অফ স্ট্যাম্প ঘেঁষা ফুল লেংথে এলো একটি অফস্পিনারের বল। ব্যাটার সামান্য সামনের পায়ে এলেন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলটিকে সরাসরি তুলে দিলেন মিড অফ ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে। রোহন ব্যানার্জীকে দেখেই মনে হলো সেদিন তিনি বেশ ভালো ছন্দে এবং এভাবেই শুরু করার পরে নেটে আরো ১৫ মিনিট কাটালেন বেশ ভালো শট খেলে।
একদিন রেকর্ড ঘাঁটতে গিয়ে চোখে পড়েছিল যে বাংলার হয়ে অভিষেক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা খেলোয়াড়দের মধ্যে বাসিল ম্যালকমের ১৮১ এর পরেই রয়েছে রোহন ব্যানার্জীর নাম। ২০০৯-১০ মরশুমের রঞ্জি ট্রফিতে সার্ভিসেস দলের বিরুদ্ধে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলে এই লিস্টে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন রোহন। কিন্তু কিভাবে দুর্গাপুর ক্রিকেট ক্লাবে শিবনাথ স্যারের এই ছাত্র গেলেন রনজি ট্রফি অবধি? কিভাবেই বা হয়েছিলেন বিরাট কোহলির অনুর্ধ-১৯ ভারতীয় দলের সদস্য?
মাত্র এগারো বছর বয়সেই অনুর্ধ-১৪ বাংলা দলে খেলে ফেলেন রোহন ব্যানার্জী। ত্রিপুরার বিরুদ্ধে জাতীয় অনুর্ধ-১৪ টুর্নামেন্টে অভিষেক ম্যাচেই ৬৫ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এরপরে ওড়িশা এবং সিকিমের বিরুদ্ধে অনেক বেশী বলের ইনিংস খেলার পরেও রান পাননি কিন্তু বিহারের বিরুদ্ধে দুটো উইকেট তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার পরে ১৬৯ বল খেলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন রোহন। পরের বছর জাতীয় অনুর্ধ-১৪ টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচে ২৬২ রান সংগ্রহ করেন রোহন এবং ফলত কলকাতা ময়দানে কোনো সেকেন্ড ডিভিশন ম্যাচে না খেলেই প্রথম ডিভিশন ক্রিকেটে চলে আসেন মাত্র তেরো বছর বয়সে। এরপরে ২০০২-০৩ সালের পলি উমরিগর ট্রফিতে ৭ ইনিংসে ৩২৫ রান করেন রোহন। যার মধ্যে বিহারের বিরুদ্ধে একটি সেঞ্চুরি এবং আসামের বিরুদ্ধে একটি হাফসেঞ্চুরিও ছিল।
পরের বছর পলি উমরিগর ট্রফিতে ৮ ইনিংস থেকে সংগ্রহ করেন ২৯৮ রান এবং ছিল একটি সেঞ্চুরি। কিন্তু এরপরে ২০০৪-০৫ সালের বিজয় মার্চেন্ট ট্রফি ছিল একেবারেই পার্পেল প্যাচ। ১১টি ইনিংস ব্যাট করে ৪৮ গড়ে ৪৩২ রান করেন একটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফসেঞ্চুরিসহ। উল্লেখ্য সেই বছর বিজয় মার্চেন্ট ট্রফির ফাইনালে গুজরাটের বিরুদ্ধে একটি ৮২ রানের ইনিংস খেলেন রোহন। চূড়ান্ত ব্যাটিং ভেঙ্গে পড়ার মধ্যেও একমাত্র উজ্জ্বল সেদিন ছিলেন তিনিই। পরবর্তী বছরের বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে ৬৭.৫০ গড়ে দুটি হাফসেঞ্চুরি সহ রোহন করেন ২৭০ রান। এরপরে ২০০৬-০৭ মরশুমের কোচবিহার ট্রফিতে রাজস্থান ম্যাচ হয় একটি অত্যন্ত ‘লো স্কোরিং এনকাউন্টার’ এবং প্রতিপক্ষের দেওয়া ৯৮ রানের জবাবে বাংলা মাত্র ১২৪ রানে অলআউট হলেও রোহন ক্যারি দ্য ব্যাট করেন ৫২ রানে অপরাজিত থেকে। এরপরে দিল্লি ম্যাচে ব্যর্থতা আসে তাঁর কিন্তু তারপর সৌরাষ্ঠ্র ম্যাচে দুরন্ত ব্যাটিং করে ৩৩০ বলে ১৭১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
এরপরে অনুর্ধ-১৯ বিজয় হাজারে ট্রফিতে ভালো পারফরমেন্স এর দরুণ তিনি শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে খেলেন একটি বয়সভিত্তিক বেসরকারি টেস্ট ম্যাচ। এরপরেই বাংলা দলে অভিষেক হয় তাঁর এবং অভিষেকেই করেন রেকর্ড। এছাড়াও কর্ণাটকের বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে করেন সেঞ্চুরি।
কিন্তু তাঁর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কেরিয়ার স্থায়ী হয় মাত্র ২৩ ম্যাচ এবং সেখানে ৩১ গড়ে দুটি সেঞ্চুরিসহ ১১৭৬ রান করেন এই আয়কর দপ্তরের কর্মী। তবে দীর্ঘদিন ময়দানে খেলার সুবাদে তিনি খেলে ফেলেছেন মোহনবাগান, কালীঘাটের মতো বড়ো ক্লাবে। কালীঘাটের হয়ে বিগত মরশুম খুব ভালো যায়নি রোহনের। বেশী ম্যাচে সুযোগও পাননি। তবে সম্পূর্ণ মরশুম তিনি একজন ভালো সিনিয়রের মতো থেকেছেন দলের সঙ্গে। আশা রাখাই যায় যে আগামী মরশুমে সব ফরম্যাটেই নিজের পুরোনো পারফরমেন্স এর ছাপ রাখবেন রোহন ব্যানার্জী।