নদীয়া সুপার ড্যাজলার্স এবং হুগলী রিভারসের মধ্যে ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান-ডে টুর্নামেন্ট ফাইনাল চলছে ইডেনে। সচিন যাদব, অর্ণব নন্দীর দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ২৫৪ রানের মোটামুটি একটা নিরাপদ লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে নদীয়ার সামনে।
ব্যাট করতে নামলেন কিঞ্চিৎ অনভিজ্ঞ ওপেনার অর্ণব শিকদার এবং সৌম্যজিৎ রায়। ইনিংসের প্রথম বলটা অফ-স্টাম্পের বাইরে এবং ছাড়লেন অর্ণব। বেশ কিছুক্ষন অফ-স্টাম্প এবং ফোর্থ স্টাম্প লাইনে বল ছাড়ার পরে একটি হঠাৎ ভেতরে আসা একটি কাটার মিডল-স্টাম্পে পেয়ে গেলো অর্ণব শিকদারের পা।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ভবানীপুর ক্লাবের নেটে। ব্যাট করছেন অভিষেক দাস এবং বল হাতে এগিয়ে আসছেন লম্বা বাঁ-হাতি পেসার। অফ-স্টাম্পের সামান্য বাইরে আসা বল যখন একটু লেট্ খেলার চেষ্টা করলেন অভিষেক তখনই সেটা হঠাৎ এসে নড়িয়ে দিল অফ-স্টাম্প। নেট শেষে বেরিয়ে আসার পরে শুভ্রজিৎ দাস ও প্রদীপ্ত প্রামানিকের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক দাস শুধু বললেন “হঠাৎ কাট করে ঢুকে গেল।”
হুগলী জেলার দুর্গেশ দুবেকে খেলার এই এক বিড়ম্বনা। সমান পেসে আপনার আন্দাজ করা লাইনে খেলতে গিয়ে সেটা কখন যে ‘হঠাৎ কাট’ করে ঢুকে এসে আপনাকে বিপদে ফেলবে তা আপনি বুঝতেও পারবেননা। এই চোরাগোপ্তা আক্রমণ বা ময়দানী ভাষায় চোরা-পেস দুর্গেশকে করেছে অতুলনীয়। লাল বলে যেমন নতুন বলে দুর্গেশ দুর্দ্ধর্ষ, তেমনই লিমিটেড ওভারেও তাঁকে মারা হয়ে দাঁড়ায় দুঃসাধ্য।
চলতি বছর লিগের সেমি-ফাইনাল ম্যাচে মোহনবাগান দলের বিরুদ্ধে তিনি উইকেট তুলেছেন চার টপ- অর্ডার ব্যাটারের। নামগুলি হলো প্রিনান দত্ত, সুদীপ চ্যাটার্জী, অনুষ্টুপ মজুমদার, গীতিময় বসু। এর মধ্যে সুদীপ চ্যাটার্জীকে সরাসরি পায়ে বন্দী করেন দুর্গেশ এবং তিনি যে বাঁ-হাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে একজন অতি ভয়ানক বোলার তা প্রমাণ করেছেন বারবার। শুধু সেমি-ফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধেই নয়, চলতি লিগ ফাইনালে কালীঘাটের দুই ইন-ফর্ম বাঁ-হাতি ব্যাটার শ্রেয়াংশ ঘোষ, দুরন্ত সেট ঋতম পোড়েলকে ফিরিয়েছেন তিনি যা বেশ ভালোভাবে ম্যাচে ফিরিয়েছে ভবানীপুরকে।
আদতে খুব চুপচাপ একজন ছেলে দুর্গেশ। কিন্তু হাতে লাল বল উঠে এলেই যেন ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আক্রমণাত্মক একটা ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান।’ প্রায় ১০-১২ পা দৌড়ে এসে ছোট্ট জাম্প এবং সাইড থেকে আসা বলগুলোর মধ্যে কোনটা যে যাবে অফ-স্টাম্পের বাইরে বা কোনটা হঠাৎ কাট করে এসে আপনার ড্রেসিংরুমে ফেরার ঠিকানা লিখে দিয়ে যাবে তা জানেনা কেউই। এই অনিশ্চয়তাই আজ দুর্গেশকে নিয়ে গিয়েছে বড়ো জায়গায়। একটা সময় মূল ক্রিকেট থেকে সরে আসা দুর্গেশকে কলকাতার ক্লাবে নিয়ে আসেন অভিজ্ঞ অর্ণব নন্দী এবং ভবানীপুর কোচ আব্দুল মোনায়েম তাঁকে করে নেন নিজের দলের সদস্য। বিগত তিন বছর ধরে তাঁকে দলের অন্যতম স্থায়ী সদস্য বলা যায় এবং স্ট্যাট বলছে কতটা প্রভাবশালী তিনি।
দুই বছর আগে বাংলার রনজি দলে যখন বাঁ-হাতি পেসার খোঁজা হচ্ছিল তখন উঠে এসেছিল গীত পুরী এবং রোশন সিংয়ের নাম। এরপরে চলতি মরশুমে নাম ওঠে সদ্য অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফেরা পেসার রবি কুমারের। পারফরমেন্স এবং স্কিলের দিক থেকে দেখলে আগামী মরশুমের দল ঘোষণার সময়ে কিন্তু অবশ্যই একটি জায়গা দাবি করতেই পারেন দুর্গেশ কুমার দুবে।