রাজস্থান মাঠে অরোরা ক্লাবের গেটের সামনে গোলপোস্ট করে কালীঘাটের প্লেয়াররা নিজেদের মধ্যে ফুটবল খেলছেন। খবর নিয়ে জানলাম যে তার আগে তাঁদের মধ্যে দৌড়োনো এবং প্রথাগত ক্রিকেট প্র্যাক্টিস হয়ে গিয়েছে। অফিস চাপে জর্জরিত প্রীতম চক্রবর্তী রীতিমতো বসে পড়েছেন মাটিতে, বলছেন “আরে কাকা! এতো চাপ দিওনা।”
লিগ ফাইনালে ওঠার পরে সেই ‘কাকা’ অর্থাৎ সঞ্জীব সান্যালের কঠোর পরিশ্রমী নীতি সম্পর্কে প্রীতম চক্রবর্তী বললেন “এতে আমরাই বেশী লাভবান হয়েছি।” মাঝখানে এসে গিয়েছে তিনবার নক-আউট স্তরে ওঠা এবং দু’বার ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা। সবটাই মাত্র তিনমাসের ব্যবধানে। এতো কিছু সম্ভব হওয়ার কারণ বিগত ফাইনালের শেষদিন ইডেন গার্ডেনসের ড্রেসিংরুমের বাইরের সাদা চেয়ারে বসে বিশ্লেষণ করলেন সঞ্জীব সান্যাল।
প্রশ্ন:- অবনমন থেকে সিএবির সব টুর্নামেন্টের শেষদিন অবধি খেলছেন। এই ব্যাপারটা সম্ভব করলেন কিভাবে?
সঞ্জীব:- প্লেয়াররা ভালো খেলেছে। তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল এবং আমরা একই ধরণের প্র্যাক্টিস সেটআপ রেখে গিয়েছি প্রায় বারো মাস ধরে।
প্রশ্ন:- এই বছর আপনি কালীঘাটের কোচিংয়ের দায়িত্ব পান। আপনার কোচিংয়ের মূলমন্ত্র কি ছিল?
সঞ্জীব:- আমার কাছে রেজাল্ট খুব সেকেন্ডারি। যদিও ক্লাব বা প্রত্যেকটা মহলেই রেজাল্ট গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমি প্রসেস বিশ্বাস করি। আমি যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি এবং আগে কোচিং করেছি সেইভাবেই কাজে করি। সেই প্রসেস নিয়ে প্রত্যেকটা প্লেয়ারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলি এবং তারা সেটা শোনে। আমরা এইভাবে পুরো বছর চলেছি। রেজাল্ট নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে মানুষ প্রসেস থেকে সরে যায়। ওদের বিভিন্ন মিটিংয়ে এই নিয়ে আমরা আলোচনা করি এবং আস্তে আস্তে সেটাই হয়ে যায় যে আমাদের এই কাজ করতে হবে। আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল যে ফাইনাল খেলতে হবে বা ট্রফি জিততে হবে। সেটা ছিল এবং প্রসেস ঠিক ছিল বলেই আমরা পেরেছি।
প্রশ্ন:- প্লেয়াররা কতোটা পরিশ্রম করেছে সারাবছর?
সঞ্জীব:- সবাই খুব সিন্সিয়ার। প্রথম কথা যে ক্যাটেগরির খেলোয়াড় আমি পাই তারা বেঙ্গল স্কোয়াডে ছিল। বাকিরাও নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। তারা বুঝেছে যে এই টিমে থাকতে গেলে তাদেরকেও একটা ওয়ার্ক প্রসেসের মধ্যে থাকতে হবে। একটা সময়ের পরে মনে হয়েছে সবাই এখানে থাকতে পারবে। লক্ষ্য সবসময় পরের স্তরে নিয়ে যেতে হবে এবং সেখানে দাপিয়ে খেলতে হবে। ক্লাব ক্রিকেট খেললে রঞ্জি ট্রফি এবং রঞ্জি ট্রফি খেললে দলীপ ট্রফি বা তারপরে ইন্ডিয়া খেলতে হবে। এইভাবে সেকেন্ড লেভেলে পৌঁছনোর চেষ্টা থাকতে হবে। সবাই চেষ্টা করেছে যা করেছে তার থেকে আরো ভালো করার। তাই সবার খেলার লেভেল বেড়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন:- দুইবার ফাইনালে হেরে গেলেন আপনারা। এটা কি ট্রফিভাগ্য না থাকার কারণ?
সঞ্জীব:- না আমার এটা সম্পূর্ণ মনে হয়না। আমরা ইস্টবেঙ্গলের সাথে আগে হেরেছি আর এই ম্যাচটা ভবানীপুরের সাথে হারলাম। কোথাও গিয়ে একটা আত্মতুষ্টি চলে এসেছে যে আমরা ফাইনাল খেলছি। আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো যে আমাদের থেকে ইস্টবেঙ্গল বা ভবানীপুর ভালো দল। ওদেরকে হারাতে আমাদের জেতার জন্য মরণকামড় থাকা উচিৎ ছিল। সেই কামড়টা একটা সময়ের পর হারিয়ে যায়। ভবানীপুর ম্যাচে প্লেয়াররা লিড হাতছাড়া হওয়ার পরে ক্লান্ত হয়ে যায়। আমার মনে হয় সেই জায়গাটা যদি তারা মেরামত করে এবং কিছু জুনিয়র বেশী থাকে এবং প্লেয়ারদের বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতা তৈরী হয় তবে তারা আরো ভালো খেলবে।
প্রশ্ন:- এরপরের বছর ট্রফি না পাওয়ার এই দুঃখ কাটাতে কি করা উচিৎ?
সঞ্জীব:- আমার মনে হয় প্রসেস রাখা উচিৎ। সেটা আমাদের দলের অধিকাংশ প্লেয়ার জানে যে আমরা কিভাবে খেলেছি বা প্র্যাক্টিস করেছি, কিভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেদের তৈরী করেছি সেগুলো সব খেলোয়াড়রাই জানে। সেই জানা আর কোথায় খামতি আছে সেই দুটোকে ব্যালান্স করতে পারলে ঠিক হবে। যে ক্যাটেগরির দল তৈরী হয়েছিল তাতে অনেকেই আগে ট্রফি জয়ী দলে খেলেনি তাই জানতো না যে কিভাবে ট্রফিজয়ী টিমে খেলতে হয়, সেই একটা সমস্যা ছিল যে। এখন কিছু খেলোয়াড় জেনে গিয়েছে যে কিভাবে আমরা এই ফাইনাল অবধি এসেছি এবং আশা করি এই সমস্যা আর হবেনা। সেই অপূরণীয় জায়গাগুলো সামনের বছর আরো ভালোভাবে আমরা ঠিক করতে হবে।
প্রশ্ন:- মরশুমের শুরুতে সাদা-বলে ভালো টিম ধরা হয়নি এবং লাল-বল স্পেশালিটি দল ধরা হয়েছিল। সেইখানে এতো ভালো সাদা-বলে পারফরমেন্স। কি বলবেন?
সঞ্জীব:- আমি এটার কারণ বলবো যে যখন আমাকে বলা হয়েছিল আমার তখন সাদা-বল, লাল-বল নিয়ে আলাদা করে কোনো চিন্তা আমার আসেনি। ক্রিকেট পুরোটা প্ল্যান। প্ল্যান যতো ভালো হবে দেখবে একটা দুর্বল দলও ম্যাচ জিততে পারে। প্ল্যানিং যদি ভালো হয় তবে এটা কোনো ফ্যাক্টর নয়। আমি বা আমাদের খেলোয়াড়রা কেউই এটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। তবে সাদা-বলে জিততে গেলে বেশ কিছু তরুণ প্লেয়ার দরকার হয় যাতে তারা তাড়াতাড়ি মুভ করতে পারে। সেইটাই কোথাও গিয়ে সেমি-ফাইনাল বা ফাইনালে রিফ্লেক্ট করেছে।