১২ রানের পুঁজি নিয়ে যখন সৌরাষ্ট্র ব্যাটাররা ব্যাট করতে নামলেন তখন প্রায় হারের সম্মুখীন বাংলা। শেষে যখন মুকেশ কুমারকে বিশ্বরাজ জাদেজার করা সপাটে পুল চলে গেল স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে সীমানার ওপারে, তখন উচ্ছসিত সৌরাষ্ট্র এবং কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অভিষেক পোড়েল ও বাংলা দল।
ঠিক গোটা ৯টা সপ্তাহ ধরে দুরন্ত ক্রিকেট খেলা দল ঠিক কোথায় পরাজিত হলো ফাইনালে? বেশ কিছু পয়েন্ট ভেসে আসে চোখের সামনে। আসুন সরাসরি দেখে নেওয়া যাক ট্রফির দূরত্ব বহাল তবিয়তে থাকার কারণ:-
*১) ওপেনিংয়ে বারবার বদল:-*
ওপেনিং স্লটকে ধরা হয় স্পেশালিস্টদের জায়গা। সেই জায়গায় মূলত তিন ওপেনারকে স্কোয়াডে রাখা হয় এবং মূল ম্যাচের স্বভাবতই বসেন একজন।
বাংলার হয়ে মরশুম শুরু করেন কৌশিক ঘোষ এবং অভিষেক দাস- দুই স্পেশালিস্ট ওপেনার, কিন্তু নাগাল্যান্ড ম্যাচের পর কৌশিক ঘোষকে বাদ দিয়ে আনা হয় সায়ন শেখর মন্ডলকে। সেই সায়ন দুটি ম্যাচের ব্যর্থ হলে বরোদা ম্যাচে সুযোগ পান অভিষেক দাস। এরপর তাঁরা ব্যর্থ হলে সুযোগ দেওয়া হয় করণ লালকে, যিনি টপ অর্ডারে কবে ব্যাট করেছেন তা জানেন না কেউ। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে সুযোগ দেওয়া হয় কাজী জুনাঈদ সাইফিকে এবং তিনি ব্যর্থ হলে সেমিফাইনালে আবার ফেরানো হয় করণ লালকে। লাল ব্যর্থ হলে ফাইনালে অভিষেক করানো হয় সুমন্ত গুপ্তকে। সুমন্তও হন ফাইনালে ব্যর্থ।
বাংলার রেকর্ড বই বলছে অভিমন্যু ঈশ্বরণ বাদে খেলা অন্য ওপেনারদের মধ্যে ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ রান কৌশিক ঘোষের(১০০) এবং তাঁদের মধ্যে হওয়া একটি হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন কৌশিক। তাঁকে হয়তো দেওয়া যেত একটি ম্যাচ।
প্রসঙ্গত দলের বাইরে অভিষেক রমণও।
*২) ভালো বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব:-*
বাংলার হয়ে দীর্ঘদিন অলরাউন্ডার হিসেবে ব্যাট-বল উভয়ক্ষেত্রে সার্ভিস দিচ্ছেন শাহবাজ আহমেদ এবং দুরন্তভাবে।
কিন্তু যখন অন্য একজন অলরাউন্ডারের খোঁজে থাকে বাংলা তখন বারবার হতে হয় ব্যর্থ। পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের সায়ন শেখর মন্ডল দক্ষতার দিকে ছিলেন শ্রেষ্ট, কিন্তু তার পারফরমেন্স তাঁকে করেছে ব্রাত্য। তার জায়গায় আসা আকাশ ঘটকের অবদান বল হাতে দুটি ইনিংসে কিছু ভালো স্পেল এবং ব্যাট হাতে সেমিফাইনালের প্রথম ইনিংসে সময় কাটানো ৪৮ বলে ১৭।
এছাড়াও স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার প্রদীপ্ত প্রামাণিক সুযোগ পেলেই পারফরমেন্স করেছেন বেশ, কিন্তু বেশ অধারাবাহিক সুযোগ পান তিনি।
*৩) ফাইনালে ভুল কম্বিনেশন:-*
ফাইনালের দল দেখলে যে প্রশ্ন সবার আগে মাথায় আসে তা হলো কেন একজন মিডল অর্ডার ব্যাটারকে অভিষেক করানো হলো? আর তাও ওপেনার হিসেবে? তিনি ব্যর্থ হবেন এমনটাই স্বাভাবিক।
দ্বিতীয় প্রশ্ন এইরূপ যে গত ম্যাচে ভালো পারফর্ম করা প্রদীপ্ত প্রামাণিক কেন বসবেন ফাইনালে? যদি ইডেন গার্ডেন্সের উইকেটই একমাত্র কারণ হয় তবে কেনই বা সৌরাষ্ট্র ইনিংসে হওয়া ১১০ ওভারের মধ্যে আকাশ ঘটক করবেন মাত্র ৭টি ওভার?
আপাতত ভুল শুধরে সামনের দিকে এগোতে আগ্রহী বাংলা। আবার একটি মরশুম, আরো একবার ট্রফির কাছে গিয়েও ট্রফি রইল অধরা। আজ ইডেন গার্ডেন্সের ব্যারিটোনে জোরালো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
“৩৩ বছর কেটে গেল
কেউ কথা রাখেনি।”