‌নতুন জয়সূর্যে আশার সঞ্চার

প্রভাত জয়সূর্যে মজেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। তরুণ এই স্পিনারে মুগ্ধ দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। চার বছর আগে দেশের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি জয়সূর্য। ঝুলিতে ছিল না কোনও উইকেট। চার বছর পর সেই তাঁকে নিয়েই আলোচনা দ্বীপরাষ্ট্রের আনাচে–কানাচে। ২০১৮–র ৫ আগস্ট কেরিয়ারের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচ (‌এখনও পর্যন্ত সেটাই শেষ)‌ খেলেছিলেন প্রভাত জয়সূর্য। তারপর জাতীয় দলের দরজা খুলল চলতি বছরের ৮ জুলাই। মাঝের এই চার বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটে নীরবে নিজের কাজ করে গিয়েছেন। ৬৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে জয়সূর্যের শিকার ২৬৩। গতবছর মার্চে শ্রীলঙ্কা টি২০ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব। সেই দলের সেরা হওয়ার পেছনে অবদান রেখেছিলেন জয়সূর্য। সেই বাঁহাতি স্পিনারের হাত ধরেই দেশীয় ক্রিকেটে নতুন ‘‌প্রভাতে’‌র অপেক্ষায় শ্রীলঙ্কা।

চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে ভারতের এই প্রতিবেশী দেশ। সমস্যায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কার মানুষকে কিছুটা অক্সিজেন দিয়েছেন বছর তিরিশের স্পিনার। প্রভাত জয়সূর্যের স্পিন ঘূর্ণিতে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান যত নাকাল হয়েছে, ২ কোটি ১৬ লক্ষ মানুষের ছোট্ট দেশ তত উদ্বেল হয়েছে। ৮ জুলাই গলে অসিদের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই নায়ক জয়সূর্য। প্রথম ও দ্বিতীয়, দুই ইনিংসেই ৬টি করে মোট ১২ উইকেট!‌ অভিষেক টেস্টে শ্রীলঙ্কার কোনও বোলারের এটাই সেরা পারফরমেন্স। এক টেস্টে ১২ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে মুথাইয়া মুরলিথরন এবং রঙ্গনা হেরাথকে ছুঁয়ে ফেলেছেন জয়সূর্য। তারপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও তাঁর স্পিন–জাদু অব্যাহত। দুই টেস্টের চার ইনিংসে ১৭ উইকেট!‌ মাত্র তিন টেস্টে শিকার সংখ্যা ২৯!‌ অবিশ্বাস্য। ইনিংসে পাঁচ উইকেট ৪ বার। ম্যাচে ১০ উইকেট ১ বার। এমন অনবদ্য পারফরমেন্সের পুরস্কারও পেয়েছেন জয়সূর্য। টেস্ট আবির্ভাবেই সাড়া ফেলে দেওয়া এই স্পিনারকে জুলাইয়ের সেরা ক্রিকেটারের সম্মান দিয়েছে আইসিসি। 

সম্প্রতি সরকার–বিরোধী বিক্ষোভে দেশের সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়াতে রাস্তায় নেমেছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সনথ জয়সূর্য। তাঁর এই ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছিল। আর মাঠে নতুন জয়সূর্যের উত্থান আশার সঞ্চার করেছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট মহলে।‌‌‌‌‌ তাঁকে নিয়ে বেশ আশাবাদী দেশের প্রাক্তনরা। মাহেলা জয়বর্ধনে বলেছেন, ‘‌ঘরোয়া ক্রিকেটে জয়সূর্য বেশ ধারাবাহিক। বোলিংটা সহজাত। ওর ওপর আস্থা আছে নির্বাচকদের। আমিও মনে করি ভবিষ্যতে ও আরও বড় ভূমিকা নেবে।’‌ মুরলিথরনের পর শ্রীলঙ্কাকে স্পিন বোলিংয়ে অনেকটাই ভরসা দিয়েছিলেন হেরাথ। এবার প্রভাত জয়সূর্যের স্পিনে আস্থা রাখতেই পারে শ্রীলঙ্কা।