আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে বিপদ ডাকলেন না তো রাহানে!

চেতেশ্বর পূজারা একটা সময়ে টেস্ট ক্রিকেটকে আলোময় করে রাখতেন। রাহুল দ্রাবিড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ভারতীয় ক্রিকেটের ‘চিন্টু’-কে পরবর্তী দ্রাবিড় আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর নিখুঁত টেকনিক প্রশংসা আদায় করে নিত কিংবদন্তিদের। তবে সেই সময়েও পূজারা বাকি তারকাদের থেকে ব্যতিক্রমী ছিলেন। আসলে ভারতের মতো ক্রিকেট-পাগল দেশে তারকা ক্রিকেটার হওয়ার একটা বাড়তি সুবিধা রয়েছে। এ দেশে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটারের সইয়ের জন্যেও হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সেখানে, তিনি তো পূজারা।

অনুরাগীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। যদিও শো-অফের ক্রিকেটীয় দুনিয়ায় পূজারা বরাবরই বেমানান। একজন উঠতি ক্রিকেটার যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে নানান দিক থেকে নিজেকে বিপণনযোগ্য করে তুলতে পারেন, সৌরাষ্ট্রের এই ক্রিকেটার প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরও তা পারেননি। বরং বলা ভালো, করেননি।

গত মাসে দল ঘোষণা হয়েছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাতিল হয়ে যাওয়া পঞ্চম টেস্টের। স্কোয়াডে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে পূজারার। জুলাই পয়লায় শুরু বার্মিংহাম টেস্ট। নজর ছিল পূজারার দিকে। একটা লম্বা সময় ব্যাটে রানের খরা চলেছে পূজারার। ফর্ম খুঁজে বেড়িয়েছেন। শেষদিকে আত্মবিশ্বাসও তলানিতে ঠেকেছিল। তিনি যে কোনও মুহূর্তে যে বাদ পড়তে পারেন, সে-কথা অজানা ছিল না কারও কাছেই। শেষ পর্যন্ত ভবিতব্যই পরিণতি পেল। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাদই পড়লেন এক সময় ভারতীয় ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ।

একটা সময় ছিল, তারকা ক্রিকেটাররা নিয়ম করে কাউন্টি খেলতে যেতেন। আজহার, দ্রাবিড়, শচীন, সৌরভরা সুযোগ পেলেই যেতেন। ভারতীয় বোর্ডের অর্থভান্ডার যত ফুলে ফেঁপে উঠেছে, সূচী তত ঠাসা হয়েছে। আইপিএলের নিলামে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা মুখ ফিরিয়ে নিলে তল্পিতল্পা নিয়ে সোজা ইংল্যান্ড পাড়ি দেন পূজারা। তাঁর জীবনে মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। স্বপ্নের মরশুম কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন। আটটি ইনিংস খেলেছেন সাসেক্সের হয়ে। রান করেছেন ৭২০। আট ইনিংসে চারটি শতরান রয়েছে পূজারার নামের পাশে। তাঁর বাদ পড়া যেমন প্রত্যাশিত ছিল, ফিরে আসাও। পূজারা কখনও লোকে কি ভাববে, সে কথা ভেবে ঘুম নষ্ট করেননি। নাহলে আইপিএলে প্রায় এক দশক ধরে আকছার ব্রাত্য থেকে যাওয়া কেউ কলার উঁচিয়ে খেলতে পারে ভারতীয় দলে? এবারও যখন আইপিএল থেকে অবহেলাই পেলেন, নিজেকে আরও পুড়িয়েছেন সেই তাচ্ছিল্যের আগুনে।

পূজারা এলেন। তবে দরজা বন্ধই থেকে গেল অজিঙ্ক্য রাহানের জন্য। চোখের সামনে গত বছরের শুরুর ছবিটা ভেসে উঠছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব সামলানো অজিঙ্ক্য রাহানের বাড়ির সামনে সেদিন মেলা লেগে গিয়েছিল। তাঁকে স্বাগত জানাতে উপচে-পড়া ভিড় মেতেছিল সানাই, হরেক রকম বাদ্যিতে। তারপর ভারতীয় ক্রিকেটে ক্রমশ কোণঠাসা হয়েছেন। অবশ্যই ফর্মের কারণেই। এবং শ্রীলঙ্কা সিরিজে পূজারা-ঋদ্ধিমান সাহার মতো তিনিও বাদ পড়েন। তাঁর করা শেষ ভুলটা ছিল আইপিএল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে নজর কাড়তে পারলে ‘ভুল’ শব্দটা প্রয়োগের জন্য নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হত। সেই আশঙ্কা এই মুহূর্তে নেই। কারণ, সদ্যসমাপ্ত আইপিএলে তিনি ডাহা ফেল। রাহানে উপলব্ধি করতে পারলেন না, প্রশ্নচিহ্নটা তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার ঘিরে। তিনি আইপিএল মোহে ছুটলেন। ইংলিশ আবহাওয়ায় নিজেকে মেরামতির কাজে ব্রতী হলে তাঁর কেরিয়ারের জন্য তা মঙ্গলজনক হত।  তিনি যদি ব্যর্থও হতেন, নির্বাচক বা টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে একটা বার্তা যেতে পারত যে, দলে ফিরতে কতটা মরিয়া তিনি। এর মধ্যে চোট পেয়ে বসেছেন আইপিএলের একেবারে শেষ লগ্নে এসে। সব মিলিয়ে অজিঙ্ক্য রাহানের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার অন্ধকারে। আশার আলো একটাই। তাঁকে রাহুল দ্রাবিড় এসে বলে দেননি যে, ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্বিশতরান করলেও ভারতীয় দলের দরজা আর কখনও খুলবে না। যেমনটা ঋদ্ধিমান সাহাকে সরাসরি বলে দেওয়া হয়েছিল।