মাহি–ধামাকা, ঝলমলে কলকাতা এবং আরও ঝড়ের অপেক্ষা

‌২০১১–র বিশ্বকাপ ফাইনাল। ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে আছড়ে পড়েছিল তাঁর সেই বিখ্যাত ছয়। আবেগে, উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে কমেন্ট্রি বক্সে রবি শাস্ত্রী বলে উঠলেন, ‘‌ধোনি ফিনিশেস অফ ইন স্টাইল!‌ ইন্ডিয়া লিফট দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ আফটার টোয়েন্টি এইট ইয়ার্স’‌। এগারো বছর পর শনিবার রাতে ওয়াংখেড়েয় পুরনো সেই স্মৃতি মনে করাচ্ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এবারের আইপিএলের প্রথম ম্যাচেই মাহির ব্যাট মেজাজে। ৩৮ বলে অপরাজিত ৫০। সাতটি চার, একটি ছয়। গত দুই আইপিএলে ব্যাট হাতে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। এবার প্রথম ম্যাচেই ধোনি–ধামাকা। বয়স বাড়ছে, চেহারা ভারি হয়েছে, রিফ্লেক্স কমছে। তবুও তিনি ধোনি। বিপক্ষ শিবিরে ভয় ধরাতে ধোনি নামটাই যথেষ্ট। ম্যাচে কলকাতা জিতেছে, কিন্তু নতুন অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার তো কোনও রাখঢাখ না রেখেই বলে দিয়েছেন, ধোনি ব্যাট করলে আতঙ্কে থাকতে হয়!‌ কারণ শুরুতে ধুঁকতে থাকা চেন্নাইকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন ধোনিই। বিরতিতে সুনীল গাভাসকার বললেন ধোনির ইনিংস অসাধারণ, ওর জন্যই লড়াই করার মঞ্চ পেল চেন্নাই। রবি শাস্ত্রীর মতে বল থমকে আসছিল, তার মধ্যেও কার্যকরী ইনিংস ধোনির, শেষ পর্যন্ত বলে চোখ রেখে শট নিয়েছে। এবার প্রতিযোগিতার শুরুতেই নেতৃত্বের ব্যাটন রবীন্দ্র জাদেজার হাতে তুলে দিয়েছেন ধোনি। তাই অনেকটা চাপমুক্ত থেকেই নিজের ব্যাটিংয়ে মন দিতে পারবেন। চেন্নাই ও মাহি অনুরাগীরা তাকিয়ে থালাইভার ব্যাটিংয়ের দিকে।

ধোনির ব্যাটিংয়ের সময় আতঙ্ক থাকলেও প্রথম ম্যাচে দারুণ জয় পেল কলকাতা। নতুন অধিনায়ককে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। শ্রেয়সের ইতিবাচক মানসিকতার প্রতিফলন পড়েছে গোটা দলেই। দল নির্বাচনে বুদ্ধিমত্তার ছাপ রেখেছেন শ্রেয়স, মাঠে ক্যাপ্টেনের শরীরীভাষাও ছিল ঝকঝকে। অবশ্যই নজর কাড়লেন দুই ‘‌প্রবীণ’‌। উমেশ যাদব এবং অজিঙ্কা রাহানে। দু’জনেই মূলত লাল বলের ক্রিকেটার। সেই দু’‌জনই তাক লাগিয়ে দিলেন। ঋতুরাজ ও কনওয়েকে ফিরিয়ে বোলিংয়ে আগুন ঝরালেন ম্যাচের সেরা উমেশ। অন্য দিকে ব্যাট হাতে চমক দিলেন রাহানে। ওপেন করতে নেমে ৪৪ রানের ঝলমলে ইনিংস। তাঁর গায়ে লেগে গেছে টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা। তাও লাল বলের ক্রিকেটে ছন্দ হারিয়ে বাদ পড়েছেন জাতীয় দল থেকে। রাহানেকে যখন নিলামে কলকাতা নিয়েছিল, অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। দুমধাড়াক্কা ক্রিকেটে এইমুহূর্তে তিনি কি মানানসই?‌ কেউ কেউ বললেন রাহানেকে নিয়ে একটা ফাটকা খেলতে চাইছে কলকাতা। কিন্তু আলোচনা–জল্পনা যাই হোক না কেন, এবারের আইপিএল মঞ্চে রাহানে নিজেকে নতুনভাবে চেনাতে মরিয়া থাকবেন, এটা স্পষ্ট। চেন্নাইয়ের বোলারদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিটা শটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই জয়ে মোমেন্টাম পেল কলকাতা, তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। 

এবারের আইপিএল শুরু থেকেই জমজমাট। দ্বিতীয় দিনের দুটো ম্যাচই ছিল আকর্ষণীয়। কলকাতা থেকে দিল্লিতে গিয়ে যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেলেন কুলদীপ যাদব। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কৃপণ বোলিংয়ে নিলেন তিন উইকেট। পেয়েছেন ম্যাচের সেরার পুরস্কার। আর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দিল্লিকে হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন অক্ষর প্যাটেল–ললিত যাদব জুটি। অন্য ম্যাচে বেঙ্গালুরুর ডুপ্লেসি–বিরাট–দীনেশ কার্তিকের মারকাটারি ব্যাটিংকে ম্লান করে দিয়ে দুরন্ত জয়ে নজর কাড়ল মায়াঙ্কের পাঞ্জাবও। সৌজন্যে ওডেন স্মিথের ৮ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ঝড়। আগামী দু’‌মাস চেনা–অচেনা, নামী–অনামী ক্রিকেটারদের ব্যাটে এরকম অনেক ঝড়েরই সাক্ষী থাকব আমরা।