আর মাত্র মাস তিনেক, তারপরই নয় বছর পূর্ণ হয়ে যাবে শচীন তেন্ডুলকারের আন্তর্জাতিক অবসরের। খুব একটা কম সময় নয়। শচীন ছিলেন সেই বিখ্যাত ফ্যাব ফাইবের শেষ প্রতিনিধি। তারপর ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ব্যাটনটা চলে যায় মূলত কোহলি, রোহিত, রাহানে, পূজারাদের হাতে।
এই চারজন এবং সঙ্গে শিখর ধাওয়ান। গত পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছরের পরম্পরাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যে যথেষ্ট যোগ্য সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। এভাবেই চলল কয়েকটা বছর। যখন মনে হচ্ছে ভারতীয় ব্যাটিং এর পরম্পরা রক্ষার দায়িত্ব সঠিক হাতেই গেছে, ঠিক তখন থেকেই যেন শুরু হলো সমস্যা।
২০১৭ থেকে মোটামুটি ফর্ম হারাতে শুরু করলেন রাহানে। তবে সেটা সার্বিক ভাবে তখনও খুব একটা সমস্যা তৈরি করেনি কারন তখন টেস্টে স্বপ্নের ফর্মে কোহলি-পূজারা আর সীমিত ওভারে রোহিত-শিখর-কোহলি। এরপর ২০১৯ এর মাঝামাঝি থেকে ফর্ম হারানো শুরু করলেন পূজারা। হ্যাঁ, তাঁর টেস্ট শতরান নেই প্রায় সাড়ে তিন বছর, কোহলির শেষ টেস্ট শতরানের দশ মাস আগে তাঁর শেষ টেস্ট শতরান। এরপর কোহলি এবং শেষ এক দেড় বছর এর সঙ্গে যোগ হয়েছেন স্বয়ং রোহিত। রাহানে-রোহিত মাঝে মধ্যে কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলে দিলেও তাঁদের পুরনো ধারাবাহিকতার ধারে কাছে নেই। ফলস্বরূপ রাহানে দলের বাইরে, পূজারা বাদ গিয়েও কাউন্টি খেলে ফিরে আসার আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, বোর্ড এখনও ব্যাটার কোহলির সঙ্গে থাকলেও তাঁকে কোন একটা ফরম্যাট থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে জনমত কিন্তু ভালোই শক্তিশালী আর এই ডামাডোলের বাজারে ধারাবাহিক ভাবে রান না করেও জঘন্য ফর্মকে সঙ্গী করেও খানিকটা বেনিফিট অফ ডাউটে-র জায়গায় আছেন রোহিত।
চিত্রটা কিন্তু এক কথায় ভয়াবহ। সময়টা প্রায় পাঁচ বছর (মধ্যে কয়েক মাস ক্রিকেট হয়নি কোভিডের কারনে)। এক এক করে দলের সেরা চার ব্যাটার ফর্ম হারাচ্ছেন বা হারালেন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ন বিষয় এখনও অবধি একজন ব্যাটারও পুরনো ফর্মে ফিরলেন না, আশা করাই যায় যে ভবিষ্যতে তাঁরা ফর্মে ফিরবেন। ব্যাড প্যাচ আসতেই পারে, একজন খেলোয়াড় ফর্ম হারাতেই পারেন কিন্তু একবার ফর্ম হারালে সেটা আর ফিরবে না কেন? কারও ক্ষেত্রে তিন তো কারও ক্ষেত্রে চার তো কারও ক্ষেত্রে পাঁচ বছর! অতীতের যেকোন ব্যাটার মধ্যতিরিশের আগে ফর্ম হারালে তাঁরা দ্রুত আবার ফর্মে ফিরেছেন। তাঁরা কেউই ফর্মে ফিরতে এত সময় নেননি এবং পাননি। এমন নয় যে এই চার জনের ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে, ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন জায়গা আছে। প্রত্যেকে অতীতে তাঁদের ক্ষমতা, দক্ষতার প্রমান দিয়েছেন। কিন্তু একটা ব্যাড প্যাচ বা খারাপ সময় থেকে বেরোতে পারছেন না কেন? আর তার থেকেও বড় প্রশ্ন প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একই সমস্যা কেন? সমস্যাটা তাহলে কোথায়?
দুনিয়ার সেরা ক্রিকেট সিস্টেম, কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাখা ব্যাটিং কোচ, ভিডিও এন্যালিস্ট, মনোবিদ – তা সত্ত্বেও ফর্ম হারানো ব্যাটারদের সঠিক দিশা দেখানো কেন সম্ভব হচ্ছে না? ক্রিকেটারদের সদিচ্ছার অভাব? নাকি প্ৰকৃত কারন অন্যকিছু?
কারন যাই হোক না কেন, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে সমস্যা যথেষ্ট গভীর এবং যার সমাধান খোঁজার জন্য বিসিসিআই-এর বাড়তি চেষ্টার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়।