প্রতিষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করলে নিজেই হয়ে উঠুন ফিরে আসার প্রতিষ্ঠান

ফেব্রুয়ারীর ভবানীপুর নেট। নিজস্ব ব্যাটিং প্র্যাক্টিসের পরে গাছের তলায় বসে আছেন কৌশিক ঘোষ। সঙ্গে রয়েছেন সন্দীপন দাস, বলকেশ যাদব। ক্লাবে ঢুকে যখন দেখা হলো কৌশিক বললেন “আমি তো টিমে নেই গো।”
এরপরে মরশুমের প্রায় শেষের দিকের রাজস্থান মাঠ। এক সিনিয়র খেলোয়াড় প্রতি ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েও কোনো কারণে থেমে যাচ্ছেন ৪০ বা তার একটু বেশিতে। কিছুতেই যেন ঠিক নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারছেননা। এক পরিচিত দাদা বললেন “অ্যাডামসকে দেখো ভাই। যদি টিম হেরে রেলিগেশনও খেলত না, ও খুশি হতো যে চারটে ম্যাচে সুযোগ পাচ্ছি ভেবে এবং ১৫০ করে গড়ে করতোই।”


ঠিক কিছু মাস আগে সিএবির ঘোষিত ৩০ জনের দলেও ছিলেন না তিনি। এমনকি করোনাকালে যখন ক্রিকেটার নির্ধারিত সংখ্যার থেকে বেশি ক্রিকেটার নেওয়ার অনুমতি ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা দিয়ে দিয়েছে তখনও রাখা হয়নি তাঁকে। বিপক্ষে গিয়েছিল তার আগের সিজনে কৌশিক ঘোষের করা কিছু সাধারণ পারফরমেন্স। রাজস্থানের বিরুদ্ধে তিনি পেয়েছিলেন মরশুমের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি কিন্তু অতি জমাট অবস্থাতেও একটি ভুলে ইনিংস শেষ হয়েছিল ৬০ রানে। দিল্লির বিরুদ্ধে কুয়াশাচ্ছন্ন ইডেনে প্রাক-সরস্বতী পুজোর সকালে যখন অভিমন্যু ঈশ্বরণ, কাজী জুনাইদ সাইফি, মনোজ তিওয়ারি ফিরে গিয়েছেন তখনও কুলবন্ত খেজরলিয়া ব্রিগেডকে সামলে বেশ ভালো ছন্দে যখন ৪৬ করে ব্যাট করছেন তখন হঠাৎ একটি প্লাম্ব লেগ-বিফোর হয়ে ফিরে আসেন তিনি। এতো কিছু দেখার পরে মরশুম শেষে অরুণ লাল তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি বেশ কিছু সেঞ্চুরি মাঠে ফেলে এসেছেন।
এই মরশুমেও শুরু বেশ সাধারণ। প্রথম দুটো ম্যাচে রানের মুখ দেখেননি একেবারেই। কিন্তু ভোল পাল্টানো শুরু এরিয়ান ম্যাচ থেকে এবং তারপরে মোহনবাগান ম্যাচ যেন একেবারেই অন্যরকম ছন্দে ছিলেন তিনি। মোহনবাগান ম্যাচে ৫৪৫ রান তাড়া করতে নেমে খেলোয়াড়রা বলাবলি করছেন যে ভবানীপুরকে জিততে গেলে সম্পূর্ণ চার সেশন খুব ভালো ব্যাট করতে হবে। সেই কাজই যেন করে দেখালেন কৌশিক। তার ১৭৬ রানের ইনিংসে ছিলোনা কোনো ভুল। একটি মাত্র ভুল করেন তিনি অর্ণব নন্দীর বল মিড-উইকেটে ঠেলতে গিয়ে মিস করে পায়ে লাগিয়ে ফেলায় উইকেট যায় তাঁর।
এরপরে নক-আউট ম্যাচে রাজস্থানের বিরুদ্ধে ঝকঝকে ২১৮, পাইকপাড়ার বিরুদ্ধে ১২৯ করার পাশাপাশি সেমি-ফাইনাল ম্যাচেও ব্যাট হাতে নির্ভরতা দেন ভবানীপুরকে। শুধু ফাইনালে যদি ভবানীপুরের হয়ে আরো বেশি রান করে রাখতেন তবে হয়তো মরশুম একেবারে সোনায় বাঁধানো থাকতো। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি আর।
রাহুল দ্রাবিড় ভারতীয় দলের নির্বাচন নিয়ে বলেছিলেন দরজায় ধাক্কা না দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঢোকার কথা। গত মরশুমে যেন নিজের পারফরমেন্স দিয়ে সেই কাজই করেছেন কৌশিক ঘোষ। প্রতিষ্ঠান তাঁকে প্রাথমিক প্রত্যাখ্যান করলেও সেখানে ফিরে আসার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মরশুমের সব ধরণের ক্রিকেট মিলিয়ে ১,৩৩১ রান করে সিলেক্টরদের একপ্রকার বাধ্য করেছেন তাঁকে দলে নিতে। এর আগে মুখ্য নির্বাচক শুভময় দাস বলেছিলেন ক্লাব ক্রিকেটের পারফরমেন্সকে তাঁরা জোর দিতে চাইছেন যাতে ক্লাব ক্রিকেটের উন্নতি হয় এবং ভালো খেলোয়াড়ও উঠে আসে। সেই জায়গাতেই ভীষণরকম হিট কৌশিক। এখন ফিরে আসার গল্প বলতে যেন উদাহরণ হয়ে গিয়েছেন ময়দানে।
প্রতিষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করুক না, কৌশিক তো নিজেই কামব্যাক করার এক প্রতিষ্ঠান হয়ে গিয়েছেন এই মরশুমে।