শাপে কি বর হল জোস বাটলারের?
মঙ্গলবার রাতে ইডেনে জিতলে সরাসরি ফাইনাল খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যেত রাজস্থান রয়্যালস। জিতল না গুজরাতের অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য এবং শেষে ডেভিড মিলারের অতিমানবিক তিন বলে তিন ছক্কায়। কিন্তু রাজস্থান রয়্যালস-এর এখনও প্রতিযোগিতায় চ্যা্ম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন প্রবলভাবেই বেঁচে। বুধবারের প্রথম এলিমিনেটর-এ লখনউ এবং বেঙ্গালুরুর ম্যাচে বিজয়ীদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার-এ খেলবে রাজস্থান। সেই দ্বিতীয় ম্যাচটি জিততে পারলেই ফাইনাল। আর ফাইনালে পৌঁছনো মানেই তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা।
ললিত মোদির কমিটি আইপিএল-এর নকআউট পর্যায়ে এমন একটি অদ্ভুতুড়ে নিয়ম তৈরি করেছিল। সরাসরি সেমিফাইনাল নয়। নকআউট মানে হারলেই বিদায়। আইপিএল-এর প্লে অফ পর্যায়ে হারলেও সুযোগ আসে। একমাত্র তৃতীয়-চতুর্থ দলের ম্যাচে যে-দল হারবে, বিদায় নিতে হবে একটি ম্যাচ খেলেই। দুটি দল দুটি করে সুযোগ পাবে ফাইনালে পৌঁছতে।
এই নিয়মের কথাই বিরাট কোহলি এবং রবি শাস্ত্রীরা বারবার বলেছিলেন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরে গিয়ে, দুষেছিলেন নিয়মকে। তাঁদের মত ছিল, গ্রুপ লিগে সেরা দলের আরও একটা সুযোগ প্রাপ্য। এভাবে একটা সেমিফাইনাল হেরে বাড়ি ফিরে যাওয়াটা কিছুতেই মানতে পারেননি তখনকার ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন ও কোচ। নিজেদের ব্যর্থতা নয়, প্রশ্ন তোলা হয়েছিল নকআউট সিস্টেমের যথার্থতা নিয়েই।
খেলার জগতে নকআউট বিশেষভাবে প্রচলিত এবং বিশ্বস্বীকৃত সব খেলায়। আদিগন্তকাল ধরে কোনও খেলা চলতে পারে না যেমন, কোনও প্রতিযোগিতাও। সুযোগ একবারই পাওয়া যায়, যা করে দেখানোর ওই প্রথম সুযোগেই করে দেখাতে হবে। যদি আপনার সেই খুব জনপ্রিয় ইংরেজি শব্দগুচ্ছ ‘ওয়ান ব্যাড ডে ইন অফিস’ নিয়ে আবেগপ্রিয়তা থাকে, আপনি তা নিয়ে আনন্দে ঘুমোন সান্ত্বনার চাদর জড়িয়ে। আপনাকে কেউ ‘ডিস্টার্ব’ করবে না। কিন্তু, আপনাকে যে দিনটা দেওয়া হয়েছিল পারফর্ম করার জন্য সেটা সেই দিনে যখন পারেননি, আদিখ্যেতা করবেন না, প্লিজ!
ক্রিকেটই বোধহয় একমাত্র যেখানে তিনটি ‘ফাইনাল’-ও হয়। ফাইনাল-ফাইনালার-ফাইনালেস্ট ভাবনা থেকেই বোধহয়! কোহলি-শাস্ত্রীরা পারলে তিনটি করে সেমিফাইনালেরও দাবি তুলতেন, কারণ, তাঁদের আমলে ভারত নকআউটে পৌঁছেই খেই হারিয়ে অফিসে একটা মাত্র খারাপ দিনের অজুহাত দেখিয়ে বাড়ি ফিরত। সের্গেই বুবকার নাম খেলার পাঠকের শোনা, ধরে নেওয়া যায়। পোল ভল্টকে একা বদলে দিয়েছিলেন তাঁর প্রায় সতের বছরের জীবনে। কিন্তু অলিম্পিকে সোনা মাত্র একটিই, ১৯৮৮ সালে সোল-এ। একটি অলিম্পিক (১৯৮৪) তাঁর দেশ বয়কট করেছিল। দুটি অলিম্পিকে তিনি প্রথম রাউন্ড পেরতে পারেননি, মাত্র (তাঁর হিসাবের সাপেক্ষে, অবশ্যই) ৫.৭০ মিটার পেরতে পারেননি বলে। কখনও শোনা যায়নি বুবকাকে বলতে, ‘অফিসে একটা খারাপ দিন’!
ললিত মোদির হিসাবে তাই আইপিএল-এর প্লে অফে প্রথম ম্যাচে হারলেও আর একটা সুযোগ পাওয়া যায় ফাইনালে পৌঁছনোর। রাজস্থান রয়্যালস-এর সামনে তাই সেই সুযোগ এখন। আর, যা ক্রিকেটপ্রিয় ভারতের পক্ষে খুব ভাল খবর, বাটলারের ব্যক্তিগত রেকর্ডের হাতছানি।
এক আইপিএল-এ সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখনও কোহলির। ২০১৬ সালে ১৬ ম্যাচে ৯৭৩ রান করেছিলেন আরসিবি অধিনায়ক। তাঁর দল তবুও জেতেনি। আর কোনও আইপিএল-এ আর কোনও ব্যাটার ৯০০ রানে গণ্ডি পেরতে পারেননি। ৮০০ পেরিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার, ওই একই মরসুমে, ১৭ ম্যাচে ৮৪৮। সাতশো পেরিয়েছিলেন তিনজন, চারবার। কেন উইলিয়ামসন (৭৩৫), ক্রিস গেইল (৭৩৩) ও মাইকেল হাসি (৭৩৩) এবং গেইল আরও একবার ২০১৩ সালে ৭০৮।
মঙ্গলবারের পর বাটলারের সংগ্রহে ৭১৮ এখন। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ষষ্ঠ স্থানে। আর মাত্র ১৬ রান করলেই চতুর্থ, ১৮ রান করলে তৃতীয়। ৮০০-ক্লাবে যেতে চাই আরও ৮২। মরসুমে তিন শতরান ও চার অর্ধশতরান এবং অফিসে খারাপ দিনের অজুহাতও নেই।
কোয়ালিফায়ার জিতলে বাটলার ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেতেন, ফাইনালে আরও একটা ইনিংসও নিশ্চিত। এখন কিন্তু একটি ইনিংস তো পাচ্ছেনই, আরও একটি পাওয়ারও সম্ভাবনা। অর্থাৎ, দুটি ইনিংসের সম্ভাবনা। ৯৭৩-এর কাছাকাছি যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ল।
তা হলে, কোয়ালিফায়ার হেরে, শাপে কি বর হল না বাটলারের?