গতবছর রনজি অভিযান শেষে যেদিন দুপুরবেলা সিএবিতে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসলেন সেদিনই বিকেলে কথা হচ্ছিল বাংলার সদ্য প্রাক্তন কোচ অরুণলালের সঙ্গে। অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী গলায় সেখানে তিনি বলেছিলেন যে বর্তমান বাংলার কোর বোলিং ইউনিটের প্রায় প্রত্যেকের ভারতের হয়ে খেলার যোগ্যতা আছে এবং এর পেছনে ভিশন ২০২০র একটা বিরাট অবদান আছে। ভিশন ২০২০ প্রসঙ্গে যাচ্ছি না যেহেতু অধিকাংশ নেটিজেন বিশ্বাস করেন যে প্রশাসক সৌরভ গাঙ্গুলি পুরোপুরি ব্যর্থ, তাই তাঁদের বিশ্বাসে আঘাত করার কোন বাসনা আপাতত নেই। প্রায় মাস আটেক আগের কথা। এর মধ্যে শাহবাজ ভারতের হয়ে কয়েকটা ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এবং মুকেশ কুমার স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন। আবার এদিকে কোচির আইপিএল মিনি অকশানে দিল্লী দলে নিলো মুকেশ কুমারকে। সার্বিকভাবে বেশ খানিকটা ফিলগুড পরিস্থিতি। সামাজিক মাধ্যমেও উচ্ছাসের ঢেউ কিন্তু সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে আশঙ্কা। বড়লোকের বাউন্ডুলে ছেলের যেমন বাজে খরচের কিছু প্রবণতা থাকে তেমনই আইপিএল দলগুলোও অনেক সময় এইরকম বাজে খরচ করে।
কোন খেলোয়াড়ের দক্ষতাকে কোনরকম ছোট না করেই বলি ঈশান, মুকেশ, আকাশদীপ, শাহবাজ এরা প্রত্যেকেই ভিশন ২০২০ থেকে উঠে এসেছে এবং বাংলার হয়ে প্রত্যেকেই প্রায় সমান সফল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিঃসন্দেহে শাহবাজ বাড়তি খানিকটা সুবিধে পেয়েছে যেহেতু তার আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে মাঠে নামার সুযোগ দিয়েছে। আত্মবিশ্বাস পেয়েছে, বাড়তি ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগ পেয়েছে, পারফর্ম করার বড় মঞ্চ পেয়েছে। ফলস্বরূপ নিজেকে প্রমাণ করে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে। একই ফ্র্যাঞ্চাইজি আকাশদীপকে দলে নিয়েও পাঁচটা ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋত্বিক চ্যাটার্জীর কথা ছেড়ে দিলাম, অনুর্দ্ধ উনিশ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে রীতিমত সারাজাগানো পারফর্ম করা ঈশান পোড়েলকে তিন তিনটে মরসুম সই করিয়ে পাঞ্জাব তাকে মাঠে নামলো মাত্র একটা ম্যাচে। নিন্দুকেরা বলতেই পারেন সেই ম্যাচেই বা তিনি কী করেছেন! সত্যিই তো! ৪ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে শুধু সঞ্জুর উইকেট পেলে তিনি আর পরের ম্যাচে কেন জায়গা পাবেন? অবশ্য ওই একই ম্যাচে মাত্র দুই ওভারে সাইত্রিশ রান দেওয়া দীপক হুডা কিন্তু পরের ম্যাচে দলে জায়গা পান। যদিও এইসব বললে আবার আধুনিক নেটিজেনদের মনে হতেই পারে যে সেই বস্তাপচা বাংলার প্রতি বঞ্চনার গল্প শোনানো হচ্ছে! কিন্তু বাস্তব এটাই যে ঈশান আইপিএলের একমাত্র বোলার নন যিনি চার ওভারে চল্লিশ রান দিয়েছেন। টি২০ ক্রিকেটে এমন আকছার হচ্ছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতিমান বোলারকে মরসুমের পর মরসুম ডাগআউটে বসিয়ে রাখলে যে তার ছন্দ, আত্মবিশ্বাসে যে চিড় ধরে সেটা সম্ভবত আইপিএলের কেষ্ট বিষ্টুদের জানা আছে।
আর তাই এটাকে যতই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বলে আত্মপক্ষসমর্থনের চেষ্টা করি না কেন, দেশের একজন উদীয়মান বোলারকে এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ডাগআউটে বসিয়ে রেখে, অলিখিত নেট বোলারের মতো ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার অধিকার কোন সভ্য ক্রিকেট সংস্থার থাকা উচিত নয়। অন্তত সংশ্লিস্ট খেলোয়াড়কে ছেড়ে দেওয়া হলে সে সেই সময়টায় কাউন্টি ক্রিকেট খেলে নিজেকে ধারালো করে তুলতে পারে।
তাই মুকেশ কুমারকে দিল্লী নিলাম থেকে কিনে নিয়েছে বলে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছুই হয়নি। বরং দাবী এটাই হোক দলে নিয়েছ যখন অন্তত ব্যর্থ না হওয়া অবধি মাঠে নামার সুযোগ দিতে হবে। একজন প্রতিশ্রুতিমান বোলারকে কোটি টাকার লিগে শুধুমাত্র সস্তার নেট বোলার হিসেবে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যাবে না। আর সেই পরিকল্পনা থাকলে দরকার নেই আইপিএল দলে থাকার। সেই সময়ে কাউন্টি বা নিদেনপক্ষে কলকাতার ক্লাব ক্রিকেট খেললেও ম্যাচ প্র্যাকটিস পাবে। কারণ বেঞ্চে বসে সে বড় বোলার হতে পারবে না, তার জন্য তাকে মাঠে নামতে হবে।