টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দিনেই এশিয়া কাপের জন্য ১৭ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। স্কোয়াডে প্রতিষ্ঠিত ওপেনার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন এনামুল হক বিজয় আর তরুণ পারভেজ হোসেন ইমন। বিকল্প ওপেনার হিসেবে তাই অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের নাম বিবেচনা করছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। বিবেচনায় আছে শেখ মাহেদি হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজের নামও।
সর্বশেষ জিম্বাবোয়ে সফরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরিবর্তে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। নেতৃত্বের হাত বদল হলেও বদলায়নি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্ট পারফর্মেন্স। সাথে যুক্ত হয়েছে ইনফর্ম ওপেনার লিটন দাসের চোট। তাতেই এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন স্বেচ্ছায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা তামিম ইকবাল এই ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলে দেখা দিয়েছে ওপেনার সংকট। জিম্বাবোয়ে সফরের স্কোয়াডে ছয় ওপেনার থাকলেও সফল নন কেউ। একরকম বাধ্য হয়েই তাই মিডল বা লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলা ব্যাটারদের ইনিংস উদ্বোধনে খেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।
সোমবার (১৫ আগস্ট) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন খালেদ মাহমুদ। তখনই বিকল্প ওপেনার কে হতে পারেন তার ইঙ্গিত দেন তিনি।
বলেন, “স্বীকৃত ওপেনার (এনামুল হক) বিজয় ও (পারভেজ হোসেন) ইমন। তবে অন্য অনেকেই আছে যারা লোকাল ক্রিকেটে ওপেনিং করেছে। মুশফিক হতে পারে, সাকিবও হতে পারে। মিরাজও হতে পারে, শেখ মেহেদিও ওপেনার হতে পারে। অনেক গুলো অপশন আছে আমাদের হাতে।”
এদিকে খালেদ মাহমুদের বেছে নেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে মেহেদি হাসান মিরাজ ছাড়া বাকি তিনজন একবার করে ওপেনিংয়ে খেলেছেন। সাকিব, মুশফিক কিংবা মাহেদিরা কেউই ওপেনিংয়ে করতে পারেননি বলার মতো সাফল্য। তবুও তাদের উপর ভরসার রাখার পাশাপাশি বানাতে চান নিজেদের তুরুপের তাস।
স্কোয়াডে থাকা নিয়মিত ওপেনার এনামুল হক বিজয় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড রান করে জাতীয় দলে ডাক পেলেও টি-টোয়েন্টিতে এখনও নিষ্প্রভ। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটে ধরে রেখেছেন ফর্মের ধারাবাহিকতা। সম্প্রতিই জাতীয় দলে ডাক পাওয়া পারভেজ ইমন অভিষেক ম্যাচ খেলেছেন জিম্বাবোয়েতে সেখানে এক ম্যাচে সুযোগ পাওয়া ইমন এখনো খুলতে পারেননি নিজের রানের খাতা।
এশিয়া কাপে নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। পুরাতন মোড়কে নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাকিব আল হাসান। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগে অবশ্য তৈরি করেছিলেন একধাপ ঝামেলা।
বাংলাদেশের সরকারি ও ক্রিকেট বোর্ডের আইনে জুয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়া আইনত নিষিদ্ধ হলেও সাকিব পরোয়া করেননি এই নিয়মের। আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছিলেন ‘বেট উইনার’ নামক একটি জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানের নিউজ এজেন্সির সাথে। পরে অবশ্য বিসিবি চাপে সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সাকিব।
তবুও কেন সাকিবকেই দেয়া হলো অধিনায়কের দায়িত্ব? এমন প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ। তার মতে এখন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানই।
বলেন, “ বোর্ডের একটা অবস্থান ছিল যে সাকিব যেহেতু এই ফরম্যাটে বেশি অভিজ্ঞ, ওর অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ওর পারফরম্যান্স সব মিলিয়ে আমাদের মনে হয়েছে সেই-ই সেরা পছন্দ সত্যি কথা বলতে গেলে। বিষয়টা এমন না যে রিয়াদ খারাপ, তবে হয়তো রিয়াদের চেয়ে সাকিবকে সেরা বিকল্প মনে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ আমরা চাই বাংলাদেশ দলের সাফল্য। সাফল্যটা কীভাবে আসবে কার হাত ধরে আসবে আমরা জানি না। মনে হয়েছে সাকিব আমাদের সেরা বিকল্প। আমি বিশ্বাস করি সাকিব সেরা বিকল্প।”
এশিয়া কাপের পর নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করবেন সাকিব আল হাসান। বিসিবির বিভিন্ন সূত্রমতে বাড়তে পারে সাকিবের দায়িত্বের মেয়াদ। শেষ পর্যন্ত কি হয় তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত নভেম্বর পর্যন্ত।