পয়লা অক্টোবর থেকে কাদের সুবিধে-অসুবিধে বাড়বে বা কমবে?

সম্প্রতি এম.সি.সি জানিয়েছে যে ক্রিকেটের নিয়মকানুন নিয়ে কয়েকটা পরিবর্তন আসতে চলেছে এই বছরের পয়লা অক্টোবর থেকে। ‘রান-আউট’-সংক্রান্ত বিষয়টা নিয়ে কয়েকদিন আগেই আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া লিখেছি, আজকে বাকি কয়েকটা বদল নিয়ে একঝলক আলোচনা করতে চাই।

মুখের লালা দিয়ে বল-পালিশ

কোভিডের কারণে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল মুখের লালা ব্যবহার করে বল পালিশ করা। সেটা এবার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে চলেছে। এম.সি.সি-র বিগত বছর দুয়েকের গবেষণা অনুযায়ী, “This had little or no impact on the amount of swing the bowlers were getting. Players were using sweat to polish the ball, and this was equally effective.” – যদিও ক্রিকেট-বলের স্যুইং অনেক কিছুর সঙ্গে কি জাতীয় বল (Dukes, Kookaboora, SG, ইত্যাদি), তার ওপরেও নাকি নির্ভর করে, আর এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হচ্ছে। কেউ বলছেন যে এতে বোলারদের অসুবিধে বাড়বে, আবার কেউ বলছেন যে এতে বিশেষ কোনও হেরফের হবেনা – অতএব এই নিয়ে কোন মন্তব্য করতে আমি রাজি নই। তবে হ্যাঁ, দু’টো ‘উপকার’ অবশ্যই হবে, স্বাস্থ্যবিধিগত এবং কিছু ফিল্ডার-বোলারদের খেলা-চলাকালীন অনাবশ্যক লজেন্স-সেবন কমে যাওয়া। মুখের লালা ব্যবহার করা “…will be treated the same way as any other unfair methods of changing the condition of the ball.” – এম.সি.সি-র প্রস্তাব।

পরিবর্ত খেলোয়াড়ের ‘উত্তরাধিকার’

আজকাল একাধিক রকম পরিবর্ত খেলোয়াড়ের চল হয়েছে – concussion substitute (উদাহরণ মার্নাস লাবুশেন), wicket-keeping substitute (উদাহরণ কে.এস.ভরত) – চালু হয়েছে ‘like-for-like substitution’ পরিভাষাটিও। কিন্তু এম.সি.সি-র প্রস্তাব আছে পরিবর্ত খেলোয়াড়রা যেন “… be treated as if they were the player they replaced, inheriting any sanctions or dismissals that player has done in that match.” – এখানে কিছু সমস্যা তৈরি হতেও পারে। ধরুন, উইকেট-রক্ষক “ঋ” যদি এই ম্যাচে মাঠে অশালীন আচরণের জন্য পরবর্তী একটা ম্যাচে নির্বাসন-দন্ড পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর পরিবর্ত উইকেট-রক্ষক “ভ”-এর ওপরেও সেই দন্ডটা বর্তাবে কি? অথবা, অফ-স্পিনার “ম” সন্দেহজনক বোলিং-ভঙ্গির জন্য যদি এই ম্যাচে আর বোলিং করা থেকে বঞ্চিত হয়ে বসেন, ব্যাটিং করতে গিয়ে মাথায় চোট-পাওয়া “ম”-র পরিবর্ত অফ-স্পিনার “হ”-এর ওপরেও সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে কি? এগুলোই প্রশ্ন!    

ক্যাচ আউটে ব্যাটার প্রান্ত-পরিবর্তন

সীমিত-ওভারের খেলায় তো প্রায় সর্বদাই, অথবা টেস্টেও যখন কোনও ব্যাটার তাঁর টেল-এন্ডার সঙ্গীর ক্ষেত্রে নন-স্ট্রাইকার থাকেন তখন, দেখা যায় (ওভারের শেষ বল বাদে) একটু উঁচু ক্যাচ উঠলে দুই ব্যাটার পড়ি-কি-মরি করে এন্ড-ক্রস-ওভার করতে চেষ্টা করেন। কারণ? ফিল্ডার ক্যাচটা ধরে ফেললেও অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞ ব্যাটারই পরের ডেলিভারিটা খেলবেন, নবাগত ব্যাটার নয়। তাই তো! ওটি আর করা চলবেনা, কারণ এম.সি.সি-র প্রস্তাব, “When a batter is out caught, the new batter shall come in at the end the striker was at, i.e., to face the next ball (unless it is the end of an over).” এতে বোধহয় ফিল্ডিং পক্ষের কিঞ্চিৎ সুবিধে হলেও হতে পারে, বিশেষত যদি নবাগত ব্যাটার তেমন পোক্ত না হন।

ছবি : ইন্টারনেট

মাঠে অনুপ্রবেশকারী বা অযাচিত / অপ্রত্যাশিত বাধার কারণে ডেড-বল

মাঠের মধ্যে অবাঞ্ছিত কোনও ব্যক্তি, প্রাণী বা অন্য কোন বস্তুর অপ্রত্যাশিত উপস্থিতির কারণে আম্পায়ার ডেড-বল ঘোষণা করতে পারবেন। 

ছবি :ইন্টারনেট

বল ডেলিভারি করার আগে পর্যন্ত ব্যাটারের ‘অবস্থান-নির্ভর’ ওয়াইড-বল

বোলার রান-আপ আরম্ভ করবার পর থেকে বল ডেলিভারি করবার সময় পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ব্যাটার-এর অবস্থানের ভিত্তিতে ওয়াইড-বল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে, কারণ “It was felt unfair that a delivery might be called ‘Wide’ if it passes where the batter had stood as the bowler entered his/her delivery stride.” হয়ত ব্যাটারদের নানারকম উদ্ভাবনী অবস্থান (various innovative positions) নিয়ে বোলারের সম্মুখীন হওয়ার পরিস্থিতিগুলোর কথা মনে করেই এই প্রস্তাব।  

ফিল্ডিং পক্ষের ‘অসমীচিন’ নড়াচড়ার খেসারত পাঁচ রান

এতদিন পর্যন্ত মাঠের মধ্যে ফিল্ডিং পক্ষের কেউ অযাচিত / অসমীচিন ধরণে নড়াচড়া করলে (উদাহরণ, বোলারের রান-আপের মাঝখানে ফিল্ডিং অধিনায়কের / উইকেট-রক্ষকের ইশারায় / ডাকে কোন ফিল্ডার অবস্থান বদল করলে) আম্পায়ার ডেড-বল ঘোষণা করতেন। কিন্তু এম.সি.সি-র প্রস্তাব, “Given such movement is both unfair and deliberate, it will now see the batting side awarded five penalty runs.” – অতএব ফিল্ডিং পক্ষ, সাবধান – ম্যাচের শেষ বলে চার রান হাতে থাকতে চুপিসাড়ে ডিপ-স্কোয়্যার-লেগ থেকে ডিপ-ফাইন-লেগে সরলে কিন্তু এমনিতেই ম্যাচটা হারতে হতে পারে!