এক্সক্লুসিভ প্রিনান দত্ত

প্রায় দুই দশক ধরে প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট। ২০০০-০১ মরশুমে বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে (অনুর্ধ-১৬ স্তরে) প্রথম শুরু বাংলার বয়সভিত্তিক দলে। সেই বছর ২৫.৭৫ গড়ে ১০৩ রান করলেও পরবর্তী মরশুমের বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে একটি ৯২ সহ করেন ২৬১ রান। এরপরে ২০০৪-০৫ সালের কোচবিহার ট্রফিতে ৩৩৮ রান করে তিনি ছিলেন বাংলার সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক এবং ২০০৭-০৮ সালের অনুর্ধ-২২ সি. কে. নাইডু ট্রফিতে ৫৬ গড়ে ২৮০ রান করেন প্রিনান এবং এটিও টুর্নামেন্টে বাংলার সর্বোচ্চ রান।

বাবা প্রদীপ দত্ত জাতীয় স্তরে খেলেছিলেন ফুটবলে এবং তাঁর উত্তরসূরি হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্লাব ক্রিকেটে রান করে যাচ্ছেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলে শুরুর পর,মোহনবাগানে কেটেছে তিনটি বছর এবং এরিয়ান্স, ইউনাইটেড স্পোর্টিংয়ের মতো বড়ো ক্লাবে খেলেছেন, ভবানীপুর খেলেছেন প্রায় চার বছর। এমন মরশুমও কাটিয়েছেন যেখানে ১৩০০-১৪০০ রান পেয়েছেন। চলতি সুপার ডিভিশন লিগে মোহনবাগানের হয়ে ৫টি ম্যাচে সংগ্রহ ৫১৬ রান, পেয়েছেন চারটি সেঞ্চুরি। একমাত্র পুলিশ এসি ম্যাচের ২২ রানের ইনিংস বাদ দিলে ঝকঝকে পুরো মরশুম।

ম্যাচের শেষে “উইলোর উইল”-কে ধরা দিলেন প্রিনান দত্ত।

প্রশ্ন:- সুপার ডিভিশন লিগে ৫টি ম্যাচে ৪টি সেঞ্চুরি। কতটা ভালো লাগছে?

প্রিনান:- ভালো তো লাগছে অবশ্যই। আমরা পেশাদার হিসেবেই ক্রিকেট খেলছি এবং পেশাদার হিসেবে এটাই আমাদের কর্তব্য আমাদের খেলা নিয়ে যে যতদিন খেলব যেন সৎভাবে খেলতে পারি এবং পারফর্ম করতে পারি। ভালো লাগে পরিশ্রমের ফল পেলে।

প্রশ্ন:- দুটো বছর করোনার জন্য লাল-বলের ক্রিকেট হয়নি। এইসময় কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছ?

প্রিনান:- আমার একটা প্লাস পয়েন্ট হল আমার বাড়ির কাছেই প্র্যাক্টিস করতে পারি এবং ওখানে বাংলা দলের অনেক ক্রিকেটার প্র্যাক্টিস করতে আসেন। ওখানে প্র্যাক্টিস করতাম এবং লকডাউন দেখতে গেলে তিন-চার মাস ছিল, তাছাড়া প্র্যাক্টিস বন্ধ ছিল না এবং সময় বের করে প্র্যাকটিস করতে পেরেছিলাম। আমি কখনোই বলবো না যে বসে ছিলাম।

প্রশ্ন:- দুই বছর সাদা-বল থেকে লাল-বলে মানিয়ে নেওয়া কতটা কঠিন?

প্রিনান:- লাল-বলে তো ছোটবেলা থেকেই খেলেছি, তবে হ্যাঁ লাল-বলে অনেক পার্থক্য আছে এবং আমার মনে হয় এটা মেন্টাল সেটআপ। সুপার লিগ শুরু হতো ডিসেম্বর থেকে এবং সেই তুলনায় লাল-বলে এখন খেলার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। এছাড়া মোহনবাগানে প্র্যাক্টিসের সুবিধা বেশ ভাল এবং ভাল বোলার ফেস করলে খেলায় এক স্টেপ এগিয়েই থাকে।

প্রশ্ন:- তুমি ওপেনিংয়ে বেশী স্বচ্ছন্দ এবং অনেক রান করেছ। ওপেনিং ছাড়া অন্য জায়গায় না খেলতে পারাটা কে কি নিজের লিমিটেশন বলবে?

প্রিনান:- আমার বলতে অসুবিধা নেই। আমার কোচ গোপাল বসু বলতেন, ব্যাট করলে ওপেন করবে এবং বুফে না থাকার সময় বিয়েবাড়িতে প্রথম ব্যাচে খেয়ে নেওয়াই দস্তুর ছিলো। এই চিন্তাভাবনাতেই বড় হয়েছি।

প্রশ্ন:- এতো রান করার পরেও মোহনবাগান দলে পুরো টিম থাকলে সুযোগ আসে না। এটা কতটা খারাপ লাগে?

প্রিনান:- আমি জেনে শুনেই এসেছি। এখানে অভিমন্যু ঈশ্বরন, ইন্ডিয়া ‘এ’ প্লেয়ার, সে থাকলে তো বসতে হবেই। চেষ্টা করছি যাতে ঈশ্বরণ না থাকলে ক্লাব ওর অভাব বোধ না করে। খেলাবে কি খেলাবে না এটা আমার হাতে নেই এবং না খেলালেও আফসোস নেই।

প্রশ্ন:- একসময় তরুণ বয়সে রান করেও ডাক পাওনি। আক্ষেপ আছে?

প্রিনান:- এক একজন সিলেক্টরের এক একটা মত। সুতরাং যা হয়ে গিয়েছে ভেবে তো লাভ নেই। ক্রিকেটে এসেছি ভালবাসি বলেই এবং যতদিন পারবো খেলব। এই যে তোকে ইন্টারভিউ দিচ্ছি, ভাল না খেললে তো হতো না। এগুলোই প্রাপ্তি।

প্রশ্ন:- নতুন ছেলেদের কি বলবে?

প্রিনান:- ভয় ছাড়া খেলতে। এখনকার ছেলেদের প্রচুর চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মাঠের ভেতরের চাপ ও বাড়ির চাপ যদি থাকে তবে সে বাইরেই আউট হয়ে যায়। বাবা-মা দের বলব আউট হলে বকাবকি না করে সাহস দিতে।

প্রশ্ন:- এই চাপ কতটা তোমার কাছে এসেছে?

প্রিনান:- না, কারণ আমার বাবা ফুটবলে ইন্ডিয়া খেলেছে। আমি শূন্য করলেও বিরিয়ানি খেয়েছি এবং ১০০ করলেও হয়তো ডাল-ভাতই খাইয়েছে।