জন্মদিনে শুভময় দাস


২০০১ সালে রনজি ট্রফিতে অভিষেক হয়, এরপর বাংলার হয়ে দীর্ঘ ১২ বছর ক্রিকেট খেলেন বাংলার হয়ে। এর মাঝখানে খেলেছেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। মোহনবাগানে নয় নয় করে প্রায় ১৫ বছর খেলার পর ২০১৭-১৮ মরশুম শেষে ঘোষণা করেছিলেন অবসর। এরপর মোহনবাগান কোচ এবং বর্তমানে তিনি বাংলার মুখ্য নির্বাচক।


ময়দানী ক্রিকেটে যতটা উজ্জ্বল ভাবে বিরাজ করেছেন শুভময় দাস, তার বিবরণ তো ওপরের প্যারাগ্রাফই বলে দেয় এবং এতটা পুরোটাই জানা এবং জানেন প্রায় সকলেই। কিন্তু যা অজানা তা হলো ছোটবেলায় ক্রিকেটের থেকে বেশী ফুটবলে আগ্রহ ছিল শুভময়ের। কিন্তু মামা বিজয় সিং একপ্রকার তাকে নিয়ে আসেন ক্রিকেটে। এরপর শঙ্কু স্যার অর্থাৎ শশাঙ্ক গুপ্তর অধীনে ক্রিকেট শুরু করেন শুভময়। এই বিষয়ে শুভময় বলেন “যখন আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি তখন থেকেই শশাঙ্ক স্যারের কাছ থেকে। উনিই আমার আগ্রহ আরো বেশী করে জুগিয়েছেন। আমার জীবনে অনেক কোচ এলেও আমি ওনাকে কখনো ভুলতেই পারবো না।”
বাংলা দলের হয়ে অনুর্ধ-১৬ স্তর থেকে প্রায় সব স্তরেই বাংলার হয়ে খেলেছেন শুভময়। অনুর্ধ-১৬ স্তরে নেটের ব্যাটিং খুব ভালো ছিলনা শুভময়ের। বলা ভালো ব্যাটিং ছিল আনঅর্থডক্স। সেই সময়ে রাজু মুখার্জীর নজরে পড়ে যান তিনি এবং পরপর তিনটি ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। এর মধ্যে আসামের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি শুভময়ের কাছে খুব স্পেশাল। সেই ম্যাচে প্রবল জ্বর নিয়ে ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামে আসামের বিরুদ্ধে যখন খেলা অনিশ্চিত, তখন পরিবারের অমতে ম্যাচ খেলতে নামেন শুভময় এবং সেঞ্চুরি করেন। এটাকেই জুনিয়র লেভেলে নিজের সেরা সেঞ্চুরি বলেন শুভময়।
এরপর মাত্র ২০ বছর বয়সে অভিষেক হয় বাংলা জার্সিতে। এবং ঠিক এরপরেই বেশ ভালো খেলা শুরু করেন তিনি। রনজি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে বেশ দর্শনীয় খেলেন তিনি। একসময় যখন ৭০ রানে ৫ উইকেটে ধুঁকছে বাংলা, তখন সঞ্জীব সান্যালের সঙ্গে একটা বড়ো পার্টনারশীপ করেন শুভময়। এবং দুটি ইনিংসই বড়ো রান করেন একটি সেঞ্চুরিসহ। সেই ম্যাচ নিয়ে শুভময়ের বক্তব্য “দেখো টিম একদম খারাপ অবস্থায় ছিল। সঞ্জীব সান্যাল, আমি আর লক্ষীরতন শুক্লা অনেকটা রিকভার করি। আমার তখন মনে হয়েছিল যে বাংলার হয়ে যে কটা সুযোগ পাচ্ছি, সবকটায় ভালো করবো নিজের একশো শতাংশ দিয়ে। করতে পারাটা একটা ভালো উপলব্ধি ছিল।”
মোহনবাগান দলের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘ ১৫ বছর এবং এর মধ্যে যা রান আছে তাকে বর্ণনা করতে “ট্রাকলোড” কথাটা সহজেই বলা যায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের এতো ইনিংসের মধ্যে কোন ইনিংসটি তিনি এগিয়ে রাখবেন? শুভময় বলেন একটি ডার্বি ম্যাচের কথা। সেই ইস্টবেঙ্গল দলের ছিলেন শিবশঙ্কর পাল, শিবসাগর সিংয়ের মতো বোলার। একসময় যখন মোহনবাগান ৩০-৩ স্কোরে রীতিমতো ধুঁকছে, তখন অনুষ্টুপ মজুমদারের সঙ্গে একটি বড়ো পার্টনারশীপ হয় তার এবং সেইখানে শুভময় করেন ১৫০ এবং সেঞ্চুরি পান অনুষ্টুপও। এছাড়া ক্লাব ক্রিকেটে নিজের খেলা সেরা ইনিংস বলা হয়, তবে আরো একটি ইনিংসকে এগিয়েছে রাখেন তিনি। স্পোর্টিং ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গরমকালে ৪০০ রান তাড়া করতে নেমে নিজের খেলা ১৭০ রানের ইনিংসকে বিশেষ গুরুত্ব দেন।
নথি ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়, শুভময়ের কোনো ব্যাটিং পজিশন ছিল না বাংলায়। ওপেন থেকে ৭-৮, সব জায়গাতেই ব্যাট করেছেন এবং রানও পেয়েছেন। টিটোয়েন্টিতে মুস্তাক আলী ফাইনালে যেমন নিচের দিকে নেমে ঝোড়ো ৪৯ করেন, তেমনই ছিল ওপেন করে রনজিতে বড়ো রান। এই বিষয়ে শুভময়ের বক্তব্য, “আমি এটা বরাবর চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। জুনিয়র স্তরে তিন, ওয়ান ডেতে আট নম্বর খেলেছি। আমার কোনো খারাপ লাগা নেই যে আমাকে নিচে নামানো হয়েছে বা গ্রিনটপে ওপেন করানো হয়েছে। আমি নিষ্ঠার সাথে খেলেছি এবং এখন মনে হয় আমি আরো বেশী ভালো খেলতে পারতাম। অনেক হাফসেঞ্চুরি, সেঞ্চুরিতে কনভার্ট করতে পারতাম। তবে বাংলা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি খুশি যে এখনো সিএবি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সবার কাছে থ্যাংকফুল যা পেয়েছি তার জন্য।”
কেরিয়ারে একটা কালো দাগ হিসেবে থেকে গিয়েছে আইসিএল খেলতে যাওয়া। বিদ্রোহী লিগ খেলার জন্য তিন বছর ক্রিকেটের মূলস্রোত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেটাই একটা আক্ষেপের জায়গা তার। তিনি বলেন “ওটা একটা ব্লান্ডার সিদ্ধান্ত আমার। যেভাবে ক্রিকেট এগোচ্ছিল হয়তো ওখানে না গেলে আমার ক্রিকেট কেরিয়ার অন্যরকম হত, বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে এগোতাম। ওটার পর বেশ কিছুদিন কোনো ক্রিকেট খেলতে পারতাম না আমরা এবং আমার কিছু চোট হয় যার ফলে পিছিয়ে যাই।”
বর্তমানে সিলেকশন কমিটি তার অধীনে কাজ করছে দারুনভাবে। চলতি রনজি ট্রফিতে ক্লাব ক্রিকেটের পারফরমেন্সকে হাইলাইট করে একটা বেশ ভালো দল তৈরী করেছেন শুভময় ও তার সহনির্বাচকরা। এরপর যদি কোচ হওয়ার অফার আসে তবে তা নিয়েও আগ্রহী হবেন শুভময়।
সব মিলিয়ে ক্রিকেটের সঙ্গেই জুড়ে থাকতে চান তিনি, খেলা ছাড়ার পরেও।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা।