাঠে টেস্ট জয়ের স্বাদ দেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনার কি মনে হচ্ছে যে উপরের ঘটনাগুলোয় সংশ্লিষ্ট ভারতীয় অধিনায়কদের অপমান করা হয়েছে? নাকি এঁরা চারিত্রিকভাবে এতটাই ভঙ্গুর ছিলেন যে অপমান সহ্য করেও মাঠ থেকে সরে না গিয়ে, মাঠেই জবাব দিয়েছেন?
![](https://willowrwill.files.wordpress.com/2022/07/saha-pti.jpg?w=400)
আর এখান থেকেই উঠে আসছে আর একটি সঙ্গত প্রশ্ন। আপনার বিরুদ্ধে যিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন তিনি সিএবি সহ-সচিব না হয়ে যদি বিসিসিআই সহ-সচিব হতেন তাহলে কি আপনি বলতেন যে আমি অপমানিত হয়েছি, ভারতের হয়ে আর খেলব না, বিসিসিআই এনওসি দিক, আমি অস্ট্রেলিয়া বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বাকি সময়টা খেলব? নির্দ্বিধায় বলা যায়, সেটা আপনি করতেন না, কারণ এটা প্রায় অসম্ভব, পরিস্থিতির বিচারে। আর এটাই যদি সঠিক হয় তাহলে পুরো ঘটনার মানে কি এটা দাঁড়াচ্ছে না যে, এখানে অন্য রাজ্যের হয়ে খেলার সুযোগ আছে বলেই আপনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন, নাহলে এই অপমানের জবাব আপনি মাঠেই দিতেন, যেমন দুনিয়ার সব ক্রীড়াবিদ দিয়ে থাকেন, আপনিও দিয়েছেন কদিন আগে আইপিএল-এ।
এটা ভাবার বিন্দুমাত্র কারণ নেই যে সিএবি সহ-সচিবের আপনার প্রতি করা মন্তব্যটি সমর্থনযোগ্য। বরং দৃপ্তকণ্ঠে তার প্রতিবাদ করি। যিনি ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তিনি সম্ভবত ঋদ্ধিমান সাহার খেলা কস্মিনকালেও দেখেননি। কিন্তু এটা আপনি কী করলেন প্রিয় ঋদ্ধি? আপনাকে দূর থেকে যতটা চিনি, বারবার মনে হয়েছে, ভারতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে যেভাবে আপনি আইপিএল-এ স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন সেটাই তো আসল ঋদ্ধি, যিনি সমস্ত উপেক্ষা, অবজ্ঞা, অপমানের জবাব মাঠে দেন। সিএবি সহ-সচিবের এই মন্তব্য শোনার থেকেও মন অধিকতর খারাপ হয়ে যায় যখন অন্য কোন এক রাজ্যের আধা-কর্তা দেশের হয়ে চল্লিশটা টেস্ট খেলা খেলোয়াড় সম্পর্কে বলেন যে ওকে নিয়ে কেন আমরা একজন প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটারের জায়গা আটকে রাখব? এই কথাটা সত্যি কি ‘ঋদ্ধিমান সাহা’ ডিজার্ভ করেন? কিন্তু পরিস্থিতি সেটাও শুনিয়ে দিল। আর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী যেমন সিএবি সহ-সচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য, তেমনি হয়তো দায়ী ময়দানের মুখোশ পরিহিত কিছু মানুষ, যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে এই সহ-সচিবকে পছন্দ করেন না এবং এই সুযোগে আপনার মতো নিপাট ভাল মানুষকে সামনে রেখে, বলা ভালো ঢাল করে ঘোলা জলে মাছ ধরে নিলেন। দিনের শেষে ক্ষতি হল বাংলা ক্রিকেটের।
এখনও বাংলার রনজি দলের ব্যাটিং অনেকাংশেই মনোজ-অনুষ্টুপ নির্ভর, এর বাইরে শাহবাজ বাদে কেউই সেই অর্থে ধারাবাহিক নন। এমতাবস্থায় শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলে, অন্তত একটা মরসুম অভিষেক পোড়লের মত তরুণ তুর্কিকে ঘসেমেজে তৈরি করে দেওয়া যেত না ঋদ্ধি? যেভাবে ভারতীয় দলের নেটে দিনের পর দিন পরিশ্রম করে গেছেন ঋষভ-এর কিপিং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য? দুনিয়ার এক নম্বর উইকেটরক্ষক হয়েও যেভাবে দিনের পর দিন প্রথম একাদশে জায়গা না পেয়ে মুখ বুঁজে তরুণ ঋষভকে তৈরি করেছেন তার সিকিভাগ মেন্টরশিপ এই টিন-এজ প্রতিভাবান কিপারটি পেলে হয়তো অনেক বেশী লাভবান হতো বাংলার আগামী ক্রিকেট। তাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আপনার এহেন বিদায়।
আপনার এহেন বিদায়ে রিক্ত হল বাংলার ক্রিকেট, সমৃদ্ধ হল বস্তাপচা ময়দানী রাজনীতি।
শুভেচ্ছাসহ,
আপনার এক সমর্থক