ব্র্যাডম্যানের পড়শিরা – চতুর্থ পর্ব

আসা যাক বাইশ গজে ব্র্যাডম্যানের দেশের চিরশত্রু জাতটির কথায়। হারবার্ট সাটক্লিফ ব্যতিরেকে ষাটোর্ধ্ব গড়ে টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনা থেকে বিদায় নিতে পেরেছেন মাত্র তিন ইংরেজ। এঁরা হলেন যথাক্রমে ঊনবিংশ শতকের শেষপর্বে খেলে যাওয়া হেনরি উড (৬৮.০০) ও আর্থার হিল (৬২.৭৫) এবং বিংশ শতকের তিনের দশকের প্রতিনিধি ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন (৬৪.৮৫)। শেষ জনের সঙ্গে হয়তো একটু বেশি পরিচয় থাকতে পারে ভারতীয়দের।

১৯৩৩-৩৪ মরশুম। ভারতবর্ষের মাটিতে সেই প্রথমবার টেস্ট ক্রিকেটের আসর বসেছিল বোম্বের জিমখানা ময়দানে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৩০)। দুই প্রতিপক্ষ দলের দুই অভিষেককারীর জোড়া শতরান খুব সাধারণ ঘটনা নয় একশো পঁয়তাল্লিশ বসন্তের টেস্ট ইতিহাসের নিরিখেও। সেটাই ঘটেছিল ঐতিহাসিক জিমখানা টেস্টে ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন ও লালা অমরনাথের দৌলতে। জীবনের সপ্তম তথা শেষ টেস্টেও ঘটনাচক্রে ইতিহাসের অংশীদার হয়েইছিলেন ভ্যালেন্টাইন। ১৯৩৮-৩৯ ডারবান টেস্টকে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৭১) যেহেতু দুনিয়া মনে রেখেছে ইতিহাসের দীর্ঘতম টেস্ট (খেলা হয় ৩-১৪ মার্চ) তথা আজ অবধি খেলা হওয়া শেষ টাইমলেস টেস্টের পরিচয়ে।

শেষ ইনিংসে শতরান করে টেস্ট ক্রিকেটের ময়দান থেকে বিদায় নেওয়ার কপাল ক’জনের হয়! ব্যাঙ্গালোরের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,০৭৩) খোঁয়াড়ে চার রান আগেই থেমে যেতে হয়েছিল গাভাসকারকে। ওভালে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩০৩) খাতাই খুলতে পারেননি ব্র্যাডম্যান। জীবনের চতুর্থ তথা শেষ টেস্টে ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য কাজটা করেছিলেন কেন্ট ও সারের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হেনরি উড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৮৯১-৯২ কেপ টাউন টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩৭)। যদিও ইতিহাস গড়ে ফেলার বিষয়ে সেই মুহূর্তে অবহিত থাকা আদৌ সম্ভব ছিল না উডের পক্ষে। যেহেতু পরবর্তীকালে দেওয়া হয় খেলাটিকে টেস্টম্যাচের স্বীকৃতি। ঘটনাচক্রে একই অকুস্থলে দ্বিতীয়বারের জন্য কাজটা করার নজির হ্যাম্পশায়ারের অলরাউন্ডার আর্থার হিলের। প্রসঙ্গত, ১৮৯৫-৯৬ কেপ টাউন টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪৯) জীবনের তৃতীয় (তথা শেষ) টেস্ট খেলেছিলেন হিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২০২১-২২ ঘরোয়া সিরিজের ক্রাইস্টচার্চ টেস্টটি (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২,৪৫১) ছিল নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ের জীবনের মোটে সপ্তম টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেটের আসরে এই মুহূর্তে তাঁর গড় ৬৩.৯১। বিশ ইনিংসে পৌঁছতে পৌঁছতে ব্র্যাডম্যানের গ্রহে থাকতে পারবেন কিনা ভবিষ্যৎই বলবে। প্রথম দশ ইনিংস শেষে ৯৩.৭০ গড়ে উপনীত বিনোদ কাম্বলিই যেমন বিশ ইনিংসে পৌঁছতে পৌঁছতে বিচ্যুত হয়েছিলেন ব্র্যাডম্যানের গ্রহ থেকে। তবে কনওয়ের ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন তাঁর তিন পূর্বসূরি কিন্তু রয়েই যাবেন ব্র্যাডম্যানের গ্রহের পাকাপাকি বাসিন্দা হয়ে। কালানুক্রমে যাঁরা হলেন স্টিউয়ি ডেম্পস্টার (৬৫.৭২), কেন হাউ (৬২.০০) ও রডনি রেডমন্ড (৮১.৫০)।

১৯২৯-৩০ মরশুম। অকুস্থল ক্রাইস্টচার্চ। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বপ্রথম টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১৮৬)। দুই দফাতেই ইনিংসের সূচনা করেছিলেন ব্র্যাডম্যানের সমসাময়িক ডেম্পস্টার। পরবর্তী ওয়েলিংটন টেস্টেই (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১৮৮) মরিস অ্যালম, স্ট্যানলি নিকোলস, ফ্র্যাঙ্ক উলিদের সামলে দুই দফায় তাঁর ব্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল ১৩৬ ও অপরাজিত ৮০। কিউয়ি ক্রিকেটের আদিপর্বে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য ব্যাটারই ভাবা হত ডেম্পস্টারকে।

১৯৫৮-৫৯ মরশুম। পিটার মে-র ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্রাইস্টচার্চ (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪৭০) ও অকল্যান্ডে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪৭২) পরপর দু’টি টেস্টে জন রিডের নিউজিল্যান্ড খেলিয়েছিল ডানহাতি পেসার কেন হাউকে। সবার শেষে ব্যাট করতে গেলেও তিনের মধ্যে দু’বার অপরাজিত থাকাই (সর্বোচ্চ ৩১ অপরাজিত) যাঁকে পৌঁছে দেয় ব্র্যাডম্যানের গ্রহে (গড় ৬২.০০)। নাতিদীর্ঘ প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারে (১৯৫৬-৫৭ থেকে ১৯৫৯-৬০) লুইসের মতোই এঁরও ছিল না কোনও শতরান। তবে এঁর বিষয়ে চমকপ্রদ তথ্যটি হল ফুটবলার হিসেবে ইনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দুই দেশেরই।

১৯৭২-৭৩ মরশুম। অকল্যান্ড টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৭১৩)। ইন্তিখাব আলমের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বপ্নের অভিষেক (১০৭ ও ৫৬) অনেক সম্ভাবনাই জাগিয়েছিল ওপেনার রডনি রেডমন্ডকে ঘিরে। কিন্তু অচিরেই নিতে হওয়া কনট্যাক্ট লেন্সই এরপর সংক্ষিপ্ত করে দেয় তাঁর কেরিয়ার। পরবর্তী ইংল্যান্ড সফরের টিকিট পেলেও সুবিধা করতে পারেননি ট্যুর ম্যাচগুলিতে। ১৯৭৫-৭৬ মরশুমের পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকেও (গড় ৩৩.৬৯) অকালেই বিদায় জানাতে বাধ্য হন মাত্র একত্রিশের রেডমন্ড।