পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে

আজ ওড়িশার কটকের বারাবাটি স্টেডিয়ামে বাংলা এই মরশুমের তৃতীয় রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নামার পর স্কোরবোর্ড দেখে আপনার এটুকু মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক। স্কোরবোর্ড দেখতে যখন আপনি বিসিসিআই টিভি খুলবেন তখন দেখবেন আজ বাংলার হয়ে চন্ডীগড় দলের বিরুদ্ধে উজ্জল যাঁরা প্রত্যেকেই হলেন বাংলার অনেক দিনের সৈনিক।

আজ দিনের শুরুতে ওপেনার সুদীপ কুমার ঘরামী রানের খাতা না খুলেই যখন জগজিৎ সিং সান্ধুর বলে প্যাভিলিয়ান এর রাস্তাতে হাঁটলেন তখন বাংলার জন্য ম্যাচ কিছুটা মনে হচ্ছিলো চ্যালেঞ্জিং। আজ আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী ম্যাচে নিজের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাকেও যেন নিজের ধারাবাহিক ব্যর্থতা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করে গেলেন ঘরামী। এই মরসুমে এখনও অবধি মোট ৫ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৬২ এবং গড় মাত্র ১২.৪০ – যার দ্বারা এটা স্পষ্ট যে নিজের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পারফরমেন্স যেন কোথাও গিয়ে অনেক দূরে ফেলে এসেছেন তিনি।

সুদীপ ঘরামী আউট হওয়ার পর ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরন এবং ঋত্বিক রায়চৌধুরীর ওপর। অবশ্য তখন যেন সকালের ফাঁড়া কাটানোই প্রধান লক্ষ্য তাঁদের কাছে। এই জায়গায় প্রাথমিক লক্ষ্যে তাঁরা হলেন বেশ সফল। কারণ ঋত্বিক রায়চৌধুরী ব্যক্তিগত ১২ রানের মাথায় আউট হয়ে ফিরলেন তখন বাংলার স্কোরবোর্ডের ওভারের খাতা বলছে কেটে গিয়েছে ১৫টি ওভার।

সুতরাং বিগত দিনের মতো নতুন বল খেলার জন্য সায়নশেখর মন্ডলের আসা যখন অর্থহীন তখনই অভিমন্যু ঈশ্বরনের সঙ্গে যুক্ত হলেন অভিজ্ঞ অনুষ্টুপ মজুমদার। এই খবরের হেডলাইন যা করেছি তা সত্যি হওয়ার শুরুও এখান থেকেই। ক্রিজে এসে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় রানের গতি তাঁরা বাড়াতে লাগলেন দ্রুত। প্রায় প্রতি ওভারে স্বমহিমায় রান করতে থাকলেন তাঁরা এবং তাঁদের পার্টনারশিপে প্রতি ওভার প্রায় সাড়ে-চার রান উঠলো। অভিমন্যু ঈশ্বরনের ব্যাটে তাঁর অধিনায়কত্ব প্রাপ্তির পর থেকে বাংলার জার্সিতে যে রানের খরা ছিলো সেই অভিসম্পাত যেন আজ খণ্ডালেন নিজের হাতে এবং রঞ্জি ট্রফিতে ২০১৯ সালের পাঞ্জাব ম্যাচের পর করলেন সেঞ্চুরি। নিজের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পঞ্চদশ সেঞ্চুরিতে যখন তিনি পৌঁছলেন বাংলার স্কোরবোর্ডে তখন বেশ স্বস্তির ছায়া। যদিও দিনের শেষে তিনি জানিয়েছেন যে নিজের পারফরম্যান্সে তিনি খুশি নন। তাঁর সামনে সুযোগ ছিল বড় রান করার, যেটা হাতছাড়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে দলের রানও দিনের শেষে আরও ভদ্রস্থ হতো। অভিমন্যু এবং অনুষ্টুপ – বছর দুই আগে দিল্লি ম্যাচে ৩২২ তাড়া করে জেতানো দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের মধ্যে এই ম্যাচে ১৯৩ রানের পার্টনারশীপ করলেন। অভিমন্যু যখন জগজিৎ সিং সান্ধুর বলে লেগ বিফোর হয়ে ফিরছেন তখন তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে ১১৪ এবং বাংলার ২৩৫-৩ বলে দিচ্ছে গতদিন প্রেস কনফারেন্সে লালজির বলা ব্যাটিং শক্তির কথা কতটা সত্যি।

ছবি : সিএবি

কিন্তু বাংলা আর অপ্রত্যাশিত – এই দুটি কথা যে সমার্থক তা বাংলার ব্যাটাররাই প্রমাণ করলেন। ঈশ্বরন আউট হওয়ার মাত্র পাঁচ ওভার বাদেই নিজের সেঞ্চুরি মাত্র পাঁচ রানের জন্য হাতছাড়া করে বসলেন অনুষ্টুপ মজুমদার। নিজের ৯৫ রানের মাথায় গৌরব গম্ভীরের বলে আউট হয়ে ফিরে গেলেন তিনি। ক্রিজে মনোজ তিওয়ারিকে সঙ্গ দিতে আসা প্রতিশ্রুতিমান তরুণ অভিষেক পোড়েল অবধি রানের খাতা না খুলে নিজের অনুর্ধ-১৯ সতীর্থ হর্নুর সিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। ক্রিজে আসা শাহবাজ আহমেদ মাত্র ৬ রান করে ফিরে গেলেন সেই গৌরব গম্ভীরের বলে।

ঠিক এখানেই আবার ত্রাতা দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। একজন হলেন বহুযুদ্ধের নায়ক মনোজ তিওয়ারি এবং অপরজন প্রায় পাঁচ বছরের পর কামব্যাক করা সায়নশেখর মন্ডল। দিনের শেষ সেশনে যখন ম্যাচের গতিপ্রকৃতি প্রায় ১৮০° ঘুরে চন্ডীগড় অভিমুখে যাচ্ছে সেখান থেকে দিনের শেষ ১৫ ওভারে ৬১ রান তুলে তাঁরা ম্যাচে ফেরালেন বাংলাকে।

দিনের শেষে মনোজ তিওয়ারি অপরাজিত ৪২ রানে এবং সায়নশেখর মন্ডল ৪৩ বল খেলে করেছেন ৩৩। আগামীকাল সকালের চ্যালেঞ্জ সামলে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে বাংলার সামনে লিগে অপরাজিত শেষ করার সম্ভাবনা বেশ অনেকটাই। কোচ অরুন লাল বলছিলেন যে তাঁদের বোলিং, ফিল্ডিং বেশ ভালো হয়েছে এবং ব্যাটিং ভালো হলে বাংলা আরো শক্তিশালী হবে। আজ ব্যাটিং সঞ্চয় করেছে শক্তি এবং আপাতত দেখার বিষয় আগামীকাল শুরুতে মনোজ-সায়ন এবং পরে বল হাতে ঈশান-মুকেশ-নীলকণ্ঠরা কি করেন।