নির্বাচন না হোক, খেলা হোক কলার তুলে


প্রথম বল অফ-স্টাম্পের বাইরে, লিভ। পরেরটা মিডল-স্টাম্পে একটু শরীর-ঘেঁষা ডেলিভারি এবং পেছনের পায়ে ডিফেন্স এবং এইভাবেই বেশ কিছুক্ষন কঠিন ডেলিভারির সামনে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই পেয়ে গেলেন পায়ের সামনে এবং সামনের পায়ে এসে সরাসরি একটা অন-ড্রাইভ বল পৌঁছে দিল লং-অন বাউন্ডারির দিকে এবং প্রিনান দত্ত হলেন অফ-দ্য-মার্ক।


এইভাবেই আপাত কঠিন সময় ক্রিজে কাটিয়ে তারপর একটা সুযোগসন্ধানী শট এবং সেটাই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর ফর্মে ফিরে আসার মূলমন্ত্র। বর্তমান মরশুমে তাঁর লাল-বলের ক্রিকেটে পারফরমেন্স বলছে লিগে মোট চারটি সেঞ্চুরি করেছেন প্রিনান এবং একটি সেঞ্চুরি করেছেন নক-আউট পর্যায়ে। ওয়ান-ডে টুর্নামেন্টে এরিয়ান ক্লাবের বিরুদ্ধে ৯৪ বলে ১৩২ রান করে মোহনবাগানকে ৩৮৩ রানে পৌঁছে দেন।
মরশুম তিনি শুরু করেন জর্জ টেলিগ্রাফ দলের বিরুদ্ধে ১৪১ রানের ইনিংস খেলে এবং তারপর পাইকপাড়া স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে করেন ১৩০ রান এবং এই রানের মাহাত্ম্য অনেকটাই কারণ ইনিংসের শুরুতেই জয়জিৎ বসু এবং আদিত্য প্যাটেলকে হারিয়ে ধুঁকছিলো মোহনবাগান। তারপরে আবার ভবানীপুর ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরপরে আবার এরিয়ান ক্লাবের বিরুদ্ধে ১২২ রান করেন তিনি এবং লিগে পাঁচ ম্যাচে চারটি শতরান করে ফেলেন অনায়াস ভঙ্গিতে।
একসময়ে বাংলা দলের হয়ে অনুর্ধ-২২ স্তরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন প্রিনান দত্ত। তারপরে খেলেছেন মোহনবাগান, ভবানীপুর ও অন্যান্য বড়ো ক্লাবে। রান করেছেন প্রচুর এবং ক্লাব-স্তরে নিজের যোগ্যতাতেই হয়েছেন অনেক বড়ো নাম। এমনকি বর্তমানে অভিমন্যু ঈশ্বরণ-এর সঙ্গে ব্যাটিং ওপেন করে মোহনবাগান দলকেও যথেষ্ট নির্ভরতা দিচ্ছেন। শুধু লাল-বল নয় বরং সাদা-বলের ওয়ান-ডে ফরম্যাটেও সেঞ্চুরি করেছেন এবং ৮৪ রানের ইনিংস খেলেছেন যেগুলো মোহনবাগানকে এনে দিয়েছে কাঙ্খিত জয়।
বিগত ১৯ বছরের কেরিয়ারে ইস্টবেঙ্গল খেলেছেন তিন বছর, মোহনবাগান দলে পাঁচ বছর, ভবানীপুর ক্লাবে চার বছর এবং স্পোর্টিং ইউনিয়ন দলে ছিলেন পাঁচ বছর। স্পোর্টিং দলে মোট পাঁচ বছর খেলে করেন ১৭টি সেঞ্চুরি যার মধ্যে ২০১৮-১৯ মরশুমে করেছিলেন পাঁচটি সেঞ্চুরি।
লক্ষ্য একটাই। খেলা যেন হয় কলার তুলে অর্থাৎ যতদিন খেলছেন ততদিন যেন কেউ জায়গা নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারে। তাতে বড়ো স্তরে জায়গা না পাওয়া আটকে থাকুক, ক্ষতি নেই। কিন্তু যতদিন যে স্তরে খেলছেন সেই জায়গায় যেন তাঁর নাম হয় অপরিহার্য। এই মরশুমে হয়েছেন মোহনবাগানের নির্বাচিত সেরা ক্রিকেটার। আসন্ন ২৯ জুলাই পুরস্কার পাবেন এবং সেটা অনেক বড়ো প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তিই তো কলার তুলে খেলার পুরস্কার। যা ছিনিয়ে নিতে পারবেনা কেউ।