“যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে”
কবিগুরুর থেকে ধার করেই শুরু করলাম। হাজার হোক বাঙালি তো, তাই সদ্য পেরোনো পঁচিশে বৈশাখের জ্বর এখনো কাটেনি বইকি!
ওপরের দুটি লাইনের সাথে টাটা আইপিএল ২০২২-এর একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে।
১০ই মে। ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে এগারোটা। আমি-আপনি তখন সবে খেলা দেখা শেষ করে উঠছি, এমন সময় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়ে গেল এবারের আইপিএলের প্রথম প্লে-অফ নিশ্চিতকারী দল – গুজরাট টাইটানস্।
চলুন ফিরে যাওয়া যাক মাস তিন-চারেক আগের সময়রেখায়। পাঁচবারের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ানস্ ঘোষণা করে ফেলেছে তাদের রিটেনড প্লেয়ার লিস্ট। সেই লিস্টে রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, জসপ্রীত বুমরা এবং কায়রন পোলার্ডের নাম জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠলেও স্থান হয়নি হার্দিক পান্ডিয়ার। মেগা অকশানে এই সুযোগ লুফে নেয় এই আইপিএলের অন্যতম এক নব-সংযোজন গুজরাট টাইটানস্ এবং পরবর্তীকালে তাদের অধিনায়কের স্থানে জায়গা দেয়। অধিনায়ক হার্দিককে নিয়ে তখনো আমাদের তেমন কোনো প্রত্যাশা নেই। গুজরাটকে নিয়ে হয়তো কিছুটা ছিল। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে।
চলতি আইপিএলে হার্দিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে বললে অনেক কথাই বলতে হয় এবং সেগুলো যে সন্দেহাতীতভাবে সুনামই হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। মুম্বাই থেকে বেরিয়ে একজন অল-রাউন্ডারের পাশাপাশি প্লে-অফে ওঠা একদম নতুন, এক আনকোরা দলের অধিনায়ক হিসেবে হার্দিককে পাওয়া আমাদের উপরিপাওনাই বটে! অন্যদিকে পয়েন্টস টেবিলের তলানিতে থাকা হার্দিকের প্রাক্তন দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কাছে এই ঘটনার তাৎপর্য ঠিক ওপরে রবীন্দ্রনাথের ওই দুটো লাইনের মতোই।
এই ব্যাপারে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস্-কে পুরোপুরি দোষারোপ করা যায় না ঠিকই, কারণ ব্যাটে-বলে অফ-ফর্ম এবং ক্রমাগত চোট হার্দিককে ক্রিকেটীয় গতিবিধি থেকে অনেকটাই ছিটকে দিয়েছিল। তবে কায়রন পোলার্ডের জায়গায় হার্দিকের নামটা রাখা যেত না কিনা তা নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়।
প্রথম থেকেই হার্দিকের দল একধাপ এগিয়ে শুরু করেছে। সিএসকে, এমআই এদের মতো মার্কামারা দল যেখানে তাদের প্রথম জয়ের স্বাদ খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল সেখানে গুজরাট টাইটানস্ জয়ের হ্যাটট্রিক করে ধারে-ভারে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়েছিল। শুভমান গিল ধারাবাহিকভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। অরেঞ্জ ক্যাপের তালিকায় তিনি রয়েছেন চার নম্বরে। পরিসংখ্যান বলছে এই আইপিএলের সর্বাধিক অর্ধশতকের তালিকায় তিনি রয়েছেন দুই নম্বরে। এছাড়া মহম্মদ শামি এবং রশিদ খান বল হাতে দুর্দান্ত খেলেছেন। যাঁর কথা উল্লেখ না করলে প্লে-অফে ওঠার কৃতিত্বের অবদান সম্পর্কিত আলোচনা অসম্পূর্ণ রয়ে যায় তিনি হলেন ঋদ্ধিমান সাহা। এখনও অবধি তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দুখানা হাফ-সেঞ্চুরি এবং ওপেনার হিসেবে তিনি যথেষ্ট সফল। এমনকি নিজেকে আবার প্রমাণ করেছেন একজন দুরন্ত উইকেটকিপার হিসেবেও। আজ হার্দিকের এই সফল ১৪৫ রান ডিফেন্ডের নেপথ্যে ছিলেন ঋদ্ধিমানও। দুটি ক্যাচ, দুটি স্টাম্পিং এবং একটি রান আউট। ক্রুনাল পান্ডিয়াকে ঝড়ের গতিতে স্টাম্পিং, লোকেশ রাহুলের নেওয়া অনবদ্য হাই ক্যাচ, এছাড়া আয়ুশ বাদোনিকে করা স্টাম্পিং, স্টোইনিসের রান-আউট এবং শেষে আবেশ খানের ক্যাচ দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে ধরার মাধ্যমে নিজেকে যেন উজাড় করে দিয়েছেন সাহা। সবমিলিয়ে গুজরাটের এই টিম-গেম তাদেরকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। গুজরাটের পরবর্তী যাত্রাপথের ভবিষ্যৎবাণী করার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই, তবে এটুকু বলাই যায় বহু নামকরা টিম-ম্যানেজমেন্টের কাছে গুজরাট টাইটানস্ আজ এক অপরূপ দৃষ্টান্ত।